Advertisement
১৪ জানুয়ারি ২০২৫
Unique funeral

শতায়ু ‘সমাজসেবী দাদু’র শেষযাত্রায় নাচ-গান

দেবেন্দ্রনাথের ন’জন সন্তান। এর মধ্যে ছেলে ছ’জন। মেয়ে তিন জন। আর নাতি নাতনির সংখ্যা ১৯। দাদুর মৃত্যুর খবর তাঁদের পাশাপাশি, গ্রামবাসীও শোকাহত হন।

দেবেন্দ্রনাথের শেষযাত্রা।

দেবেন্দ্রনাথের শেষযাত্রা। নিজস্ব চিত্র।

দিগন্ত মান্না
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৮
Share: Save:

বিদায় নয় চোখের জলে। ‘সমাজসেবী দাদু’র স্মরণে তাঁর শেষযাত্রা হল বাদ্যি বাজিয়ে!

ভিন্‌ দেশ ঘানায় মৃত্যুর পরে রীতিমতো সাজগোজ করে কফিন বন্দি দেহ নিয়ে নাচের ঘটনা কয়েক বছর আগে ভাইরাল হয়েছিল সমাজ মাধ্যমে। খানিকটা সেই রকম ভাবেই পাঁশকুড়ার মাইশোরা শতায়ু বাসিন্দা দেবেন্দ্রনাথ আদকের অন্তুিম সৎকারের আগে গ্রামবাসী বাজালেন খোল, করতাল। তাঁর পরিবারের সম্মতিতেই হাসি মজায়, নাচ গানের মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল শ্মশানে।

মাইশোরার শ্যামসুন্দরপুর পাটনা গ্রামের বাসিন্দা দেবেন্দ্রনাথ পেশায় ছিলেন কৃষিজীবী। কৃষিকাজের পাশাপাশি, সমাজসেবাও করতেন। গ্রামের কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে তিনি পাশে দাঁড়াতেন। গ্রামের কালী মন্দিরের আমৃত্যু সেবাইত ছিলেন তিনি। চার বছর আগেই দেবেন্দ্রনাথের বয়স ১০০ পার হয়। তার পরেও নিজের কাজ নিজেই করতেন। প্রতি সপ্তাহে ট্রেকারে চেপে ২৫ কিলোমিটার দূরে চিকিৎসকের কাছে যেতেন।

এলাকায় দেবেন্দ্রনাথ পরিচিত ছিলেন ‘সমাজসেবী দাদু’ নামে। সেই ‘দাদু’ গত শনিবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। উঁচু জায়গায় রাখা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নামাতে গিয়ে পড়ে পা ভেঙে ফেলেন তিনি। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে রবিবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় দেবেন্দ্রনাথের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর।

দেবেন্দ্রনাথের ন’জন সন্তান। এর মধ্যে ছেলে ছ’জন। মেয়ে তিন জন। আর নাতি নাতনির সংখ্যা ১৯। দাদুর মৃত্যুর খবর তাঁদের পাশাপাশি, গ্রামবাসীও শোকাহত হন। ‘সমাজসেবী দাদু’কে তাঁরা কেউই চোখের জলে বিদায় জানাতে রাজি হননি। দেবেন্দ্রনাথের পরিজনের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নেন যে, দেবেন্দ্রনাথের শেষযাত্রায় সকলে আনন্দ করবেন।

পরিকল্পনা মতো সোমবার একটি সুসজ্জিত টোটোয় করে দেবেন্দ্রনাথের দেহ প্রথমে গ্রামের কালী মন্দিরের সামনে রাখা হয়। নাগরিক সংবর্ধনা দিয়ে সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান গ্রামবাসী। এরপর কীর্তন দল এবং ব্যান্ড পার্টি সহযোগে দেবেন্দ্রনাথের দেহ নিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা। নাচতে নাচতে গ্রামবাসী দেহ নিয়ে পৌঁছে যান গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে। গোটা গ্রাম পরিক্রমা করার পর হয় অন্ত্যেষ্টি। দীপনারায়ণ বেরা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে এর আগে কেউ শতায়ু হয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। দাদু আমাদের গ্রামের গর্ব ছিলেন। সবার আপদে বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ওঁর স্বর্গ যাত্রা যাতে সুখের হয়, সে জন্য আমরা হাসতে হাসতে ওঁকে বিদায় জানালাম।’’

গ্রামের বহু মানুষ এই আনন্দময় শোভাযাত্রায় পা মিলিয়েছেন এ দিন। আর মৃতের বড় ছেলে সুনীল কুমার আদক বলছেন, ‘‘কোনও মানুষের চলে যাওয়া দুঃখের। তবে আমার বাবা যে বয়সে চলে গেলেন তা বিরল। উনি সারা জীবন ধরে মানুষের উপকার করে গিয়েছেন। তাই গ্রামের সবার সাথে আমরাও শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে আনন্দের সঙ্গে বাবাকে শেষ বিদায় জানালাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Panskura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy