উৎকন্ঠায় দোষীদের পরিবার। ছবি: কিংশুক আইচ।
মোরাম রাস্তা পিচের হয়েছে। তবে আঁধার ঘোচেনি। বসেনি পথবাতি। পানীয় জলের পাইপলাইন বসানোর কাজ সবে শুরু হয়েছে।
রঞ্জন মাইতিদের বাড়ির পিছনের জমি এখন আগাছায় ভরেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই বছর আটেক আগে এই জমিতেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল ৯ জন কিশোর-সহ ১৩টি তরতাজা প্রাণ। আগাছা সরিয়ে জঙ্গলের গভীরে ঢুকতেই দেখা গেল বদলে গিয়েছে মাটির রং। বারুদে পুড়ে দোআঁশ মাটির জমি হয়েছে কালো। বদলেছে এলাকার রাজনীতির পটচিত্রও। তবে বদলায়নি রঞ্জনদের বিরুদ্ধে এককাট্টা গ্রামবাসীদের সুর।
পিংলা ব্লকের জামনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণবাড় গ্রাম এখন বিচারের বাণী শোনার অপেক্ষায়। ২০১৫ সালের ৬ মে রাতে গ্রামের প্রভাবশালী তৃণমূল কর্মী রঞ্জনের বাড়ির ঠিক পিছনে থাকা জমিতে চলা বাজি কারখানায় ঘটেছিল বিস্ফোরণ। গ্রামবাসীদের দাবি ছিল, বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরির কারবার চালাত রঞ্জন ও তাঁর ভাই নিমাই মাইতি। ঘটনার পরেই ধরা পড়েছিল রঞ্জন। বিয়েবাড়ির বাজি তত্ত্বে রাজনীতি উত্তাল হতেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্তে নেমেছিল সিআইডি। রঞ্জন ছাড়াও সিআইডি বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করে তাঁর ভাই নিমাই ও ওই কারখানায় মুর্শিদাবাদের শিশু শ্রমিক সরবরাহকারী শেখ সুরজকে। শনিবার ওই তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মেদিনীপুর জেলা আদালত। আজ, সোমবার হতে পারে সাজা ঘোষণা।
গ্রামের রাস্তা পিচের হলেও রবিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড় গ্রামে গিয়ে দেখা গেল তিনরাস্তার মোড়ে চলছে টিউবওয়েল মেরামতির কাজ। সেখানে গ্রামবাসীদের কয়েকজন জটলা করে ছিলেন। পরিচয় দিতে তাঁরা জানালেন, রঞ্জন জেলবন্দি থাকায় গ্রামে এখন শান্তি রয়েছে। রঞ্জনরা ফিরে আসুক তা গ্রামের লোক চান না। সাজাপ্রাপ্তদের ফাঁসি চাইছেন তাঁরা। গ্রামের ফাগু টুডু, নন্দদুলাল হেমব্রমরা বলছিলেন, “স্রোতে ভেসে আমরাও এখন তৃণমূল। তবে অনেক শান্তিতে আছি। সেই সময় রঞ্জনের দাপট অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। আমরা ওঁর উপযুক্ত শাস্তি চাই ।” রঞ্জনের পাশের বাড়ির শেফালি মাইতি, অদ্বৈত প্রধানরা বলছিলেন, “রাতে গাড়িতে বোমা পাচার হত গাড়িতে। সুদছড়ার রামপদ মাইতিকে এনে বোমা কারবার চালাত রঞ্জন মাইতি। রামপদ ঘটনায় মারা গিয়েছে। রঞ্জন, ওঁর ভাই নিমাই-সহ তিনজনেরই ফাঁসি চাই।” সন্ধ্যা হেমব্রম নামে আরেক গ্রামবাসী আবার বললেন, “গ্রামে বাঙালি ও আদিবাসীদের মধ্যে বিভাজন হয়েছে। কিন্তু রঞ্জনদের শাস্তি নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। আমরা সবাই চাই ওঁদের ফাঁসি হোক।”
আপাত শান্ত এই গ্রামের রাজনীতির অঙ্ক বেশ জটিল। একসময়ে এই গ্রামের অধিকাংশ সিপিএমের সঙ্গে ছিলেন। ময়নার প্রবানন্দপুর থেকে আসা রঞ্জন মাইতি ও তাঁর ভাই নিমাই মাইতির স্ত্রী সুলেখা ছিলেন তৃণমূলে। বিস্ফোরণের সময়ে গ্রামের পঞ্চায়েত আসনটি সিপিএমের থাকলেও রঞ্জনের প্রভাব ছিল যথেষ্ট। পরে রঞ্জন, নিমাইরা গ্রেফতার হলেও তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি আটকায়নি। ২০১৮ সালে ওই গ্রামের পঞ্চায়েত আসনটি পায় তৃণমূল। এবারেও সেটি তাদের দখলেই গিয়েছে।
রঞ্জন, নিমাইয়ের পরিবারের সদস্যরাও তৃণমূলেই আছেন। তবে তাঁদের ক্ষোভও তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। রঞ্জনের স্ত্রী সীতা মাইতি বললেন, “আমার স্বামী নির্দোষ।” নিমাইয়ের স্ত্রী সুলেখা মাইতির দাবি, “আমরা গ্রামের রাজনীতির শিকার। ওই বাজি কারখানা রামপদ মাইতির হওয়া সত্ত্বেও গ্রামবাসীরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছে। আমার স্বামী ও ভাসুরকে ফাঁসানো হয়েছে।” কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন, ‘‘আমরা এখনও তৃণমূল করি। আমাদের ফাঁসাতে গ্রামবাসীও এখন তৃণমূল হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব, মুখ্যমন্ত্রীকে বহুবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে দল এখন আর আমাদের কথা শোনে না।”
(এই সংক্রান্ত আরও খবর: ক ৪ পাতায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy