প্রতীকী ছবি।
গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে এক ভবঘুরের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও মহিলা। ওই ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। কোনও অভিযুক্ত এখনও ধরা পড়েনি। তবে অনুশোচনায় ভুগছেন কাঁথি-১ ব্লকের বিরামপুট গ্রামের বাসিন্দারা। সমুদ্র উপকূলবর্তী ওই গ্রাম শুক্রবার ছিল কার্যত স্তব্ধ।
মৎস্যজীবী অধ্যুষিত গ্রামের অনেকেই সকাল থেকে সমুদ্রে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। ফাঁকে ফাঁকেই জুনপুট উপকূল থানার পুলিশ গাড়ি এলাকায় টহল দিচ্ছে। জুনপুটে মৎস্য খটির পাশে এক দোকানদার বলছেন, ‘‘ওই ভবঘুরেদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বারবার করে বোঝাচ্ছিলাম। কিন্তু কয়েকজন এতটাই উন্মক্ত ছিলেন যে, তাঁরা বুঝতেই চাইছিলেন না।’’ গ্রামের সাবমার্সিবল পাম্প থেকে জল নিয়ে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। গ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে চাওয়ায় তিনি বললেন, ‘‘কী করে কী হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না!’’
বুধবার রাতে বিরামপুট গ্রামের চার শিশু টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল। অভিযোগ, হিন্দিভাষী এক ভবঘুরে মহিলা তাদের অপহরণের চেষ্টা করে। স্থানীয়েরা তাকে ছেলেধরা ভেবে বেধড়ক মারধর করেন। ওই সময় এলাকার আরও এক ভবঘুরেকেও সন্দেহবশত মারধর করা হয়। ওই ভবঘুরে যুবক মারা গিয়েছে। ঘটনার পর থেকেই গ্রামের অধিকাংশ বাড়িই পুরুষ শূন্য। আর যাঁরা বাড়িতে রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ সেদিনকার ঘটনা সম্পর্কে টু শব্দ করছেন না। শুক্রবার ওই গ্রামে গিয়েছিলেন স্থানীয় মাজিলাপুট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অপর্না দাস। তিনিও বলছেন, ‘‘গ্রামবাসীদেরসঙ্গে কথাবার্তা বলেছি। ছেলেধরা বা কোনও অন্যায় কিছু দেখলে পঞ্চায়েত সদস্যকে জানানো, থানায় খবর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কোনও ভাবেই আইন না ভাঙার জন্য সকলকে সচেতন করা হয়েছে।’’
এ দিন বিকাল পর্যন্ত অবশ্য পুলিশ গণপিটুনিতে যুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের ধরপাকড়ের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পুলিশ জনসাধারণকে নিয়ে শিবির করবে বলে ঠিক করেছে।’’ কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় কটাক্ষ করেছেন বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘এত বড় ঘটনা ঘটল। অথচ কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। আসলে পুলিশ এখন তৃণমূলের নেতাদের কথাতেই পরিচালিত হন। তৃণমূলের নেতারা বললে ধরপাকড় করবে।’’ এমন ঘটনা নিয়ে অবশ্য রাজনীতি না করার জন্য বিরোধীদের বার্তা দিয়েছে তৃণমূল।
বিরামপুটের ওই গণপিটুনির ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই ভূপতিনগর থানা এলাকার এক শিশুর সাময়িক নিখোঁজ হওয়া ঘিরে শোরগোল পড়েছে। ওই শিশুকে পুলিশ পরে উদ্ধার করেছে। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে শিশুর কথোপকথনের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় তা নিয়ে জোর চর্চ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবারই ভূপতিনগরে মাধাখালি এলাকার বাসিন্দা সৃষ্টিধর করণের বছর দশেকের ছেলে সুমন করণ বিকাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। সে সাইকেল সারাতে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে হেঁড়িয়া বাজার থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের সঙ্গে শিশুর কথোপকথনের যে ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা) ছড়িয়েছে, তাতে শিশুর দাবি, একটি গাড়ি তার কাছে এসে দাঁড়ায়। গাড়িতে থাকা তিনজন জোর করে তাকে তুলে নেয়। আরোহীদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। শিশুরও চোক-মুখে কাপড় বেঁধে দেওয়া হয় বলে ভিডিয়োয় শোনা গিয়েছে। শিশুর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, “হেঁড়িয়া বাজার থেকে একটি শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ ওই শিশুকে অপহরণ করার কারণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে এসেছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, সম্ভাব্য সবদিকই খতিয়ে দেখছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy