বিক্রম প্রধান। —নিজস্ব চিত্র।
দলে কিছু ধান্দাবাজ, মদ্যপ, বিশ্বাসঘাতক রয়েছে— এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক বিক্রম প্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘এরা মানুষের সেবা করবে? প্রধান (পঞ্চায়েতের) হয়ে যাওয়ার পরেই সূচনা (দুর্নীতির) হয়ে গিয়েছে। দুর্নীতি কোথায় নিয়ে যায়, দেখব।’’ সঙ্গে হুঁশিয়ারি, ‘‘আমি চুপচাপ হয়ে বসে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যে অসভ্যতামি আরম্ভ করেছে, আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’
ক’দিন আগে দাঁতনের চকইসমাইলপুরে তৃণমূলের এক সামাজিক কর্মসূচিতে ওই বক্তব্য রেখেছেন বিক্রম। তার একটি অংশের ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করছেন না বিধায়কও। বৃহস্পতিবার বিক্রম বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলব না। কয়েক দিন দেখি! তারপরে যা বলার বলব।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে না কি বিধায়ক বলেছেন, ‘‘দলের কাছে সুবিচার না পেলে রাজনীতি থেকে অবসর নেব!’’
বিক্রম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন। তাঁর ক্ষোভ কানে উঠেছে জেলা নেতৃত্বের। তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে, খোঁজখবর নিচ্ছি। বিক্রমদা সিনিয়র লিডার। কোথাও সমস্যা থেকে থাকলে, ওঁর সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব।’’
এর আগে জেলার শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহতোর বেফাঁস মন্তব্য নিয়েও তোলপাড় হয়েছিল। সেখানে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, দাঁতন-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রতুল দাসের সঙ্গে ‘বিরোধ’ রয়েছে বিধায়ক বিক্রমের। প্রতুল এ বার জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ হয়েছেন। দলের জেলা সভাপতি সুজয়ের সঙ্গেও ‘বনিবনা’ নেই বিক্রমের। প্রতুল সুজয়ের ঘনিষ্ঠ। বিক্রমের অনুযোগ, পুরনো কর্মীদের কোণঠাসা করা হচ্ছে। এতে দলীয় সংগঠন দুর্বল হচ্ছে। ওই কর্মসূচিতে তৃণমূল বিধায়ককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আপনাদের (উপস্থিত নেতা-কর্মীদের) কাছে অনেক কিছু বলতে পারতাম। কিন্তু বলতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে। কিছু দিন বাদে আপনারা বুঝতে পারবেন, সঠিক কোনটা।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার এলাকার একটা অঞ্চলের সভাপতি পরিবর্তন করা হবে, আমি এলাকার বিধায়ক, আর আমি জানব না? যে কথা শুনবে না (ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর), তাকে পরিবর্তন করে দেব। এ কি মামাবাড়ির আবদার না কি?’’ এরপরই তিনি বলেন, ‘‘কত বড় নেতা আছে, দেখে নেব! বিশ্বাসঘাতক, ধান্দাবাজ সব।’’
সম্প্রতি পুরনো একটি মামলায় কেশিয়াড়ির তৃণমূল নেতা ফটিক পাহাড়িকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। সেই উদাহরণ টেনে বিক্রম বলেছেন, ‘‘বলা হচ্ছে, কেশিয়াড়িতে পুলিশ ফটিককে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তোমাকে ঢুকিয়ে দেবে। তোর বাপ পারবে ঢোকাতে? যে বলছে, তাকে বলো, তুমি বাপের বেটা যদি হবে, তাহলে গণেশ করকে (স্থানীয় তৃণমূল নেতা, বিধায়ক ঘনিষ্ঠ) থানায় ঢোকাবে, জেলখানায় ঢোকাবে। আমি এখনও বেঁচে আছি। দাঁতনের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিনিয়ত আমার কাছে পীড়াপিড়ি করছে।’’
বিক্রম আরও বলেছেন, ‘‘আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি। আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দলটা করেছি। সাদা জামায় কালি লাগাতে দিইনি। এখনও আমি নিষ্ঠার সঙ্গে চলি। যাঁকে তুলে নিয়ে এসে দায়িত্ব দিয়েছি, আজকে সেই বিশ্বাসঘাতক, বেইমান নিজের লোভের বশবর্তী হয়ে দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মানুষ কি বোকা হয়ে গিয়েছে?’’ প্রবীণ এই নেতার আহ্বান, ‘‘মানুষকে জাগিয়ে তুলুন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নামতে হবে।’’
কয়েক মাস আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে দলের গোষ্ঠী কোন্দলে রাশ টানার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে এ দিন কালীঘাটে যান জেলা সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি, জেলা কর্মাধ্যক্ষ আশিস হুতাইত, জেলা পরিষদের সদস্য মহম্মদ রফিক, চন্দন সাহারা। দলীয় সূত্রে খবর, সেখানেও দলের সবাইকে একসঙ্গে থেকে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে দাঁতনের এই ঘটনায় স্পষ্ট, তৃণমূল এখনও কোন্দলে জর্জরিত। বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি শমিত দাশের খোঁচা, ‘‘তৃণমূলের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy