গোলাপের চাহিদা তুঙ্গে। —ফাইল চিত্র।
একে বাজারে মেঙ্গালুরুর গোলাপের ছড়াছড়ি, তার উপর গোলাপ গাছে রোগ সংক্রমণ। সাঁড়াশি আক্রমণে মরসুম তো বটেই, ভ্যালেন্টাইনস’ডে-র বাজারও মার খাওয়ার জেরে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় ছিলেন গোলাপচাষিরা। তবে শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কা অনেকটাই কাটিয়ে চাষিদের স্বস্তি দিল সরকারি হিমঘর। দামের খরা কাটিয়ে ভ্যালেন্টাইনস’ডে-র ঠিক আগের দিন বাড়ল গোলাপের দাম। হিমঘরে রাখা গোলাপ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখলেন চাষিরা।
বৃহস্পতিবার সকালে কোলাঘাট ফুলবাজারে গোলাপ বিক্রি হল ৭০০ টাকা প্রতি একশো পিস দরে। পাঁশকুড়া ফুলবাজারের সরকারি হিমঘরে এবার মজুত রাখা ছিল প্রায় ২ লক্ষ গোলাপ। বুধবার হিমঘর খালি করে সমস্ত গোলাপ বের করে নেন চাষিরা। ভাল দাম পেয়ে খুশি তাঁরা। হিমঘরের পরিষেবা নিয়ে সন্তোষও প্রকাশ করেছেন ফুল চাষিরা।
সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম থেকেই ফুল বাজারগুলিতে গোলাপের দাম ঊর্ধমুখী থাকে। কিন্তু এ বার গোলাপ বাগানে সংক্রমণের জেরে নষ্ট হয়ে যায় গোলাপের গুনগত মান। কমে যায় উৎপাদন। তার ওপর কোলাঘাট ফুলবাজারে ম্যাঙ্গালোর থেকে সস্তার গোলাপ আমদানির ফলে দাম পড়ে যায় জেলার গোলাপের। তবে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ঠিক আগের দিন গোলাপেরহ বর্ধিত দাম স্বস্তি দিয়েছে চাষিকে। চলতি মরসুমে পাঁশকুড়া ফুলবাজারের হিমঘরে কুড়িদিন আগে থেকে গোলাপ মজুত করতে শুরু করেছিলেন চাষিরা। সেই সময় গোলাপের দাম ছিল খুবই কম। কিন্তু সরকারি হিমঘরে ফুল সংরক্ষণের সুবিধা মেলায় অনেক ফুলচাষিই এ বার ভ্যালেন্টাইনস ডে’-র আগে বাড়তি লাভের মুখ দেখেছেন।
ফুল কথা
মরসুমে হিমঘর ভাড়া
১৫০ টাকা (২০০০ পিস)
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ
বাজারে দাম: ২৫০ টাকা (প্রতি ১০০ পিস)
প্রতি ২ হাজার পিস গোলাপে বিক্রিতে চাষির আয়: ৫০০০-১৫০=৪, ৮৫০ টাকা।
ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সপ্তাহ
বাজারে দাম: ৭০০ টাকা (প্রতি ১০০ পিস)
প্রতি ২ হাজার পিস গোলাপ বিক্রি করে চাষির আয় ১৪০০০-১৫০=প্রায় ১৩, ৮৫০ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি হিমঘরে এক প্যাকেট গোলাপ রাখার মরসুমে ভাড়া দিতে হয় ১৫০ টাকা। একটি প্যাকেটে ২০০০ পিস গোলাপ থাকে। সাধারণত একজন চাষি কমপক্ষে ২ প্যাকেট গোলাপ রাখেন হিমঘরে। সেই হিসাবে তাঁকে মরসুমে ভাড়া গুনতে হয় (১৫০x ২) তিনশো টাকা। বাজারে এদিন গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা প্রতি একশো পিস দরে। সেই হিসাবে ৪ হাজার পিস গোলাপের ক্ষেত্রে বাজারে দাম মিলছে প্রায় ২৮০০০ টাকা। সেখান থেকে হিমধরের ভাড়া বাদ দিয়ে চাষির হাতে থাকছে ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহেও গোলাপের দাম ছিল আড়াইশো টাকা প্রতি ১০০ পিস। সেই হিসাবে সেই সময় গোলাপ বিক্রি করলে চাষি পেতেন প্রায় ১০ হাজার টাকা। হিমঘরে রাখার সুবিধার কারণে চাষির বাড়তি লাভ হল প্রায় ১৮ হাজার টাকা। পাঁশকুড়ার পূর্ব বাকুলদা গ্রামের ফুলচাষি মধুসূদন বেরা বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে পাঁশকুড়া ফুলবাজারের হিমঘরে দু’হাজার পিস গোলাপ মজুত করেছিলাম। তখন গোলাপের দাম ছিল আড়াইশো টাকা প্রতি একশো পিস। বুধবার হিমঘর থেকে গোলাপ বের করে বৃহস্পতিবার ৭০০ টাকা প্রতি একশো পিস দরে বিক্রি করেছি।’’
২০০৬ সালে পাঁশকুড়ায় ফুলবাজার ও হিমঘর চালু হলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হিমঘরটি দফায় দফায় বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে সরকারি উদ্যোগে পাঁশকুড়া হিমঘরে লাগানো হয় অত্যাধুনিক শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। ফলে হিমঘরে ফুল সংরক্ষণের সমস্যা দূর হয়।
সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘বর্তমানে পাঁশকুড়া ফুলবাজারের হিমঘরটি যথাযথ ভাবে কাজ করায়, ফুলচাষিরা বিশেষ ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। তবে হিমঘরটি খুব বড় না হওয়ায় সমস্ত ফুলচাষি এর সুফল পাচ্ছেন না। সরকারি উদ্যোগে হিমঘরটি সম্প্রসারণের দাবি জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy