Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
আদিবাসী উন্নয়নে নজর, রেলে আশাহত জঙ্গলমহল
Jhargram

বাজেট বরাদ্দ, কাজ হবে তো!

গত লোকসভায় ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে জিতে বিজেপি সাংসদ হয়েছেন কুনার হেমব্রম।

গত বছর ২৪ এপ্রিল ভোটের প্রচারে গোপীবল্লভপুরে  নির্মলা সীতারামন। সেদিনই জঙ্গলমহলে রেলের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। ফাইল চিত্র

গত বছর ২৪ এপ্রিল ভোটের প্রচারে গোপীবল্লভপুরে নির্মলা সীতারামন। সেদিনই জঙ্গলমহলে রেলের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

কেন্দ্রীয় বাজেটে আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বিপুল বরাদ্দের ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তবে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের টানাপড়েনে সেই বরাদ্দের সুবিধা আদৌ এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন এখানকার আদিবাসী-মূলবাসীদের একাংশ। তা ছাড়া, রেল বাজেটে জঙ্গলমহলের ভাগ্যে সে ভাবে শিকে না ছেঁড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আরও হতাশ।

গত লোকসভায় ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে জিতে বিজেপি সাংসদ হয়েছেন কুনার হেমব্রম। ঝাড়গ্রামের রেল সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের কাছে দাবিসনদও দিয়েছেন কুনার। কুনারের ভোটপ্রচারে এসে খোদ নির্মলা সীতারামনই ঝাড়গ্রাম থেকে গোপীবল্লভপুর হয়ে ওড়িশা পর্যন্ত রেলপথের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপরেও বাজেটে সে সবের উল্লেখ না থাকায় হতাশ জঙ্গলমহল। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘কেন্দ্র সব ক্ষেত্রেই রাজ্যের সঙ্গে বঞ্চনা করছে। রাজ্যের উদ্যোগেই জঙ্গলমহলে আদিবাসী উন্নয়নের কাজ হচ্ছে।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন কখনও জঙ্গলমহলের উন্নয়নে বাধা হবে না।’’

বস্তুত, রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে আদিবাসী উন্নয়নে নানা প্রকল্প তৈরি করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ঝাড়গ্রামের আদিবাসী পড়ুয়াদের একলব্য আবাসিক স্কুলের দায়িত্ব রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে দেওয়া হয়েছে। জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে লোধাশবর জনজাতি-সহ আদিবাসী স্বসহায়ক দলগুলিকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমলাশোল সহ ২০টি আদিবাসী গ্রামকে মডেল গ্রাম করা হচ্ছে।

ফাঁকা বুলি, ঝুলিও

লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে বিজেপি-র জয় আশা জাগিয়েছিল। রেলশহর খড়্গপুর হোক বা রেলহীন ঘাটাল কিংবা জঙ্গলমহল, রেলপথে প্রাপ্তির আশা ছিল বাজেটের আগে। বাজেট শেষে শুধুই হতাশা।

জয় দত্ত (খড়্গপুর-মেদিনীপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক)
• কেন্দ্রীয় সরকার তো রেল বাজেট তুলেই দিয়েছে। তবে আমরা আশা করেছিলাম এই বাজেটে খড়্গপুর থেকে হাওড়া অন্তত একটি ননস্টপ ট্রেন হবে। সেটুকুও পাওয়া গেল না। এমন বঞ্চনা নিয়ে এবার জোরাল আন্দোলনে নামব।

তপন চক্রবর্তী (যুগ্ম সম্পাদক, ঝাড়গ্রাম রেল পরিষেবা সংগ্রাম কমিটি)
• জঙ্গলমহলের জন্য রেলের কোনও ঘোষণাই পেলাম না। এলাকার বিজেপি সাংসদ অনেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিছুই তো হল না। আমরা চূড়ান্ত হতাশ। ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম-গোপীবল্লভপুর রেলপথের কী হল?

দিলীপ ঘোষ (সাংসদ, মেদিনীপুর)
• আমরা দাবিদাওয়া লিখিত ভাবে দিয়েছি। রেল বাজেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হোক। দেখা যাক কী পাওয়া যায়।

কুনার হেমব্রম (বিজেপি সাংসদ, ঝাড়গ্রাম)
• বাজেটে রেল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও হাতে পাইনি। তবে আমি এখনও আশাবাদী যে কেন্দ্র সরকার জঙ্গলমহলের রেলের উন্নয়নের দিকে বিশেষ জোর দেবে।

বিরবাহা সরেন, (ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী)
• লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি রেলের প্রতিশ্রুতির ঢাক পিটিয়েছিল। সবই ভাঁওতা। জঙ্গলমহলে রেলের কোনও ঘোষণাই নেই বাজেটে। জঙ্গলমহলবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

প্রশান্ত সামন্ত (শিক্ষাবিদ, ঘাটাল)
• মাঝে মধ্যেই রেললাইন হবে বলে ঘাটালবাসীকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে হয় না। এটা খুবই হতাশাজনক।

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাজেটে তফসিলি জাতি-উপজাতির উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দের সুফল পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত জঙ্গমহলের আদিবাসী সমাজ। ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের ঝাড়গ্রাম জেলার নেতা শিবশঙ্কর সরেন বলেন, ‘‘আদিবাসী উন্নয়নে কেন্দ্রের এই বিপুল বরাদ্দের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করছি, আদিবাসী উন্নয়নের কাজে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত কোনও প্রভাব ফেলবে না।’ পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ ও শিক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান রবিন টুডু পাল্টা বলছেন, ‘‘ইতিপূর্বে আদিবাসী উন্নয়নে কেন্দ্র যে সব ঘোষণা করেছে, তার কিছুই হয়নি। ফলে, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ রাজ্যে মিলবে এমন আশা দেখছি না।’’

লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলাই নায়েক আবার বলেন, ‘‘বাম আমলে আদিম উপজাতিভুক্ত লোধা-শবরদের উন্নয়নের জন্য জেলাস্তরে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেওয়া হত। সেটা তৃণমূল সরকারের আমলে হয় না। দুই জেলায় সদ্য লোধা সেল চালু হয়েছে। আমরা চাইব কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা রাজ্যের মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলার লোধা-শবর সহ পিছিয়ে থাকা জনজাতির উন্নয়নে খরচ করা হোক।’’

পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘কেন্দ্র আগে রাজ্যকে কতটা বরাদ্দ দেয় দেখি, তারপরে বলা যাবে কার কতটা উন্নয়ন হবে।’’ আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতোর গলায় অবশ্য হতাশা। বলছেন, ‘‘আমাদের সরকারি ভাবে আদিবাসী স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। লড়াই চলছে। ফলে, কেন্দ্রের বরাদ্দ রাজ্যে এলেও কুড়মিদের লাভের কোনও আশা দেখছি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Budget 2020 Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy