শিশির অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
পুজোতেও রাজনীতির গন্ধ! সাংসদ শিশির অধিকারীর হাতে উদ্বোধন হওয়া পুজোর অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন না জানিয়ে সংবাদপত্রেই বিজ্ঞাপন দিলেন খেজুরির দুই তৃণমূল নেতা। তাঁর অনুমতি ছাড়াই ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে নাম ছাপানো হয়েছে বলে সেখানে যাবেন না বলে জানাচ্ছেন এক নেতা। আরেক নেতার স্পষ্ট বক্তব্য, শিশিরবাবুকে একাধিক ‘দলবিরোধী’ কাজে দেখা গিয়েছে। তাই ওই প্রবীণ সাংসদের উপস্থিতিতে তিনি অনুষ্ঠানে হাজির হবেন না।
খেজুরির তেঁতুলতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি এবার পুজোর উদ্বোধক করেছে কাঁথির সাংসদ শিশিরবাবুকে। আগামী ১ অক্টোবর ষষ্ঠীর বোধনে তিনি হাজির থেকে ফিতে কাটার আশ্বাস দিয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে থাকার কথা খেজুরির দু’টি ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বিমান নায়ক, শ্যামল মিশ্র, খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম মণ্ডল-সহ বেশ কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষর। আমন্ত্রণপত্রে তাঁদের নাম রয়েছে। রাস্তাতেও বসানো হয়েছে তোরণ। তবে তৃণমূলের খেজুরি-১ ব্লকের সভাপতি বিমান এবং খেজুরি-২ ব্লকের সভাপতি শ্যামল সোমবার স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। সেখানে ওই দু’জনের দাবি, তেঁতুলতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁদের নাম অনুমতি না নিয়েই রাখা হয়েছে। এতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ওই অনুষ্ঠানে তাঁরা উপস্থিত থাকবেন না বলেও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
মঙ্গলবার বিমান বলেন, ‘‘উদ্যোক্তারা অনুমতি ছাড়াই দুজন ব্লক সভাপতির নাম আমন্ত্রণ পত্রে ছেপেছেন। তাই আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাব না বলে জানিয়ে দিয়েছি।’’ শ্যামলের কথায়, ‘‘শিশিরবাবু প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি দলের নির্দেশ অমান্য করে দিল্লিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। দলের বিরুদ্ধে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সঙ্গে পুজোর উদ্বোধনী মঞ্চে থাকা অসম্ভব। বিতর্ক আর বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য আমরা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছি।’’
উল্লেখ্য, শিশির অধিকারী খাতায়-কলমে তৃণমূলের সাংসদ। তবে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি এগরায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং কাঁথিতে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় উপস্থিত থেকেছেন। তাঁর সংসদ পদ খারিজের আবেদন করেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার লোকসভার প্রিভিলেজ কমিটির পক্ষ থেকে সাংসদ পদ খারিজ সংক্রান্ত শুনানির জন্য দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে শিশিরবাবুকে। তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বিজেপি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এনে বারে বারে সরব হয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষস্তরের নেতারাও। এহেন পরিস্থিতিতে শিশিরবাবুর সঙ্গে ব্লক স্তরে তৃণমূল নেতারা এক ফ্রেমে আসতে চান না বলেই দলীয় সূত্রের খবর। পুজোর উদ্বোধন প্রসঙ্গে সাংসদ শিশিরবাবু বলছেন, ‘‘উদ্বোধক হিসেবে হাজির থাকার জন্য আমাকে বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে কে থাকবেন আর কে থাকবেন না, সেটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’’
তৃণমূলের ‘প্রতিবাদী’ দুই ব্লক সভাপতি সমাজমাধ্যমেও এ নিয়ে সরব হয়েছেন। যে দুর্গাপুজো ঘিরে এই বিতর্ক, সেই পুজোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের উপরে। পুজো কমিটির সম্পাদক তথা স্থানীয় বারাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পার্থসারথি দাস বলছেন, ‘‘শিশিরবাবু দীর্ঘদিন ধরে তেতুলতলা সার্বজনীন পুজোর উদ্বোধক। স্থানীয়দের আবেগকে মান্যতা দিয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাকিদের মৌখিক সম্মতি নিয়েই আমন্ত্রণপত্রে অতিথি হিসাবে নাম ছাপা হয়েছে। যেহেতু দুজন ব্লক সভাপতি অস্বীকার করেছেন, তাই তাঁরা যাতে আগামী দিনে দলীয়ভাবে কোনও সমস্যায় না পড়েন— সে জন্য আমরা কমিটির তরফ থেকে লিখিতভাবে সম্মতি ছাড়াই তাদের নাম ছাপিয়েছি বলে লিখে দিয়েছি।’’
তবে পুজোয় রাজনৈতিক সৌজন্য থাকা উচিত বলে মনে করছে বিজেপি। তাতে সায় দিচ্ছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘প্রবীণ এই মানুষটিকে নিয়ে জেলাবাসীর আলাদা আবেগ রয়েছে। নোংরা রাজনীতি করার জন্যই তৃণমূল ওই দুজন ব্লক সভাপতি এমন করছেন।’’ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের কাঁথি সংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘পুজোয় রাজনীতির সৌজন্য থাকা উচিত ঠিকই। তবে জনসাধারণের মধ্যে যাতে বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, সে জন্য ওই ব্লক সভাপতিরা সকলকে অবগত করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy