এই সব হাঁড়িতেই রাখা থাকত বিষধর সাপ। নিজস্ব চিত্র।
ভাড়ায় মিলত বিষধর সাপ! সেই সাপ ভাড়া নেওয়ার অছিলায় হানা দিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করল বন দফতর। উদ্ধার হল গোখরো, কেউটের মতো নানা বিষধর প্রজাতির ২৫টি সাপ।
বন দফতর সূত্রের খবর, চণ্ডীপুর ব্লকের গাজিপুর এবং দামোদরপুর গ্রামের বেশ কয়েকটি ঘরে সাপের ব্যবসা চলার খবর মিলেছিল। ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি, সেই সব সাপের বিষও বিক্রি করা হতো বলে দাবি। খবর পেয়ে পূর্ব মেদিনীপুর বন বিভাগের বাজকুল রেঞ্জ শনিবার ওই গ্রাম দুটিতে হানা দেয়। সঙ্গে ছিল স্থানীয় জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ মঞ্চও।
বাজকুলের রেঞ্জার পূষন দত্ত বলেন, ‘‘উদ্ধারকারী দল চারটি বাড়িতে তল্লাশি চালায়। উদ্ধার করা হয় গোখরো, কেউটে-সহ নানা বিষধর প্রজাতির ২৫টি সাপ। এই সাপগুলি মাটির কলসি, ট্রাঙ্ক এবং ঝুপির মধ্যে রাখা ছিল। একজন সাপুড়ে এবং এক সাপ পাচারকারিকে গ্রেফতার করা হয়।’’ বন দফতর সূত্রের খবর, ধৃতেরা হল— জ্যোৎস্না রাণি সিং (৬৫) এবং সুকুমার বর (৫৫)। তাদের তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। বন দফতর সাপগুলিকে প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল আদালতে। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে।
জেলায় নেশা-মাদক পাচার-চুরি-ডাকাতির মতো নানা অপরাধের ঘটনা সামনে আসে। তবে সাপ ভাড়া দেওয়া বা তার বিষের বিক্রি— এমন অভিযোগ সচরাচর শোনা যায় না। ধৃতদের গ্রামের বাসিন্দারও বিস্মিত যে, এত সাপ নিয়ে পড়শিরা থাকত, অথচ তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।
স্থানীয় জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ মঞ্চ এবং বন দফতর সূত্রের খবর, পল্লি বাংলায় নানা ধরনের পুজো-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সেখানে জ্যান্ত সাপ গলায় জড়িয়ে (বিষ দাঁত ওপড়ানো) এক শ্রেণির লোক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। দর্শকদের থেকে টাকা পান। তাঁদের এই সব সাপ দেড় থেকে দু’হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। এছাড়া, সাপের বিষও বিক্রি করা হয় লুকিয়ে। মাস কয়েক আগে সাপ গলায় নিয়ে মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে সাপের ছোবলে এক শিল্পী মৃত্যু হয়েছিল নন্দীগ্রামে। তখন পুলিশ এবং বন দফতরের এই বিষয়টি নজরে আসে। তদন্তে সাপের ব্যবসার কথা উঠে আসে।
জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ মঞ্চের সদস্য দেবগোপাল মণ্ডল বলেন, ‘‘সাপের বিষ বিক্রি এবং সাপ ভাড়া দেওয়ার খবর মিলেছিল। আমরা সাপ ভাড়া নেব— এই টোপ দিয়েই এতগুলি সাপের হদিস পাই। ওই দুটি গ্রামের একাধিক বাড়িতে সাপ পোষা হয়। গরমের সময় ২১টি কোবরা জাতীয় সাপ মারা গিয়েছে বলে ধৃতেরা জানিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy