দাসপুরের সুপা গ্রামে চন্দনগড় থেকে নিমতলা রাস্তার দু’ধারে কোনও আলো নেই। সোমবার রাতে এখানেই অ্যাসিড হামলায় জখম হয় নবম শ্রেণির দুই ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র
তখন রাত আটটা। টিউশন সেরে দুই বান্ধবী গ্রামের অন্ধকার পথ ধরে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ ঝোপের আড়াল থেকে অ্যাসিড হামলা। একজনের মুখে-চোখে গিয়ে পড়ল অ্যাসিড, অন্যজনের পিঠে। জ্বালা-যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়ে নবম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রী।
সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দাসপুর থানার সুপা গ্রামে। তড়িঘড়ি দুই ছাত্রীকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার একজনকে ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে অন্যজন চোখে-মুখে ক্ষত নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালেই চিকিৎসাধীন। তার পরিবারের তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তবে তাতে নির্দিষ্ট কারও নাম নেই।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ঘটনার পিছনে সম্পর্কের টানাপড়েন থাকতে পারে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ছাত্রীর মামারও বক্তব্য, “ভাগ্নিকে একজন প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা কয়েকজনের নাম পুলিশকে জানিয়েছি।” জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “ঘটনার পিছনে প্রেমের টানাপড়েনের গল্প উঠে আসছে। আক্রান্তের পরিবারের তরফে কয়েকজন ছেলের নাম আমরা পেয়েছি। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ছাত্রীর বাড়ি গড়বেতার এক গ্রামে। ছোট থেকে সে সুপা গ্রামের মামাবাড়িতেই থাকে। পরিবার সূত্রে খবর, বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে গত ছ’বছর ধরে টিউশনে যাচ্ছে সে। সুপা বাজার থেকে টিউশন সেরে নিমতলার পিচ রাস্তা ধরে বান্ধবীর সাইকেলে দু’জনে সোমবার ফিরছিল সে। সুপা প্রাথমিক স্কুল লাগোয়া ঝোপের কাছে অ্যাসিড হামলা হয়। রাস্তা অন্ধকার থাকায় হামলাকারীদের মুখ দেখা যায়নি। হাসপাতাল থেকে যাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেই ছাত্রীর কথায়, “আমরা গল্প করতে করতে ফিরছিলাম। হঠাৎ স্কুলের সামনে একজন অ্যাসিড ছুড়ে ছুটে পালায়। ওরা তিনজন ছিল। আমরা কাউকে চিনতে পারেনি।” মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ছাত্রীর দাদুর কথায়, ‘‘নাতনিকে যে অ্যাসিড ছুড়েছে তাকে ও চিনতে পারেনি। ছেলেটার গায়ে লাল রঙের জামা ছিল বলেছে।’’
কখনও সম্পর্কের টানাপড়েন, কখনও প্রতিহিংসা বশে ঘাটাল-দাসপুরে গত তিন বছরে অন্তত দশ-বারোটি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে। অ্যাসিড আক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যুও হয়েছিল। এই ঘটনা নতুন করে উস্কে দিয়েছে পুরনো স্মৃতি ঘাটাল-দাসপুর সোনার তালুক। সোনা ও তামার কাজে ব্যবহারের সূত্রে অ্যাসিড এখানে ঘরে ঘরেই থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে ঠিক অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ঘটনায় সামনে এসেছে গ্রামের পথে আলো না থাকা ও অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ম না মানা জনিত ক্ষোভও। এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাতেই পথবাতি নেই। দাসপুর-১ ব্লকের নিজ নাড়াজেল গ্রাম পঞ্চায়েতের সুপা গ্রামের রাস্তাও তার ব্যতিক্রম নয়। এক কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এই রাস্তায় কিছুটা পাকা, কিছুটা মোরামের। পাকা অংশ সাত ফুট চওড়া ও মোরামের অংশ চার ফুট চওড়া। গোটা রাস্তার দু’ধারেই অনেক ঝোপজঙ্গল রয়েছে। রাতে এলাকার বহু বাসিন্দা কাজ সেরে ওই পথে ফেরেন। এই পথে নানা বয়সের মহিলারাও রোজ যাতায়াত করেন। ফলে, পথবাতি ও নিরাপত্তার দাবি জোরাল হয়েছে।
নিজ নাড়াজোল পঞ্চায়েতের প্রধান গগন সামন্ত মানছেন, “গ্রামের সব রাস্তায় আলো নেই। আলো লাগানো পরিকল্পনা রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy