Advertisement
E-Paper

স্বপ্ন শিক্ষকতার, বাবা-মা’র কোলে চড়েই লড়ছে দুই ভাই

পাঁশকুড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধুসূদনবাড়ের বাসিন্দা হেমন্তকুমার দে পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০০৭ সালে তাঁর স্ত্রী পিউ দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন। বয়স বাড়লেও দুই ভাই অনীক এবং অভীক উঠে দাঁড়াতে  পারেনি।

বাবা-মায়ের কোলে অনীক ও অভীক। নিজস্ব চিত্র

বাবা-মায়ের কোলে অনীক ও অভীক। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত মান্না

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share
Save

সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। শরীরের ৮০ শতাংশই অকেজো। তবুও স্বপ্ন দেখার বিরাম নেই। একদিন শিক্ষক হব— এই স্বপ্নপূরণে বাবা-মায়ের ‘কাঁধে’ ভর করে এগিয়ে চলেছে যমজ দুই ভাই।

পাঁশকুড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধুসূদনবাড়ের বাসিন্দা হেমন্তকুমার দে পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০০৭ সালে তাঁর স্ত্রী পিউ দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন। বয়স বাড়লেও দুই ভাই অনীক এবং অভীক উঠে দাঁড়াতে পারেনি। তাঁদের চিকিৎসার জন্য রাজ্যের বাইরেও স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের কাছে নিয়মিত গিয়েছেন হেমন্ত-পিউ। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। চিকিৎসকেরা ওই দম্পতিকে জানিয়ে দেন, যমজ দুই ভাই জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধী।

প্রতিবন্ধকতার সঙ্গেই মধুসূদনবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে ২০১৮ সালে পাঁশকুড়া ব্রাডলি বার্ট হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় অনীক ও অভীক। ছেলেদের তিন কিলোমিটার দূরের স্কুলে গাড়িতে করে পাঠাতে সমস্যায় পড়েছিলেন হেমন্ত। একে তো নিজের ছোট্ট ব্যবসা। তার উপরে ছেলেদের নিয়মিত ফিজিওথেরাপির খবচ। শেষে ব্যবসা ছেড়ে টোটো কেনেন হেমন্ত। ওই টোটোয় করে প্রতিদিন ছেলেদের স্কুলে পৌঁছে দেন হেমন্ত এবং পিউ।

স্কুলে পৌঁছেই কাজ শেষ নয়। দুই ছেলেকে দু’জনে কোলে করে সিঁড়ি ভেঙে তিনতলায় ক্লাসরুমে পৌঁছে দেন দে দম্পতি। অনীক এবং অভীক যতক্ষণ স্কুলে থাকে, ততক্ষণ সেখানেই থাকেন মা পিউ। কারণ, ক্লাসের বাইরে বা বাথরুমে যেতে হলে মায়ের কোলই ভরসা দুই ভাইয়ের। আর হেমন্ত যান টোটো চালাতে। স্কুল শেষে ফের টোট নিয়ে হাজির হন তিনি। সেখান থেকে তাতে চড়ে দুই ভাই যায় টিউশনে।

হেমন্তরা জানাচ্ছেন, দুই ছেলে মাসে এক হাজার টাকা করে সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। বছর খানেক হল স্থানীয় একটি স্বেছাসেবী সংস্থায় দুই ভাইয়ের ফিজিওথেরাপি বিনামূল্যে করানো হচ্ছে। হেমন্ত বলেন, ‘‘ছেলেরা প্রতিবন্ধী। ওদের জন্য এটুকু তো আমাদের করতেই হবে। ওরা জীবনে প্রতিষ্ঠা পাক, এটাই প্রার্থনা।’’ ছেলেদের লড়াইয়ে সব থেকে বেশি সময় দিতে হয় মা পিউকে। তাঁর কথায়, ‘‘জানি এখনও অনেকটা পথ বাকি। কিন্তু জীবন মানেই তো সংগ্রাম। ওদের স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে আমরা শরিক মাত্র।’’

আজ, মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় সেই উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন হবে। এমনই একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ রয়েছে অনীক আর অভীকের। কিন্তু স্কুলে ফাইনাল পরীক্ষা চলায় এবার তাতে যোগ দেওয়া হচ্ছে না ষষ্ঠ শ্রেণির এই দুই ছাত্রের। তাদের কথায়, ‘‘এখন তো ভাল করে পড়তে হবে। তা না হলে শিক্ষক হয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাব কী করে!’’

Pashkura Disability

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।