Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

মাত্রা বাড়ছে লবণের, উপকূল এলাকায় সঙ্কটে বৃক্ষরাজি

জামড়া শ্যামপুর গ্রামের গৃহবধূ কাকলি নায়ক। তিনি বলছেন, “আমাদের নারকেল বাগান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাছ তো দূর অস্ত, সমুদ্রের নোনা জলে পাকা বাড়ির ইঁট পর্যন্ত ক্ষয়ে যাচ্ছে।’’

জলোচ্ছ্বাসের ফলে গাছের গোড়া লবণাক্ত হওয়াতেই এমন অবস্থা বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। শঙ্করপুরে। —নিজস্ব চিত্র

জলোচ্ছ্বাসের ফলে গাছের গোড়া লবণাক্ত হওয়াতেই এমন অবস্থা বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। শঙ্করপুরে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তাজপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০১:০১
Share: Save:

সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে নারকেল, তাল, সুপারি, খেজুর গাছগুলি। কিন্তু দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কেউ গাছগুলিকে যেন পুড়িয়ে দিয়েছে। একই অবস্থা এলাকার ঢেঁড়স, লঙ্কা, বেগুন, কুমড়োর মতো আনাজ গাছগুলির। শঙ্করপুর থেকে তাজপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গাছগুলির এমন করুণ পরিণতি হয়েছে।

একদিকে যেমন সারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যখন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেখানে সমুদ্র লাগোয়া জলধা, চাঁদপুর, জামড়া, শ্যামপুর গ্রামগুলিতে গাছে এমন দশা! গ্রামবাসীদের দাবি, মূলত দু’টি কারণে গাছগুলির এহেন অবস্থা। প্রথমত, অন্যান্য বছর কিছু পরিমাণ সমুদ্রের জল বাঁধ টপকে গ্রামগুলিতে ঢুকত। কিন্তু এ বার সমুদ্রের জল হু-হু করে গ্রামে ঢুকেছে। আর এই নোনা জলেই গাছগুলির এমন ঝলসে যাওয়ার মত অবস্থা। এবং দ্বিতীয়ত, উপকূল এলাকার বাতাসে জলীয় বাষ্পের সঙ্গে লবণ মিশে থাকে। এ বার সেই লবণাক্ততার পরিমাণ আরও বেড়েছে।

জামড়া শ্যামপুর গ্রামের গৃহবধূ কাকলি নায়ক। তিনি বলছেন, “আমাদের নারকেল বাগান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাছ তো দূর অস্ত, সমুদ্রের নোনা জলে পাকা বাড়ির ইঁট পর্যন্ত ক্ষয়ে যাচ্ছে।’’ জলধার বাসিন্দা গৌতম বেরার দাবি, “এ বার তেমন বৃষ্টি হয়নি। ফলে আমন চাষ করতে পারিনি। তাই ঢেঁড়স, লঙ্কা ও কুমড়োর চাষ করেছিলাম। কিন্তু সমস্ত আনাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ প্রতি বছর এলাকায় সমুদ্রের নোনা জল ঢুকলেও, পরে তা বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে যেত। ফলে মাটির লবণাক্ততা অনেকটাই কমে যেত। কিন্তু এ বার প্রায় বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। ফলে কমেনি লবণাক্ততা।

চাঁদপুর গ্রামের অরুণ জানার সুপারি বাগান ছিল। তিনি বলছিলেন, “নোনা জলে সুপারি বাগান নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ জলধা গ্রামের পঞ্চানন জানা বলেন, ‘‘বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুরে খুব অল্প জল ছিল। তাতে কিছু মাছও ছিল। হঠাৎ করে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ায় পুকুরে নোনা জলে মিশে যায়। ফলে সমস্ত মাছ মরে গিয়েছে।’’ শঙ্করপুরের কাছে বন দফতরের পক্ষ থেকে ঝাউ বাগান তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় চার হাজার ঝাউ গাছ লাগানো হয়েছিল। সেই বাগানেরও একই হাল হয়েছে। এমন পরিস্থিতি কেন? কাঁথি বন দফতরের আধিকারিক প্রবীর কুমার সেন বলেন, “আগে সমুদ্র বাঁধ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সমুদ্র ছিল। ফলে সমুদ্র বাঁধ লাগোয়া গ্রামগুলিতে এত জল ঢুকত না। কিন্তু এখন সমুদ্র একেবারে বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে।’’

কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অভীক সামন্ত বলেন, “গাছের গোড়ায় সমুদ্রের জল জমে যাওয়ায় ফলে, মাটির লবণাক্ততা বেড়ে গিয়েছে। ফলে এই মাটি থেকে গাছগুলি সোডিয়াম নিতে পারলেও, জল নিতে পারছে না। এ ছাড়াও বৃষ্টি কম হওয়ায়, এ বার তাপমাত্রা বেড়েছে। তাই গাছগুলির এমন অবস্থা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Shankarpur Tajpur Salt Coastal Area
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy