E-Paper

রাতে পুরপ্রধানের বাড়িতে চড়াও তৃণমূলেরই কর্মী 

অনাস্থায় সরতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। দলের মহিলা পুর প্রতিনিধিকে রেলশহরের পুরপ্রধান করেছিল তৃণমূল। সেই ঘটনার পরে বছর দেড়েক পেরিয়ে গেলেও তৃণমূলের বিভাজন মেটেনি।

মহিলা পুরপ্রধানের বাড়িতে গিয়ে হুমকি, মারধর, গালিগালাজের অভিযোগ।

মহিলা পুরপ্রধানের বাড়িতে গিয়ে হুমকি, মারধর, গালিগালাজের অভিযোগ। —প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৫
Share
Save

বছর দু’য়েক আগে পুরপ্রধানকে পদ থেকে সরানো বিভাজন দেখা দিয়েছিল খড়্গপুর শহর তৃণমূলের অভ্যন্তরে। সে বার অধিকাংশ পুর প্রতিনিধির (কাউন্সিলর) অনাস্থায় সরতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। দলের মহিলা পুর প্রতিনিধিকে রেলশহরের পুরপ্রধান করেছিল তৃণমূল। সেই ঘটনার পরে বছর দেড়েক পেরিয়ে গেলেও তৃণমূলের বিভাজন মেটেনি। এ বার সেই মহিলা পুরপ্রধানের বাড়িতে এসে চড়াও হল প্রাক্তন পুরপ্রধানের ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক তৃণমূলকর্মী। প্রাক্তন পুরপ্রধানের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ওই যুবকের বিরুদ্ধে গালিগালাজ ও মারধরের অভিযোগ তুললেন পুরপ্রধান। এমন ঘটনায় শহরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রধান নাগরিকই প্রশ্ন তুললেন।

শুক্রবার রাতে খড়্গপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীকৃষ্ণপুরে শহরের পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষের বাড়িতে গিয়ে হুমকি, মারধর, গালিগালাজের অভিযোগ ওঠে মহম্মদ ঈশান নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, রাত ১০টা নাগাদ সেখানে গিয়ে জাতিগত শংসাপত্রে সই করে দিতে হবে বলে জানায় ওই যুবক। তাকে সকালে আসতে বলেন পুরপ্রধান। তার পরেই শুরু হয় গালিগালাজ। দীর্ঘক্ষণ এমন ঘটনা চলতে থাকায় কল্যাণীর পড়শিরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই যুবককে পাকড়াও করেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন কল্যাণীও। সেই সময়ে ওই যুবক কল্যাণীকে ধাক্কা মেরে ঠেলে দেয় ও পরে মারধর করে বলে অভিযোগ। মহম্মদ ঈশানের বাড়ি শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। যে ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার।

খবর পেয়ে আসে খড়্গপুর টাউন পুলিশ। সেই সময় কল্যাণীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ঈশান। তাকে আটক করে পুলিশ। পরে থানায় যান কল্যাণী। ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়নি। এমন ঘটনার পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশায় পুরপ্রধান। তিনি বলেন, “আমি কাউকে ফিরিয়ে দিই না। কিন্তু রাতে আমি যখন বিশ্রাম নিতে যাব সেই সময় এই যুবক এসে জাতিগত শংসাপত্রে সই করতে বলে। আমি সকালে আসতে বলায় বাড়িতে ঢুকে গালিগালাজ করতে থাকে। তখন পড়শি কয়েকজন এসে ওকে পাকড়াও করলে মারধর শুরু করে। আমি বেরিয়ে আসলে আমাকেও ধাক্কা দেয়। মারধর করে। মনে হচ্ছে আমাকে মারতেই এসেছিল।” তিনি জুড়েছেন, “আমি প্রথমে ওই যুবককে চিনতে না পারলেও পরে চিনেছি। আমাদের দলেরই কর্মী। তবে প্রদীপ সরকারের কার্যালয়ে যাতায়াত করে। প্রদীপের ওয়ার্ডেই থাকে। পরে পুলিশ এলে ক্ষমা করে দিতে বলে। এমন আচরণ কেন করেছে জানতে চাইলে বলে ওকে কেউ পাঠিয়েছিল। বাকিটা পুলিশ দেখবে। আমি দলের নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”

২০২২ সালের পুরনির্বাচনে জয়ের পরে পুরপ্রধান পদে প্রত্যাবর্তন হয় প্রদীপ সরকারের। সেই থেকেই পুরপ্রধানের পদ ঘিরে দড়ি টানাটানি শুরু হয় তৃণমূলের অভ্যন্তরে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূলের অধিকাংশ পুর প্রতিনিধির অনাস্থায় পুরপ্রধানের পদ ছাড়তে হয় প্রদীপকে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে পুরপ্রধান হন কল্যাণী। সেই থেকে শহরে পুরসভা ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল অব্যহত। এ দিনের ঘটনার পিছনেও তা রয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রদীপ সরকার কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ওই যুবককে কে পাঠিয়েছিলেন, ঘটনার পরে পুরপ্রধান লিখিত অভিযোগ দিলেও কেন তাকে গ্রেফতার হল না, এসব প্রশ্ন নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।

শহরের পুরপ্রধানের বাড়িতে যদি কেউ রাতে অবাধে চড়াও হতে পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়— প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। বিজেপির জেলা নেতা তথা পুরপ্রতিনিধি অভিষেক আগরওয়াল বলেন, “এই ঘটনা খুব উদ্বেগজনক। পুরসভা ঘিরে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই এসব হচ্ছে মনে হচ্ছে। একজন জনপ্রতিনিধি, সবচেয়ে বড় কথা শহরের প্রধান নাগরিকের বাড়িতে যদি এভাবে পুরপ্রধানকে কেউ মারধর করতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষ অবস্থা যে শোচনীয় তা প্রমাণিত। ওই যুবককে অবশ্যই গ্রেফতার করা উচিত। কিন্তু পুলিশ তো তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতেই ক্লান্ত।” পুরপ্রধানও বলেন, “আমার বাড়িতে যদি কেউ এভাবে হামলা করতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে সেটা আমারও প্রশ্ন!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC chairman attack

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।