ছাদ-সফর: মমতার সভার পথে। মেদিনীপুরে এলআইসি মোড়ের কাছে। ছবি: কিংশুক আইচ
লোকসভা ভোটে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। তার উপর শুভেন্দু-পর্বে তাঁর অনুগামীদের সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে এই তালুকে। কয়েকদিন আগে অরাজনৈতিক সভা করে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী নিজেও। একদিন আগে আবার আইনি বাধা কাটিয়ে নিজের পুরনো ‘গড়ে’ ফিরেছেন সুশান্ত ঘোষও। এই আবহে মেদিনীপুরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় গড়বেতা থেকে কেমন লোক যাচ্ছে, নজর ছিল। সোমবার সূর্য ওঠার আগের থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন গড়বেতার তৃণমূলের নেতারা। সভা শেষে তাঁদের চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ।
কৃষিপ্রধান গড়বেতায় এখন আলু লাগানোর কাজ চলছে, পাকা ধান কেটে ঝেড়ে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকেরা। এই অবস্থায় প্রথম দিকে অনেকেই মেদিনীপুরে মমতার জনসভায় যেতে পারবেন না বলে নেতাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই প্রচারের প্রথম দিকে গড়বেতা থেকে কত মানুষ সোমবারের সভায় যাবেন তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তৃণমূল নেতারা। এরই মধ্যে গড়বেতার এক কর্মসূচিতে শুভেন্দুর যোগদান ও সেখানে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ব্লক-সহ জেলা নেতৃত্বকেও ভাবিয়ে তুলে। তারপর রবিবার পাশের ব্লক চন্দ্রকোনা রোডে সুশান্ত ঘোষ ফেরার পরে সিপিএম কর্মীদের ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা দেখা দেয়। ফলে, এ দিনের সভায় লোক পাঠানো নিয়ে বাড়তি সক্রিয়তা ছিল।
ভোরের আলো ফোটার আগের থেকেই বুথে বুথে দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতারা মানুষকে ভাড়া করা গাড়িতে তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেক এলাকায় গিয়ে নেতাদের বলতে শোনা যায়, সকালে কয়েকঘন্টা ধান ঝাড়া, আলু লাগানোর কাজ করেই গাড়িতে উঠতে হবে। কিছু এলাকায় এ দিন কৃষিকাজ বন্ধ রেখেই অনেকে জনসভায় যান। শ্যামনগর, বড়মুড়া, উত্তরবিল, খড়কুশমা, বেনাচাপড়া, আমকোপা, আগরা, আমলাগোড়া, ধাদিকা প্রভৃতি এলাকা থেকে লরি, পিক আপ ভ্যান, বাস এমনকি ছোট গাড়িতে করে মানুষকে মেদিনীপুরে পাঠান তৃণমূলের নেতারা।
বুথের সঙ্গে অঞ্চলের পদাধিকারীরা লোক পাঠাতে তৎপর হয়ে উঠেন সকাল থেকেই। বেলা গড়াতে মানুষের আগ্রহ দেখে স্বস্তি ফেরে তৃণমূল শিবিরে। গড়বেতার এক তৃণমূল নেতা মানছেন, ‘‘কত মানুষ জনসভায় যেতে রাজি হবেন তা নিয়ে আমরা সন্দিহান ছিলাম। পরে ঘর ছেড়ে মানুষ বেরিয়ে আসতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।" সভাশেষে দলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষের চোখেমুখেও স্বস্তির ছাপ। তিনি বলেন, ‘‘৩২টি বাস, লরি-ট্রাক মিলিয়ে ১০০ টি, আর একেবারে ছোট গাড়ি খান চল্লিশেক— সবমিলিয়ে গড়বেতা থেকে ৭-৮ হাজার লোক যান মেদিনীপুরের সভায়।’’ মেদিনীপুরে সভাস্থল থেকে বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘গড়বেতা থেকে প্রচুর মানুষ সভায় এসেছেন।’’
সোমবার সকাল ১১টা। সভার মাঠ তখন অর্ধেকও ভরেনি। মঞ্চে খানিকটা উদ্বিগ্নই দেখাচ্ছিল তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতিকে। মঞ্চে উপস্থিত দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে ঘনঘন কথা বলতেও দেখা যায় তাঁকে। এক সময়ে অজিতকে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি স্বেচ্ছাসেবকদের বলছি, মাঠের গেটটা পুরো খুলে দিতে। যাতে কর্মী- সমর্থকেরা সহজে মাঠে ঢুকতে পারেন।’’ মাঠের গেট পুরো খুলে দেওয়া হয়। বেলা খানিক গড়াতেই ছবিটা বদলে যায়। ১২টার পরে দেখা যায় মাঠ ভর্তি। স্বস্তি ফেরে অজিতদের। সভার ভিড় দেখে খুশি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সভার মতো সভা। আর বাইরে রাস্তায় কত লোক যে দাঁড়িয়ে আছে তার ঠিক নেই। আমি এখানে আসতে আসতে দেখছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy