বৈঠকে পূর্ণেন্দু বসু ও দোলা সেন। নিজস্ব চিত্র
কুড়মি ক্ষোভ কি কুণ্ডলীর আকার নিচ্ছে!
দৃশ্য এক: বৃহস্পতিবার দুপুর। ঝাড়গ্রাম ব্লকের গড়শালবনিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলার ঘটনায় ধৃতদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললেন শুভেন্দু।
দৃশ্য দুই: বৃহস্পতিবার বিকেল। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের পাটাশোল গ্রামে কুড়মি সেনার উদ্যোগে মিছিলের সামনের সারিতে দেখা গেল তৃণমূল নেতা বীরেন মাহাতোকে। তৃণমূলের গোয়ালতোড় অঞ্চলের সভাপতি ছিলেন তিনি। মঙ্গলবারই তিনি দলকে জানিয়ে ওই পদ ছেড়ে দেন।
দৃশ্য তিন: বৃহস্পতিবার সার্কিট হাউজে হঠাৎ হাজির তৃণমূলের পূর্ণেন্দু বসু ও দোলা সেন। দিনভর দফায় দফায় বৈঠক।
তৃণমূলশ্রুতি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই নাকি পূর্ণেন্দু-দোলার ছুটে আসা। দফায় দফায় বৈঠক। তেমনি কোনও এক সেই বৈঠকেই নাকি রাজ্যস্তরের নেতা-নেত্রীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। বোঝাতে হবে সরকারি প্রকল্প। তৃণমূল সরকার যে কতটা সহানুভূতিশীল মানুষের মধ্যে গিয়ে তা প্রচার করতে হবে। শাসক দল সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা নাকি সাফ জানিয়ে দেন, পরিস্থিতি যা তাতে গ্রামে রাজনৈতিক প্রচার করতে গেলে মার খেতে হবে। এ দিন মাঝে এক দফায় সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন পূর্ণেন্দু। কুড়মির দাবি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পূর্ণেন্দু বলেন, ‘‘নায্য দাবি হলে সে দাবি পূরণ করা যায়। নায্য দাবি না হলে সে দাবি পূরণ করা যায় না। এটা সরকার বিচার ও বিবেচনা করছে। সরকার যে সিদ্ধান্তে পৌঁছবে তাই হবে।’’
দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট। এদিকে গড়শালবনিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় হামলা কাণ্ডের জেরে কুড়মি আন্দোলনের অন্যতম নেতা রাজেশ মাহাতো-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। ঘটনার পর গ্রামে গ্রামে মিছিল মিটিং করে আরও সংঘবদ্ধ হচ্ছে কুড়মিরা। কুড়মি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে নিয়মিত মিটিং-মিছিল করছেন কুড়মিরা। তৃণমূলের অনেক নেতাও যোগ দিচ্ছেন সেইসব মিটিং-মিছিলে। ঘটনাচক্রে যেদিন শুভেন্দু গড়শালবনিতে পৌঁছে কনভয়ে হামলা-কাণ্ডে ধৃতদের বাড়িতে গিয়ে আইনি যুদ্ধে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন সেই দিন ঝাড়গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূল এমন দুই নেতা-নেত্রী মাঠেঘাটের রাজনীতিতে যাঁদের অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার পূর্ণ। তবে পূর্ণেন্দু রাজেশকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘গত বিধানসভা ভোটে রাজেশ মাহাতো ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। কী হয়েছিল তা সকলেই জানেন।’’ প্রসঙ্গত গত বিধানসভা ভোটে গোপীবল্লভপুর আসন থেকে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রাজেশ। তবে তৃণমূল প্রার্থী খগেন্দ্রনাথ মাহাতোর কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যান রাজেশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘‘‘এবার পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম। জাতিসত্ত্বার আন্দোলন নিয়ে এখন কুড়মিরা একজোট বেঁধেছে। কুড়মি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে গেলেই তা হাড়ে হাড়ে টের মিলবে। বিশেষ করে কুড়মি নেতাদের গ্রেফতারের পরযেন আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা।’’
এ দিন কৃষক সংগঠনের নাম করে বৈঠক হলেও অধিকাংশ কুড়মি সম্প্রদায়ের শাসক দলের নেতারা ছিলেন। এমনকি আবার কৃষক সংগঠন ছাড়াও রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো, কুড়মি ডেভলেপমেন্ট বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মাহাতো। এছাড়াও কুড়মি সমাজের জেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে কুড়মি আন্দোলন নিয়ে খোঁজ খবর নেন পূর্ণেন্দু ও দোলা।
রাত পর্যন্ত চলেছে বৈঠক। বিরোধী দলের কটাক্ষ, মুখে স্বীকার না করলেও শাসকদলের নেতারা বুঝতে পারছেন, কুড়মি ক্ষোভ কুণ্ডলীর আকার নিচ্ছে। তাই তো নেতা-নেত্রীদের এত ব্যস্ততা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy