Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

গোঁজে বিদ্ধ দিলীপ, কাঁটাহীন শঙ্কর

ঘাটাল বিধানসভা বিজেপির দখলে। বিধানসভা ভোটের পর ঘাটাল ব্লক জুড়েই তৃণমূলের শক্তি অনেকটা নড়বড়ে। তার সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও ক্রমশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

দিলীপ মাজি।

দিলীপ মাজি। kousikghatal2023@gmail.com

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৮:৫৭
Share: Save:

দুই মাথা। দু’জনই লড়বেন গ্রামের ভোটে। এক মাথা গোঁজমুক্ত। অন্যজন গোঁজের প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের অপেক্ষায়।

ভোট ঘোষণার আগে ‘নব জোয়ার’ যাত্রায় এসে ঘাটালের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করে বিবদমান দুই শিবিরকে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের মনোনয়ন পর্ব মেটার পর প্রশ্ন উঠছে তবে কি ‌ঐক্য আনতে চেয়ে মিছে বাক্য ব্যয় করেছিলেন সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। ঘাটালে শাসক দলের দুই মাথা দিলীপ মাজি ও শঙ্কর দোলই। ঘাটাল ব্লক সভাপতি দিলীপ দাঁড়িয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে। আর প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর লড়বেন জেলা পরিষদে। দিলীপ যে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সেখানেই মনোনয়ন দিয়েছেন তৃণমূলের মহিলা ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি কাকলি চক্রবর্তী। তবে ঘাটালে জেলা পরিষদের আসনে শঙ্করের বিরুদ্ধে কোনও গোঁজ প্রার্থী পড়েনি। তৃণমূলের অন্দরের রাজনীতিতে কিছুটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়া শঙ্কর বাজি রেখেছেন পঞ্চায়েত ভোটকেই। কাকলি সরাসরি শঙ্কর শিবিরের না হলেও সব সম্ভাবনার অঙ্ক খোলা রাখতে পছন্দ করেন। তাই আপাত গুরুত্বহীন শিবিরের সঙ্গে আপাত মধুর সম্পর্ক বজায় রাখেন তিনি। ফলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জল্পনা থাকছেই। রহস্য বাড়িয়ে কাকলি বলছেন, ‘‘এখনই কিছু বলছি না।দু’দিন পরই সব জানতে পারবেন।” তবে কি ইঙ্গিত মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিকে। তবে কি স্নায়ুর চাপ বাড়াতেই এই মনোনয়ন। প্রশ্ন উত্তর মিলবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট দিন অতিক্রান্ত হলে।

ঘাটাল বিধানসভা বিজেপির দখলে। বিধানসভা ভোটের পর ঘাটাল ব্লক জুড়েই তৃণমূলের শক্তি অনেকটা নড়বড়ে। তার সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও ক্রমশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্করের সঙ্গে ব্লক সভাপতি দিলীপের দূরত্বও বাড়ছে। শঙ্কর তাঁর মতো করে সংগঠন সাজাচ্ছেন। সংগঠন নিয়ে কোনও পক্ষই সক্রিয় নন বলে অভিযোগ নিচুতলার কর্মীদের একাংশের। অর্থাৎ কার্যত অভিভাবকহীন ঘাটাল। বিধানসভা ভোটে সাবির্ক ভাবে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। সিপিএমও সংগঠন বাড়িয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে ঘাটাল বিধানসভায় বেশিরভাগ বুথে ত্রিমুখী লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই আবহে ঘাটালে শাসক দলের মাথারা কোন্দলে জড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে তৃণমূল কর্মীরা।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঘাটালে দলের দ্বন্দ্ব নিয়ে কড়া নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক।সবং এর বৈঠকে ব্লক সভাপতি দিলীপ ও শঙ্করকে একসাথে চলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।তার পরেও যে দলের দুই ‘মাথার’ জোট হয়নি-তা মনোনয়ন পবেই সামনে এসেছে। দিনের শেষে ঘাটাল ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচটি আসনে জয়লাভ করলেও অস্বস্তি কাটেনি তৃণমূল শিবিরে।

দিলীপের নিজের আসনটি সংরক্ষিত। তাই প্রথম থেকে কোথায় লড়বেন-তা নিয়ে দিলীপের একটা ধোঁয়াশা ছিলই। মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কর অনুগামীদের সঙ্গে বিরোধও প্রকাশ্যে এসেছিল। ফলে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল দিলীপকে। বৃহস্পতিবার মনোনয়নের শেষ দিনে মনোহরপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের রত্নেশ্বরবাটি এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন জমা দেন দিলীপ। তারপরই সেই আসনেই মনোনয়ন জমা দেয় কাকলি। তা ছাড়াও ঘাটাল ব্লকে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েকটি আসনে তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থীও পড়েছে বলে খবর। জেলা পরিষদের আসনে শঙ্করের বিরুদ্ধে কোনও গোঁজ প্রার্থী না পড়লেও ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর খবরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দলের অন্দরে। অস্বস্তিতে শীর্ষ নেতৃত্বও। এ ব্যাপারে দিলীপ মাজি বলেন, “ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই আমি মনোনয়ন জমা দিয়েছি।” তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশিস হুতাইত বলেন, ‘‘ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতিতে মনোনয়ন নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আলোচনায় মিটে যাবে।’’

শুধু ঘাটাল নয়। গোঁজ প্রার্থী নিয়ে সকলের চেয়ে এগিয়ে চন্দ্রকোনার দু’টি ব্লক। মনোনয়নের শেষ দিনে চন্দ্রকোনার দু’টি ব্লকে একাধিক আসনে গোঁজ প্রার্থী পড়েছে বলে খবর। প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা না কাটায় মনোনয়ন মিটলেও প্রচারে নামতে পারেনি তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার চন্দ্রকোনা নিয়ে দলীয় স্তরে দফায় দফায় আলোচনা হয়। কিন্তু তাতেও জট কাটেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2023 ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE