Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Gangrape

ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে গিয়ে তৃণমূলের পার্টি অফিসেই গণধর্ষিতা? পুলিশের কাছে ‘নির্যাতিতা’

গত ২১ অক্টোবর পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারকে চিঠি লিখেছেন ‘নির্যাতিতা’ মহিলা। তাঁর অভিযোগ, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিককে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ১৪:২০
Share: Save:

প্রেমিকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন তরুণী। দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলরের। আর্জি জানিয়েছিলেন মীমাংসা করে দেওয়ার। কিন্তু মিটমাট তো দূর অস্ত, তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে অভিযুক্ত প্রেমিকের সঙ্গে মিলে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয় বলে শাসক দলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ‘নির্যাতিতা’ তরুণী। শুধু তা-ই নয়, তরুণীর দাবি, মুখ খুললে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়! গত তিন মাস ধরে মুখ বুজে থাকার পর শেষমেশ বাধ্য হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি লিখে সুবিচার চেয়েছেন তিনি।

গত ২১ অক্টোবর পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারকে চিঠি লিখেছেন ‘নির্যাতিতা’ তরুণী। তাঁর অভিযোগ, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তাঁর প্রেমিক এস অলোক কুমারকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারিণী তরুণীর সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তরুণী একাধিক অভিযোগ করেছেন। সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

অভিযোগপত্রে খড়্গপুর পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মুকেশ হুমনের নাম উল্লেখ করেছেন ‘নির্যাতিতা’ তরুণী। মুকেশ অবশ্য তরুণীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ওই তরুণী মিথ্যে অভিযোগ করেছেন। ওঁর অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। রাজনৈতিক ভাবে বিরোধিতা করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’’ ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি বিজেপি থেকে শাসক তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন মুকেশ।

অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক আগে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি বাপের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে অলোকের পরিচয় ঘটে এবং পর্যায়ক্রমে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তার পর থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে একাধিক বার সহবাস করেন অলোক। প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করায় যা অভিযোগপত্রে ধর্ষণ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। তৃণমূল কাউন্সিলর মুকেশের কাছে সেই অভিযোগই জানাতে গিয়েছিলেন মহিলা। সেখান থেকেই তাঁকে গত ২৫ জুলাই দুপুরে পার্টি অফিসে আসতে বলা হয়। বলা হয়, সব পক্ষের উপস্থিতিতে মীমাংসা করা হবে।

তরুণীর অভিযোগ, সেই মতো ওই দিন দুপুর ৩টে নাগাদ তিনি পার্টি অফিসে গেলে কাউন্সিলর, অভিযুক্ত প্রেমিক এবং আর এক জন মিলে তাঁকে ধর্ষণ করেন। ওই ঘটনার পর টাউন থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে অলোককে গ্রেফতার করা হলেও কাউন্সিলর ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ ব্যক্তি ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন।

‘নির্যাতিতা’ তরুণীর আরও অভিযোগ, ওই ঘটনার পর গত তিন মাসে ধরে তাঁকে লাগাতার খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রাণের ভয়ে তিনি এত দিন মুখ খুলতে পারেননি। কাউন্সিলরের ভয়ে বাড়ি থেকেও বেরোতে পারছেন না। কিন্তু এ বার সহ্যের সীমা অতিক্রম করায় বাধ্য হয়ে তিনি পুলিশের উপরমহলের দ্বারস্থ হলেন।

সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের কাউন্সিলর মুকেশ। ‘নির্যাতিতা’ তরুণীর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেছেন, ‘‘ওই তরুণী তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন। আমায় মীমাংসা করে দিতে বলেছিলেন। আমি আমার মতো করে বলেছিলাম, ভাল ছেলে দেখে বিয়ে করে নিতে। আর কিছুই হয়নি। আমার বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যে।’’ মুকেশের আরও দাবি, ‘‘আমার আর আমার দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। বিরোধীরা হতাশায় ভুগে এ সব করছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gangrape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy