Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
৬ লক্ষ টাকা দিয়েও হয়নি ছেলের চাকরি
TMC

TMC: প্রতারিত তালিকায় খোদ তৃণমূলের বুথ সভাপতি

প্রতারিত ওই তৃণমূল নেতা খেজুরি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও বেপাত্তা অভিযুক্ত বাপন দাস। যিনি বিডিও অফিসের ক্যান্টিন চালাতেন।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খেজুরি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ০৭:২৬
Share: Save:

এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে নগদ কোটি কোটি টাকা উদ্ধারে শোরগোল পড়েছে রাজ্যজুড়ে। চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে এই টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। আবার টাকা দিয়েও প্রতিশ্রুতি মতো চাকরি জোটেনি বলে ইতিমধ্যেই রাজ্যের নানা প্রান্তে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সেই তালিকায় এ বার নতুন সংযোজন খেজুরির শাসকদলের এক নেতা।

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদম্তে পূর্ব মেদিনীপুরের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষক ছাড়াও অন্যান্য চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নিয়ে প্রতারণার একাধিক অভিযোগ সামনে এঁদেরই একজন খেজুরি-২ ব্লকের হলুদ বাড়ির বাসিন্দা প্রদীপ জানা। তিনি স্থানীয় হলুদবাড়ির তৃণমূলের বুথ সভাপতিও বটে। ব্লক অফিসে ছেলের চাকরির জন্য ৬ লক্ষ টাকা দেওয়ার পর সর্বস্বান্ত তিনি। ঋণের জালে এমনই জড়িয়ে গিয়েছেন যে নিজের দোকানটুকুও বন্ধ করে দিতে হয়েছে প্রদীপকে। প্রতারিত ওই তৃণমূল নেতা খেজুরি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও বেপাত্তা অভিযুক্ত বাপন দাস। যিনি বিডিও অফিসের ক্যান্টিন চালাতেন।

বাপনের বিরুদ্ধে হত ৯ জুলাই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রদীপ। পার্থ কান্ড নিয়ে হইচই শুরু হতেই বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। প্রদীপের কথায়, ‘‘২০১৯ সালে মে মাস নাগাদ আমার ছেলেকে ব্লক অফিসে পিওনের কাজে চাকরি পাইয়ে দেবে বলে কয়েক বার যোগাযোগ করে। প্রথমে ছেলের যাবতীয় নথিপত্র নিয়ে খেজুরি-১ বিডিও অফিসে বিডিও এবং আরেকজন আধিকারিকের ঘরে গিয়েছিল বাপন। সেটা চোখে দেখার পর কিছুটা বিশ্বাস করেছিলাম। ঘর থেকে বেরিয়ে আমাকে জানিয়েছিল ছেলের চাকরি পাকা। পরে ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে জানায়। স্থানীয় কয়েক জনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে বাপনকে দিয়েছিলাম। টাকা নিয়ে স্ট্যাম্প কাগজে সইও করে দিয়েছিল।’’

ওই তৃণমূল নেতা আরও জানান, ২০১৯ সালের মে মাসে দু’ দফায় টাকা দেওয়ার পরে দু’বছর কেটে গেলেও ছেলের চাকরি হয়নি। বাপনের খোঁজে বিডিও অফিসে গেলে তাঁকে প্রশাসনিক অফিসের দোতলার একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বসানো হত। কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করত। কিন্তু তারপরেও কিছু না হওয়ায় দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশমত সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী মাইতিকে তিনি বিষয়টি জানান। সভাপতি অভিযুক্তের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাইয়ে দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছিলেন বলে দাবি প্রদীপের। এর কিছুদিনের মধ্যেই গা ঢাকা দেয় বাপন।

একা প্রদীপ নন। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে এরকম আরও কয়েকজনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাপনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় এক মহিলাও টাকা ফেরত পেতে মাঝেমধ্যে ক্যান্টিন এবং ব্লক অফিসে যেতেন। অভিযোগ ওঠার পর বাপনকে ক্যান্টিন থেকে বাদ দেওয়া হয় বলেও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে চাকরি দেওয়ার পরিবর্তে মোটা টাকা ঘুষ নেওয়ার যে কারবার বাপন চালাতেন, তার পিছনে ব্লক অফিসের একাধিক কর্মচারীর মদত ছিল বলে পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে।

থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর বেশ কয়েকবার বাপনের মোবাইলে পুলিশের তরফে ফোন করা হয়। তখন বাপন তাঁর টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে দাবি প্রদীপের। প্রদীপের দাবি, ‘‘সুদের বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলাম। এখন বসতভিটের একটা অংশ বিক্রি করে ধার মেটাতে হচ্ছে। পাওনাদারদের চাপে মানসম্মান নষ্ট হয়েছে। ছোটখাটো যে দোকান চলতো তাও বন্ধ। খুব অভাবেই চলছে সংসার।’’

যদিও প্রদীপের অভিযোগ নিয়ে খেজুরি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী মাইতি বলেন, ‘‘চাকরির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা এভাবে দেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে অজানা ছিল। বিষয়টি জানার পর বাপনকে ক্যান্টিনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’’ কিন্তু ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে কেন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি?এ প্রসঙ্গে শ্রাবণীর দাবি, ‘‘অত্যন্ত গোপনে এই আর্থিক লেনদেন চলেছে। যাদের কাছ থেকে এরকম টাকা নিয়েছে তাদের সবাইকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ওকে চাপ দিয়েছিলাম। তারপর থেকেই ও উধাও।’’

এ বিষয়ে কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্তকে খুঁজে বের করতে নানা জায়গায় তল্লাশি চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy