দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি তাঁর অবস্থানে অনড়। রাজনীতির নামে কেউ তাঁর সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করলে তাঁর বাড়ি ঢুকে মারবেন কিংবা বাড়ি থেকে চৌরাস্তায় টেনে নিয়ে গিয়ে মারবেন। শনিবার সকালে চা চক্রে বিজেপি নেতার ওই মন্তব্যের পরে তাঁর খড়্গপুরের বাংলোর সামনে পৌঁছে যান তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মী। তাঁদের দাবি, মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে দিলীপকে। সকলের সামনে ক্ষমা চাইতে হবে প্রাক্তন সাংসদকে। দিলীপের গ্রেফতারির দাবিতে স্লোগান ওঠে রেলের ওই বাংলোর সামনে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী ওরফে মুনমুন।অন্য দিকে, বিক্ষোভের খবর পেয়ে মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির বাড়ির সামনে পৌঁছে যান বিজেপির নেতাকর্মীরা। স্লোগান এবং পাল্টা স্লোগানে উত্তেজনার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে। যদিও বিজেপি নেতা ওই সময়ে বাড়িতে ছিলেন না।
বিতর্কের সূত্রপাত শুক্রবার। খড়্গপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি রাস্তা উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন দিলীপ। তাঁকে ঘিরে তখন বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। মূলত মহিলারাই বিক্ষোভের সামনে ছিলেন। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, প্রাক্তন সাংসদ কেন রাস্তার উদ্বোধন করছেন? সাংসদ থাকাকালীন তাঁকে এলাকায় দেখা যেত না বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। এক মহিলা দিলীপকে প্রশ্ন করেন, “হঠাৎ করে আপনি কেন রাস্তা উদ্বোধন করতে এসেছেন? অন্য সময় তো দেখা যায় না।” দিলীপের জবাব, “টাকা দিয়েছি। কারও বাপের টাকা নয়।” প্রাক্তন সাংসদের এ হেন মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন সেই মহিলা। তিনি বলেন, “আপনি বাপ তুলে কেন কথা বলছেন?” প্রাক্তন সাংসদ গলায় জোর এনে বলেন, “চোদ্দোপুরুষ তুলব।” প্রচণ্ড হট্টগোল শুরু হলে দিলীপের মন্তব্য, “বেশি ন্যাকামি করছে। টাকা দিয়েছি। ভিখারি পার্টি নই। চেঁচাবে না। গলা টিপে দেব।”
আরও পড়ুন:
বিজেপি নেতার ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শোরগোল শুরু হয় জেলার রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ক্ষমা না চাইলে দিলীপ যেখানে যাবেন, তাদের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাবেন। তবে সে সবে বিশেষ আমল দিতে রাজি নন দিলীপ। ঘটনাক্রমে শনিবার সকালে খড়্গপুর শহরে চা চক্রে বসে তিনি জানান, মেজাজ হারিয়ে তিনি কোনও কথা বলেনি। মেজাজ ঠিক রেখেই বলেছেন এবং যা বলেছেন, ঠিক বলেছেন। দিলীপের কথায়, ‘‘আমি খড়্গপুরে দাঁড়িয়ে বলে দিচ্ছি, এই রকমের বেয়াদবি যদি কেউ করতে আসে, সে যে পার্টির হোক, বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে এসে রাস্তায় মারব। সে যত বড় নেতাই হোক। দিলীপ ঘোষ কারও বাপের খায় না। কারও জমিদারিতে পা দেয় না।’’
ঘটনাক্রমে শনিবার খড়্গপুরের রাস্তায় রাস্তায় তৃণমূলের মহিলা কর্মীরা মিছিল শুরু করেছেন। সেখান থেকে দিলীপের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে। বিজেপি নেতার বাংলোর সামনে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘তৃণমূল চুড়ি পরে নেই। কিছু বলার আগে যেন দু’বার ভেবে নেন দিলীপ ঘোষ।’’ যদিও প্রদীপের এই চুড়ি-মন্তব্য নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।