দখল হয়েছে ঘাটাল শহরের ফুটপাত। কলেজ মোড়ে। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রসারিত নতুন রাস্তা হয়েছে। পূরণ হয়েছে মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি। তবে ঝাঁ চকচকে সেই রাস্তাও তৃণমূলের জয়ের পথ মসৃণ করতে পারল না।
ছবিটা ঘাটালের। এই লোকসভায় তৃতীয় বারের জন্য জিতেছেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব। বড় ব্যবধানেই জয় এসেছে। রাজ্যের অন্য এলাকার মতো বিরোধীশূন্য ঘাটাল পুর-শহরেও এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এমনকী ঘাটাল শহরের যে ওয়ার্ডগুলিতে দু’বছর আগেও ভাল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তৃণমূল, লোকসভায় সেখানেও পিছিয়ে পড়েছে তারা এবং অনেক বেশি ভোটে।আর সেই হারের কারণ হিসাবে তৃণমূলের তদন্তে সামনে এসেছে, নতুন ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাস্তার দু’ধারে রাতারাতি জবরদখল।
প্রাথমিক ভাবে সামনে আসছে, নতুন রাস্তায় দখলদারিতে তৃণমূলের ‘প্রশ্রয়’, মূলত নীরবতা ঘাটাল শহরের মানুষ ভালভাবে নেননি। তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই মানছেন, ওই অবৈধ দখলদারিতে দলের কোনও কোনও নেতা প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকার মাশুল দিতে হয়েছে ভোটে। তৃণমূলের ঘাটাল শহর সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলছেন, “ ঘাটাল শহরে নদীর পুব পাড়ে হার নিয়ে দলীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।”
ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাজ্যসড়ক ঘাটালবাসীর আবেগ। এই রাস্তা ঘাটালের লাইফ-লাইনও বটে। সম্প্রতি এই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে।দীর্ঘদিনের দাবি মতো প্রশস্ত রাস্তা পেয়ে খুশি ঘাটালবাসী। হয়েছে ফুটপাতও। সেই রাস্তায় কেউ রিল বানাচ্ছেন, কেউ সমাজমাধ্যমে ছবি আপলোড করছেন। তবে ভোটের আগে সদ্য তৈরি ফুটপাত, ড্রেন-সহ রাস্তার দু’ধারে বেআইনি নির্মাণে ক্ষোভ ছড়ায়।
ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশের পর পরই রাস্তার দু’ধারে সরকারি জমি দখল শুরু হয়েছিল ঘাটালে। ভোটের মুখে শ’য়ে শ’য়ে অবৈধ নির্মাণ হয়েছিল বলে অভিযোগ। সরকারি জমি দখল এবং বেআইনি নির্মাণে একাধিক চক্রও গজিয়ে উঠেছে বলে খবর। মোট টাকার বিনিময়েই চলছে কারবার। ওই জবরদখলের জন্য ঘাটাল রাস্তা পেলেও ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যাচ্ছে না। বর্ষার আগে নিকাশি সমস্যাও জটিল হয়েছে। এমনিতেই ঘাটাল শহরের কলেজ মোড় অর্থাৎ পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সরকারি বেআইনি দখলদাবি নিয়ে শহরে ক্ষোভ ছিল। এখন রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার পরে অধিকাংশ ফাঁকা জমি কাযর্ত ‘লুট’ হচ্ছে বলে অভিযোগ। তারপরেও ঘাটাল পুরসভা নীরব থাকায় প্রশ্ন উঠেছে।
এরই মধ্যে সামনে এসেছে লোকসভা ভোটের ফল। তৃণমূল সূত্রের খবর, দেব জিতলেও ঘাটাল পুরসভার ১৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টিতেই পিছিয়ে আছে তৃণমূল। ১০টিতে এগিয়ে বিজেপি। বিশেষ করে শহরে শিলাবতী নদীর পূর্ব পাড়ের ৫টি ওয়ার্ডের ৪টিতেই পিছিয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। তার মধ্যে রয়েছে ঘাটাল শহরের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত পুরসভার ১৩,১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুশপাতা ও কোন্নগর এলাকা। এই কুশপাতা-কোন্নগর জুড়েই বেআইনি নির্মাণের ছড়াছড়ি। গত পুর ভোটে ওই সব ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতলেও এ বার ভাল ভোটে পিছিয়ে পড়েছে তারা।
এই ফল নিলে ঘাটাল তৃণমূলের অন্দরে ঝড় উঠেছে। কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, পুর-নির্বাচনে যেখানে ঘাটাল পুরসভা বিরোধীশূন্য হয়েছিল, দু’বছরের মধ্যে সেখানে এই ছবি কেন? ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটের মতে, ‘‘ফুটপাতে দোকান বসানো নিয়ে তৃণমূলের গা জোয়ারিকে শহরের মানুষ মেনে দেননি। সরকারি জমি দখলের বিরুদ্ধে বিজেপি আগেও আন্দোলন করেছে। আবারও পথে নামবে।’’ ঘাটালে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দিলীপ মাজি এবং প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলইরাও এখন বলছেন, “ঘাটাল শহরের শ্রী ফেরাতে দল তৎপর। সরকারি জমিতে কোনও বেআইনি নির্মাণে দল প্রশ্রয় দেবে না। প্রশাসনকে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করা হবে।”
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy