Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জলাভাবে চাষি থেকে দিনমজুর শবর পরিবার

সেচের জলের অভাবে প্রায় সাড়ে তিন বছর চাষাবাদ বন্ধ থাকাতেই এই পেশা-বদল। ঝাড়গ্রাম শহরের বুকে শবরদের এই দুর্গতি পুরসভারও অজানা নয়। তবে মেটেনি। বামেদের তরফে পুর-কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়ে অবিলম্বে সেচ পাম্প সচলের দাবি জানানো হয়।

তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির সামনে শবরদের বিক্ষোভ। ঝাড়গ্রামের পিণ্ডরা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির সামনে শবরদের বিক্ষোভ। ঝাড়গ্রামের পিণ্ডরা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৫
Share: Save:

বিল মেটাতে পারেনি পুরসভা। তাই সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা। আর তার জেরে পেশাই বদলে গিয়েছে বেশ কয়েকটি শবর পরিবারের। চাষি থেকে তাঁরা হয়ে গিয়েছেন দিনমজুর।

সেচের জলের অভাবে প্রায় সাড়ে তিন বছর চাষাবাদ বন্ধ থাকাতেই এই পেশা-বদল। ঝাড়গ্রাম শহরের বুকে শবরদের এই দুর্গতি পুরসভারও অজানা নয়। তবে মেটেনি। বামেদের তরফে পুর-কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়ে অবিলম্বে সেচ পাম্প সচলের দাবি জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি দেন তাঁরা। কিন্তু সুরাহা হয়নি।

ঝাড়গ্রাম শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রান্তিক এলাকা চাঁদাবিলায় বাস করে ১২০টি শবর পরিবার। এলাকায় ৬০টি শবর পরিবারের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২০ একর। শবরদের চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে বাম আমলে ২০০৮-২০০৯ সালে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচের বন্দোবস্ত করা হয়। এলাকায় সরকারি জমি না মেলায় পাম্প হাউস তৈরির জন্য জমি দান করেন শবর সম্প্রদায়ের স্থানীয় বাসিন্দা কুনু মল্লিক। প্রকল্প চালু হওয়ার পরে পাম্প হাউস থেকে সরাসরি জল পড়ত জমিতে। শবরদের অবশ্য অভিযোগ, প্রকল্পে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জমিতে-জমিতে জল দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে সে সব কিছুই হয়নি। তবে সেচের জল কাঁচা নালা দিয়ে জমিতে পড়ায় চাষাবাদ শুরু করেন শবররা। মরসুমে ধান, আলু, সর্ষে ও তৈলবীজ চাষও করতেন শবররা।

পাম্প হাউসের জমিদাতা প্রয়াত কুনু মল্লিকের ছেলে পঞ্চানন মল্লিক বলেন, ‘‘আমাকে সেচ পাম্পটি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিল মেটানোর কথা ছিল পুরসভার। কিন্তু পুরসভা বিল না মেটানোয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে পাম্প হাউসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মেথরা মল্লিক, নির্মল মল্লিক, চিত্ত মল্লিক, খোকন মল্লিকদের অভিযোগ, আচমকা পাম্প হাউস যে বার বন্ধ করে দেওয়া হয়, ওই বছর তাঁরা আলু চাষ করেছিলেন। জলের অভাবে পুরো চাষ নষ্ট হয়ে যায়। পঞ্চানন মল্লিকের কথায়, ‘‘পাম্প হাউসের বিলের প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ দফতর।’’

দরিদ্র শবররা জানাচ্ছেন, চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের বেশির ভাগই এখন ঝাড়গ্রামে দিনমজুরের কাজ করেন। আরও অভিযোগ, বাম আমলের প্রকল্প হলেও পাম্প হাউসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় বর্তমান সরকারের আমলে। খোকন মল্লিক, চিত্ত মল্লিকরা বলেন, ‘‘নিজেদের উদ্যোগে শ্যালো টিউবওয়েল বসিয়ে সেচের ব্যবস্থা করার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই আমাদের। ’’

বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার এক আধিকারিক জানান, বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। এখন উপায়? ঝাড়গ্রাম পুরসভার প্রশাসক সুবর্ণ রায় অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুর-প্রশাসনের এক প্রতিনিধি দল পাম্প হাউস পরিদর্শন করে এসেছেন। সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Water Crisis Farmer Shabar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy