Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রতীক্ষা শেষ, ভাতা পেলেন বৃদ্ধ নাবিক

কিসমত শিবরাম নগরের ৯১ বছরের  মধুসূদন যৌবনে ‘মার্চেন্ট অফ নেভিতে’ চাকরি করতেন।

মধুসূদন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

মধুসূদন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। অসুস্থতায় শরীরও অশক্ত। জীর্ণ মাটির বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়া লোকদের ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করতেন, প্রতিবন্ধী-বয়স্ক ভাতা মিলবে কবে! গত মঙ্গলবার সেই প্রশ্নের জবাব হাতেনাতে পেয়েছেন হলদিয়ার কিসমত শিবরাম নগরের ওই বৃদ্ধ মধুসূদন চক্রবর্তী। ওই দিনই তাঁর কাছে এসেছে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা।

কিসমত শিবরাম নগরের ৯১ বছরের মধুসূদন যৌবনে ‘মার্চেন্ট অফ নেভিতে’ চাকরি করতেন। তিনি জানান, ১৯৮৭ সালে সরকারি জাহাজ বল্লভভাই প্যাটেলে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করার সময় বিশাখাপত্তনম বন্দরে এক প্রবল ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। হাত-পা ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি কার্যত ঘরবন্দি। ছ’বছর আগে তাঁর প্রস্টেটের সমস্যা ধরা পড়ে।

মধুসূদনের অভিযোগ ছিল, বার্ধক্য ভাতার জন্য হলদিয়ার ব্লক অফিস-সহ বহু দফতরে আর্জি জানালেও তিনি সেই ভাতা পাননি। তিনটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারা ওই বৃদ্ধের আফশোস, কর্মসূত্রে এক সময় রাশিয়া, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, চিনের মতো দেশ ঘুরে বেড়িয়েও বর্তমানে টাকার অভাবে তিনি নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।

গত বছর মধুসূদনের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয় সংবাদপত্রে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের তৎকালীন জেলাশাসক রশ্মি কমলের উদ্যোগে নির্দেশ দেওয়া হয় মহকুমা প্রশাসনকে। একটি কমিটিও গড়া হয়। সেই কমিটির প্রতিনিধিরা মধুসূদনের বাড়ি গিয়ে তাঁর সব নথি খতিয়ে দেখেন। অবশেষে বছর ঘুরতেই মিলল সুখবর। সম্প্রতি একত্রিত ভাবে তিন মাসের প্রতিবন্ধী ভাতা তিন হাজার টাকা পেয়েছেন মধুসূদন। প্রশাসন সূত্রের খবর, এবার থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে পাবেন তিনি।

ভাতা পেয়ে খুশি মধুসূদন। তিনি বলেন, ‘‘আমার জীবন সংগ্রামের কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রশাসনের নজরে আসে বিষয়টি। জেলা প্রশাসন থেকে অনেকেই এসেছিলেন খোঁজ নিতে। আমি কাগজপত্র সব দেখিয়েছিলাম। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসনও সাহায্য করেছে। আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। এতদিন পর এই ভাতা আসায় খুশি আমি।’’ মধুসূদনের স্ত্রী শোভারানি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই টাকা ওঁর চিকিৎসার কাজে লাগবে। ওঁকে বেঁচে থাকার রসদ জোগাবে।’’

বয়স্ক মধুসূদন ভাতা পাওয়ায় খুশি স্থানীয়েরাও। স্থানীয় শিক্ষক শোভন দাস বলেন, ‘‘উনি ভাতা পাওয়ার পর আমার কাছে এসেছিলেন। বৃদ্ধের মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি দেখে ভাল লাগছে।’’

আর যে বৃদ্ধ কিছু দিন আগে রাস্তার লোককে ধরে ভাতা পাওয়ার কথা জানতে চাইতেন, বর্তমানে তিনিই তাঁদের বলছেন— ‘‘আশা ছাড়তে নেই বুঝলেন। আশার জমিতেই বেঁচে থাকতে হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Disability Living Allowance DLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE