সচেতনতা প্রচারে খুদেরা। ফাইল ছবি।
বাবা-মাকে হারিয়ে ওদের ঠিকানা হোম। তবে জীবনের রঙ্গমঞ্চে ওই অনাথ শিশু-কিশোররা যে হারতে রাজি নয়, প্রমাণ করল ৮ থেকে ১২ বছরের এক ঝাঁক কচিকাঁচা। জীবনে প্রথমবার বড় মঞ্চে সাবলীল ভাবে অভিনয় করে দর্শকদের হাততালি কুড়োল সুধীর হাঁসদা, সুজিত মাহাতো, দেবব্রত মুর্মু, সোনা সরেন, বুড়ান হাঁসদারা।
বুধবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম জেলা জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চে বাল্যবিবাহ সচেতনতায় একটি অণুনাটক মঞ্চস্থ করেছিল ঝাড়গ্রাম বিকাশভারতী শিশু বিকাশ কেন্দ্রের জনা দশেক খুদে আবাসিক। সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ওই অনাথালয়ের ‘হাউস মাদার’ শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ও নির্দেশিত ‘আওয়াজ তোলো, তালে, তালে’ নাটকটি মঞ্চস্থ করল বুড়ান, সোনা, দেবব্রতরা। হোমের ‘হাউস ফাদার’ দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সুধীর, পিন্টুদের মত স্বজন হারানোরা যাতে ভবিষ্যৎ জীবনে পথ না-হারিয়ে ফেলে, সেই লক্ষ্যেই তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি, নানা সামাজিক সচেতনতার পাঠও দেওয়া হয়। নাটকের বিনোদনের মধ্যে নানা ভাবে সচেতন করাটাও শিক্ষাদানেরই অঙ্গ।’’
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এই অনাথালয়ে মূলত পিতৃমাতৃহীন ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু, বালক ও কিশোররা থাকে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের চন্দ্রি গ্রামের বছর এগারোর সুধীর হাঁসদার বাবার মৃত্যু হয়েছে জন্ডিসে, মায়ের মৃত্যু হয় ক্যানসারে। সাত বছর বয়সে অনাথালয়ে ঠাঁই হয় সুধীরের। এখন বিকাশ ভারতী এলাকার স্থানীয় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে সুধীর। ঝাড়গ্রামের গজাশিমূল গ্রামের সুজিত মাহাতো মাত্র তিন বছর বয়সে মাকে হারায়। পরে বাবার মৃত্যু হয় পথ দুর্ঘটনায়। ২০১৯ সাল থেকে অনাথালয়ে রয়েছে সুজিত। এখন ন’বছরের সুজিত চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। লালগড়ের পিন্টু শবরেরও বাবা-মা নেই। বিষ মদে মৃত্যু হয়েছিল পিন্টুর বাবা-মায়ের। প্রশাসনের উদ্যোগে অনাথালয়ে পিন্টুকে রাখার ব্যবস্থা হয়। দশ বছরের পিন্টু এখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
জেলা শাসক সুনীল আগরওয়াল জানালেন, প্রতি মাসে জেলা সমাজকল্যাণ দফতর থেকে হোমটি পরিদর্শন করা হয়। জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকরা পরিদর্শনকালে অনাথ শিশুদের নাটক দেখেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতেই জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চে নাটকটি প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। জেলা শাসক বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ সচেতনতা সংক্রান্ত নাটকটির বিষয়বস্তু বেশ অভিনব।’’ নাটকে এক নাবালিকাকে বিয়ে দিতে চান অভিভাবক। সে কথা জানতে পেরে এলাকার মাছ বিক্রেতা, আনাজ বিক্রেতা, মুদির দোকানি ওই অভিভাবককে বয়কট করেন। নাবালিকার বাবাকে জিনিসপত্র বিক্রি করতে রাজি হন না এলাকার ব্যবসায়ীরা। নাগরিক-সচেতনার অভিনব বার্তা রয়েছে নাটকটিতে। সবশেষে খুদেদের স্লোগান: ‘বাল্যবিবাহ করতে শেষ, এক হোক সারাদেশ’। নাটক শেষ হতেই জেলাশাসক করতালি দিয়ে খুদে অভিনেতাদের অভিনন্দন জানান। দর্শকরাও করতালিতে ফেটে পড়েন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy