Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
নেতাই দিবসে দূরে রাজনীতি

শুভেন্দুর নির্দেশে মঞ্চে চেয়ার-পতাকা নেই, দাঁড়িয়ে নেতারা

এ বছর ছিল নেতাই-গণহত্যার নবম বর্ষ।

সশ্রদ্ধ: নেতাইয়ে শহিদ স্মরণে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র

সশ্রদ্ধ: নেতাইয়ে শহিদ স্মরণে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নেতাই শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৪
Share: Save:

এ যেন ক্ষোভের ক্ষতে প্রলেপ!

নেতাই দিবসে শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে এই প্রথমবার দেখা গেল না কোনও চেয়ার। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন তৃণমূলের নেতারা। নেতাই গ্রামের এই অনুষ্ঠানকে রাজনীতির বাইরে রাখার বার্তা দিলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীই। মঙ্গলবার লালগড়ের নেতাই গ্রামে শহিদ-স্মরণে সেরে স্থানীয় কমিউনিটি হলে গ্রামবাসীর অভাব-অভিযোগও শুনতে হল মন্ত্রীকে। কেউ ভাতা, কেউ বা বাড়ির আবেদন করলেন।

এ বছর ছিল নেতাই-গণহত্যার নবম বর্ষ। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি গ্রামের সিপিএম কর্মী রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির দো’তলার সিপিএমের শিবির থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। গুলিতে নিহত হন চার মহিলা-সহ ন’জন। আহত হন ২৯ জন গ্রামবাসী।

গত ৯ বছরে নেতাইয়ের বহিরঙ্গে উন্নয়নের প্রলেপ পড়েছে ঠিকই। নিহতের পরিজনেরা ও আহতরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, আহত কয়েকজনের চাকরিও হয়েছে। কিন্তু আমজনতার অভাব-অভিযোগ মেটেনি। কেউ আবেদন করেও বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না, অনেকে সরকারি প্রকল্পের বাড়িও পাননি। নেতাই মামলার সাক্ষীদের মেদিনীপুরের বিশেষ আদালতে যাতায়াতের ব্যবস্থা তৃণমূল করে না। এমনকি সাক্ষীদের অনেকেই সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাননি বলে অভিযোগ। আর এই ক্ষোভের চোরাস্রোতেই নেতাই শহিদ বেদি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে গ্রামের পাঠাগারের কাছেই উড়ছে বিজেপি-র পতাকা। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে নেতাই গ্রামের দু’টি আসনেই তৃণমূল জেতে। আর গত লোকসভায় নেতাইয়ের দু’টি বুথেই তৃণমূলের লিড থাকলেও একটিতে লিড অনেক কমে যায়।

প্রতি বছরই নেতাই দিবসে গ্রামে আসেন শুভেন্দু। কিন্তু নেতাইবাসীর ক্ষোভ, একমাত্র মন্ত্রী এলে তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতারা গ্রামে আসেন। আর বছরভর তাঁদের দেখা যায় না। সূত্রের খবর, কয়েকদিন আগে শুভেন্দুর আপ্ত সহায়ক হিমাংশু মান্না শহিদ স্মরণের প্রস্তুতিতে নেতাইয়ে আসেন। গ্রামবাসীর ক্ষোভের কথা তিনিই জানান শুভেন্দুকে। এরপরই শুভেন্দু ফোন করে শহিদ-স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের জানিয়ে দেন, মঞ্চ ছোট করতে হবে। কোনও চেয়ার রাখার দরকার নেই। এ দিন শুভেন্দু পৌঁছনোর আগেই ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের ছোট-বড় সব নেতা-জনপ্রতিনিধিরা নেতাইয়ে হাজির হয়ে যান। মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। আয়োজকরা মাইকে ঘোষণা করেন, ‘‘বিধায়ক, নেতা সবাই শহিদ বেদি ও মঞ্চের বাইরে দাঁড়ান। দাদার সে রকমই নির্দেশ রয়েছে। দাদা এসে বেদিতে মালা দেবেন। তারপরে ইচ্ছে হলে আপনারাও দেবেন। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’’ নেতারা ঘন্টা দু’য়েক ঠায় দাঁড়িয়েই ছিলেন।

বেলা এগারোটা নাগাদ পৌঁছন শুভেন্দু। শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে বেদিতে মাথা ঠুকে প্রণাম সারেন। তারপরে মঞ্চে উঠে শুভেন্দু বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন দল আছে, মত আছে। আমার সঙ্গে দ্বারকানাথ পণ্ডা বাবুর (নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি) সঙ্গে কথা হয়েছিল। এ বার তাঁরা কর্মসূচিটা গ্রামের লোকজন মিলে করছেন। সেখানে কোনও দলের পতাকা না রেখে গ্রামের লোকেরা কর্মসূচি করছেন। আপনাদের আবেগকে সম্মান জানাই।’’ শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘একটা কথাই বলব, আপনারা সঠিক বিচার পাননি। রথীনবাবু আদালত থেকে অর্ডার করে তাঁর বাড়ি খুলেছেন। আমি শুধু বলব, রথীনবাবুর বাড়ি ব্যবহার করে যে পাপ কাজটা করে গিয়েছেন রথীনবাবুর বন্ধুরা তার প্রায়শ্চিত্ত উনি গ্রামের লোকেদের নিয়ে করুন।’’

শর্তাধীন জামিনে কিছুদিনের জন্য এলাকায় ফিরে দোতলা বাড়িটি সংস্কার করে করিয়েছেন রথীন। গোলাপি রং করা হয়েছে। রথীন অবশ্য জেলেই ফিরে গিয়েছেন। বাড়ির সদর দরজায় এ দিনও ছিল তালা।

স্থানীয় স্কুলে সাইকেলস্ট্যান্ড তৈরি, ডোমশোল গ্রামের রূপম পাত্রকে গতিধারা প্রকল্পে গাড়ি দেওয়ার আশ্বাস দেন শুভেন্দু। তিনি চলে যাওয়ার পরে নেতাই-কাণ্ডে আহত হংসধ্বজ রায় বলছিলেন, ‘‘আমাদের দেখিয়ে স্থানীয় নেতারা ফুলেফেঁপে উঠছেন। অথচ আমরা কী পেলাম। গুলিতে হাতের শক্তি হারিয়েছি। চাকরি তো জোটেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari TMC Netai Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy