Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

নেতাইয়ে গিয়ে মদন-পার্থকে পাল্টা ‘বহিরাগত’ বললেন শুভেন্দু

সকাল থেকে আদিবাসীদের ডাকা হুড়কাজ্যাম কর্মসূচির জন্যই বুধবার রাতে মদন চলে আসেন নেতাইয়ে। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের শহিদ দিবস পালন হবে বেলার দিকে।

লালগড়ে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।

লালগড়ে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নেতাই শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৪৪
Share: Save:

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর নেতাই দিবসে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার লালগড়ে আসেন শুভেন্দু অধিকারী। সকাল ৮:৪৫ নাগাদ নেতাই পৌঁছন তিনি। রাতেই নন্দীগ্রামে শহিদ দিবস পালনের পরে ভোরে রওনা দেন। অন্য দিকে কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে শুভেন্দুকে পাল্টা কটাক্ষ করে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘শহিদদের কখনও হাইজ্যাক করা যায় না।’’

অন্য দিকে, বুধবার রাতেই ঝাড়গ্রামে পৌঁছন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। সকাল থেকে আদিবাসীদের ডাকা হুড়কাজ্যাম কর্মসূচির জন্যই বুধবার রাতে মদন চলে আসেন নেতাইয়ে। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের শহিদ দিবস পালন হবে বেলার দিকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, সৌমেন মহাপাত্র, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি-সহ ঝাড়গ্রাম জেলার নেতাদের হাজির থাকার কথা।

এই নিয়ে কটাক্ষ করে তৃণমূলের কলকাতার নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে উল্লেখ করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘‘বহিরাগত ওঁরাও। যে শহিদ বেদী রয়েছে গ্রামে, সেটি আমার প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, বিজেপির ভিন রাজ্যের নেতাদের রাজ্যে আসা নিয়ে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব খাড়া করেছে তৃণমূল। শুভেন্দু কার্যত তারই পাল্টা জবাব দিলেন নেতাইয়ে।

শহিদ বেদীতে মাল্যদানের পাশাপাশি নিহত পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানান শুভেন্দু। পরে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। বলেন, ‘‘আজ নেতাই ঢুকতে গিয়ে যা দেখলাম, তা এলাকার মানুষ ভাল চোখে নেননি। গোটা রাস্তায় পতাকায় (তৃণমূলের) মুড়ে দিয়েছে, যা খারাপ লাগছে। আমি যতদিন ধরে এখানে আসছি কোনও দিন দলের পতাকা ব্যবহার করিনি। আজকেও বিজেপির নেতারা এসেছেন। কিন্তু দলের পতাকা নিয়ে নয়।’’

সাংবাদিক বৈঠকে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘প্রতিবছর শহীদদের তৃণমূল মনে রাখে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে রাখে। এমনকি ২১ জুলাই শহীদ স্মরণ এর সময় খাদ্য আন্দোলন থেকে শুরু করে সমস্ত শহীদদের স্মরণ করা হয়। দিদির মঞ্চে সেই শহীদদের সব পরিবার আসেন। এ ভাবে শহিদদের হাইজ্যাক করা যায় না।’’

আরও পড়ুন: শহিদ স্মরণে পারদ চড়ছে হলদির তীরে

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা কোনও দিন আসেননি, খোঁজ নেননি, তাঁরা আজ আসছেন। স্মৃতিরক্ষা কমিটির নামে এখানে শহিদ দিবস পালন করা হয়। সব রাজনৈতিক দলের লোকেরা এসে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান। আমি কোনও দিন রাজনীতি করিনি এখানে। গতবছর যখন এসেছিলাম, তখনও কিছু ক্ষোভের কথা শুনেছিলাম। সীমিত ক্ষমতার মধ্যে দিয়ে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। নেতাই গ্রামের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক আমার। এটা নেতাইবাসী জানেন।’’ সঙ্গে জুড়ে দিলেন, ‘‘সব বাড়িতে চাকরি দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমাকে তৎকালীন সরকার দেয়নি। সীমিত ক্ষমতায় পাশাপাশি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া এবং স্বনির্ভর করে তোলার জন্য সেলাই মেশিন দিয়েছি।’’

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাইয়ে দলীয় কর্মী রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির সিপিএম শিবির থেকে নিরীহ গ্রামবাসীর উদ্দেশে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। ৪ মহিলা-সহ ৯ জন মারা যান। আহত হন ২৮ জন। ঘটনার পরের বছর থেকে সেই দিনটির স্মরণে শহিদ দিবস পালন করে আসছে তৃণমূল। তৃণমূলের মন্ত্রী থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে জঙ্গলমহলের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। সেই সময় থেকেই লালগড়ের নেতাই গ্রামের একজন হয়ে ওঠেন তিনি। নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ায় তৃণমূল সরকার। তবে সেই ‘কৃতিত্ব’ শুভেন্দুর বলে অনেকে দাবি করেন।

সেই দিনের ঘটনার স্মরণে এসে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘শুধু সিপিএমকে দোষ দিলে হবে না। জনসাধারণের কমিটির নামে অনেকে বিশৃঙ্খলা করা হয়েছিল। আটকে ছিল রাস্তা। পিরাকাটা, সাতপাটি এলাকায় অবরোধে আটকানো হয়েছিল। ভয় দেখানো হয়েছিল সেই সময়। কিন্তু আমি ভয় পাওয়ার লোক নই। মৃত্যুকে ভয় পাই না। জঙ্গলমহলের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক।’’

অন্য দিকে, তৃণমূলের নেতারাও নেতাই দিবস পালনের জন্য রাত জেগে শহিদ বেদী ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলার কাজ করেন। তৃণমূলের শহিদ দিবস পালন হবে বেলাতে। তবে সেই কর্মসূচিতে স্মৃতিরক্ষা কমিটি হাজির থাকা নিয়ে থাকছে সংশয়। কারণ শুভেন্দুর সঙ্গে সকালে শহিদ দিবস পালন করে স্মৃতি রক্ষা কমিটি। ছিলেন সভাপতি দ্বারকানাথ পণ্ডা। তিনি বলেন, ‘‘২০১১ থেকে শুভেন্দু সাথে গ্রামের সম্পর্ক। ও আত্মীয়ের মতো। ও যেমন গ্রামের লোকেদের ভালবাসে, গ্রামের লোক ওকে ভালবাসে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari Madan Mitra Netai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE