ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের গড় শালবনির একটি রিসর্টের পান্তা থালি। নিজস্ব চিত্র
নিদারুণ দগ্ধ দিনে পর্যটকদের শরীর জুড়োচ্ছে পান্তাভাত!
ঝাড়গ্রামে তাপমাত্রার পারদ এখন ৪১ থেকে ৪৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তবে দুঃসহ গরমের মধ্যেও আসছেন পর্যটকরা। বনধ-অবরোধের বিচ্ছিন্ন দিনগুলি বাদ দিলে অফ সিজনেও সপ্তাহান্তে ঝাড়গ্রাম এখন শান্তিনিকেতন, দিঘা, মন্দারমণির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বলে দাবি পর্যটন ব্যবসায়ীদের। নববর্ষের সপ্তাহান্তেও অতিথিশালাগুলিতে ভালই পর্যটক ছিল। তাঁদের শরীর জুড়োতে ঝাড়গ্রামের সরকারি ও বেসরকারি অতিথিশালাগুলিতে চালু হয়েছে ‘পান্তা থালি’। ওয়েলকাম ড্রিংঙ্কসে থাকছে আমপোড়ার শরবত কিংবা ঘোল।
ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলছেন, ‘‘এখন গরমের দিনে মূলত শুক্র থেকে রবিবার পর্যটকরা আসছেন। গরমের জন্য পর্যটকদের খাদ্য তালিকায় পান্তাভাতের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।’’ শহরের এক অতিথিশালার মালিক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শনি-রবিবারগুলি ভাল বুকিং থাকছে। স্বাগত পানীয় হিসেবে আমরা আমপোড়ার শরবত কিংবা ঘোল দিচ্ছি। পান্তাভাতের থালিতে থাকছে আলুচোখা, মুসুর ডালের বড়া, পোস্তবড়া, কাঁচা আম থেঁতো। যাঁদের পান্তায় রুচি নেই তাঁদের জন্য ভাত, মাছের পাতলা ঝোল। রাতে ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে দিশি মুরগির পাতলা ঝোল। তবে একাংশ পর্যটক পান্তা খেতে চাইছেন।’’ ঝাড়গ্রামে বেড়াতে আসা সোমা বসু, দীনেন দত্তদের কথায়, ‘‘চড়া রোদে ঘাম ঝরিয়ে ঘুরে বেড়ানোর পর অতিথিশালায় নানা পদের সঙ্গে পান্তা খেয়ে খুবই স্বস্তিবোধ করেছি।’’
ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের গড়শালবনির একটি রিসর্টের মালিক প্রতীক মাহাতো জানাচ্ছেন, তাঁদের পান্তা থালিতে পান্তা ভাতের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে বড়ি ভাজা, বেগুন ভাজা, আলুচোখা, মাছ পোড়া, চাটনি। দাম রাখা হয়েছে আড়াইশো টাকা। তবে সরকারি অতিথিশালায় পান্তা থালির দাম একটু বেশি। পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ঝাড়গ্রাম টুরিস্ট কমপ্লেক্সের ম্যানেজার নিমাই ঘটক জানাচ্ছেন, তাঁদের পান্তা থালির দাম পড়ছে সাড়ে তিনশো টাকা। পান্তার সঙ্গে থাকছে কাঁচা পোস্ত বাটা, শাক, পোস্ত বড়া, ডালের বড়া, আলু-পেঁয়াজের সাদা চচ্চড়ি, কুমড়োর ছেঁচকি, কুচো মাছের টক। এছাড়া সাধারণ ভাতের পাতে আমের টক ডাল, কাঁচা পেঁপে দেওয়া ছোট মাছ অথবা বড় মাছের পাতলা ঝোল, পোস্ত বড়া মিলছে। অন্যান্য খাবারও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলছেন, ‘‘গত শুক্রবার থেকে রবিবার অতিথিশালার ২৭টি ঘরের সব ক’টিতেই পর্যটক ছিল। মূলত, সপ্তাহান্তে পর্যটকরা আসছেন।’’
ঝাড়গ্রামের লোকসংস্কৃতি গবেষক তথা সুবর্ণরেখা কলেজের ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান লখিন্দর পালোই জানালেন, জঙ্গলমহলের জনপ্রিয় এই জলঢালা ভাত বা পান্তা খাওয়ার প্রচলনটি বহু প্রাচীন। চণ্ডীমঙ্গলে কালকেতু সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, ‘মোচড়াইয়া গোঁফ দুইটা বান্ধিলেক ঘাড়ে, এক গ্রাসে সাত হাঁড়ি আমানি উজাড়ে’। অর্থাৎ, কালকেতু তাঁর ইয়া লম্বা গোঁফ দু’টি পিছনে বেঁধে তারপর খেতে বসে এক গ্রাসে সাত হাঁড়ি আমানি (পান্তা) সাবাড় করে ফেলতেন।
প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাও জানাচ্ছেন, গরমে শরীরে জুড়োতে পান্তার জুড়ি নেই। পান্তা তাঁর প্রিয় খাবার। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা চিকিৎসক সুদেষ্ণা ঘোষ বলেন, “পান্তাভাত সহজপাচ্য। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের পক্ষে পান্তাভাত অত্যন্ত উপকারী। পান্তা ভাত ভিটাবিন বি-৬ ও বি-১২-র উৎস।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy