ভোট দিচ্ছে খুদে ভোটার। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকে বুথের সামনে ‘ভোটার’দের লম্বা লাইন। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী! প্রত্যেকের হাতে সচিত্র পরিচয় পত্র। বুথে ঢোকার মুখে মোতায়েন রয়েছে ‘সশস্ত্র পুলিশ’।
দিনভর উৎসবের মেজাজে হল প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা সংসদ নির্বাচন। ১৮ বছরে গণ্ডি পেরোনোর আগেই ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার কাল্পনিক ভাবে প্রয়োগ করে দেখাল রামনগর-১ ব্লকের তেলি শঙ্করপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কচিকাঁচারা।
স্কুল এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার ওই স্কুলের শিশু শিক্ষা সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রী পদে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। ৫৩ জন পড়ুয়ার মধ্য থেকে মন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলে। তার জন্য ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। সেখানে প্রার্থীদের নাম এবং তাদের ছবি ছাপানো রয়েছে। পড়ুয়ারা পছন্দমাফিক প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করে।
ভোটের কাজ করার জন্য ছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, ভোট কর্মী। প্রাইমারি স্কুল এবং পার্শ্ববর্তী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষাকর্মীরা ওই দায়িত্বগুলি পালন করেন। আর গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠ ভাবে পালনের জন্য ভোট কেন্দ্রে ‘বন্দুক’ হাতে মোতায়েন ছিল দুই খুদে ছাত্র সোহম দাস এবং সৌমিত্র পাত্র। খেলনা পিস্তল নিয়ে তাঁরা পুলিশের ভূমিকা পালন করেছে।
ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বজিৎ সাহু নামে এক খুদে পড়ুয়া বলে, ‘‘আগে নিজেরাই পছন্দমত মন্ত্রী মনোনীত করতেন শিক্ষকেরা। এবার আমরা ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আর অন্য মন্ত্রীদের নির্বাচন করছি।’’ কোন মন্ত্রকের কী কাজ, সে ব্যাপারে এখন থেকেই জেনে গিয়েছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী খুদে পড়ুয়ারা। প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শুভশ্রী সাহু। তার কথায়, ‘‘সহপাঠীরা যদি আমাকে জয়ী করে, তাহলে স্কুলের পারিপার্শ্বিক সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখা হবে আমার কাজ।’’
প্রসঙ্গত, গোটা রাজ্যে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষা সংসদ নির্বাচনে এই পাঁচ দফতরে ছাত্র প্রতিনিধি মনোনীত করার পদ্ধতি দীর্ঘদিনের। সেই প্রচলিত রীতিকে একেবারে নতুন আঙ্গিকে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত করলেন সেখানকার তেলি শঙ্করপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রেহানা খাতুন নামে এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কীভাবে নির্বাচন হয়, ছোট থেকেই পড়ুয়াদের তা শেখাতে এই উদ্যোগ।’’ নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার তথা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যরঞ্জন দত্ত বলেন, ‘‘এক একটি মন্ত্রকের জন্য একাধিক দাবিদার উঠে এসেছিল। তাই ছাত্ররা যাতে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তার জন্য এই শিক্ষা সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজন হয়ে গিয়েছিল।’’
প্রাথমিক স্তরে এভাবে ব্যালট পেপার চেপে নির্বাচন করা যায় কি না, সে প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ফোন করা হয়েছিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মানসকুমার দাসকে। তিনি বলেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে এভাবে প্রার্থীদের নাম ব্যালটে ছেপে নির্বাচনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে। মূলত পড়ুয়াদের মধ্যে দায়িত্ব এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিশু সংসদ প্রতিটি স্কুলে জরুরি। আগামী দিনে অন্য স্কুল গুলিও যাতে এই প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে, তার জন্য আমরা উৎসাহ দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy