সুরজ সিংহ
সাঁতার জানত না দ্বাদশ শ্রেণির সুরজ সিংহ (১৭)। শুক্রবার সকালে স্কুলের পুকুর পাড়ে বসে মগে জল তুলে স্নান করার সময় সে পা হড়কে তলিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরে সহপাঠীরা উদ্ধার করে সুরজের নিথর দেহ। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সুরজকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ঝাড়গ্রাম ব্লকের আগুইবনি অঞ্চলের একতাল ডিএম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে।
সুরজের বাড়ি বেলিয়াবেড়া র ফুলবেড়িয়া গ্রামে। স্কুলের হস্টেলে থাকত সে। রোজ সকালে আবাসিক পড়ুয়ারা স্কুলের পুকুরে স্নান করলেও সুরজ স্নান করত স্কুলের নলকূপের জলে। স্কুল চত্বরে পরিস্রুত জলের অপচয় রোধে নলকূপের জলে স্নান করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি
করেন হস্টেল কর্তৃপক্ষ। সেই কারণে সুরজ পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিল বলে তার সহপাঠীদের দাবি। ঘটনায় সুরজের বাবা সঞ্জিত সিংহ বলেন, “ছেলে সাঁতার জানত না। ওর কোনও শারীরিক সমস্যাও ছিল না। আর কোনও ছাত্রের যেন এমন না হয়।”
কয়েক মাস আগে স্কুল পরিদর্শন করতে এসে সরকারি প্রতিনিধিরা হস্টেল চত্বরে পুকুর দেখে বিস্মিত হন। পুকুরের চারপাশে প্রাচীর দিতে বলেছিলেন সরকারি পরিদর্শক দলটি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ। এ দিনের ঘটনার পরে দায় এড়ানোর জন্য প্রধান শিক্ষক শুভাশিস চক্রবর্তী পুলিশে ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাংশ গ্রামবাসী।
এই পুকুরেই ডুবে গিয়েছে সুরজ। —নিজস্ব চিত্র
প্রধান শিক্ষকের দাবি, এ দিন সকালে সুরজ পুকুরের জলে মুখ ধুতে গিয়েছিল। ঘটনার পরে এ দিন আর স্কুলমুখো হননি প্রধান শিক্ষক। ময়না তদন্তের সময় ঝাড়গ্রাম পুলিশ মর্গে এসেছিলেন শুভাশিসবাবু। তাঁকে নাগালে পেয়ে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিজনরা। প্রধান শিক্ষকের সামনেই আবাসিক স্কুলপড়ুয়া মান্তু সিংহ, সাজন টুডু, রমেশ হাঁসদারা জানায়, “হস্টেল কর্তৃপক্ষের তরফে গভীর নলকূপের জলে সুরজকে স্নান করতে নিষেধ করা হয়েছিল। আমরা সাঁতার জানি বলে স্কুলের পুকুরে কিংবা স্থানীয় খালের জলে স্নান করি।”
ছাত্রদের মুখে এ কথা শুনে এ দিন হাসপাতাল চত্বরে মেজাজ হারান শুভাশিসবাবু। তিনি রেগে গিয়ে বলেন, “তোরা কেন এ সব মিথ্যে কথা বলছিস!” পরে তিনি বলেন, সহপাঠীর মৃত্যুতে ওরা দুঃখ পেয়ে প্রলাপ বকছে। ঝাড়গ্রামের যুগ্ম বিডিও চঞ্চলকুমার মণ্ডল জানান, ওই স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রাবাসের সরকারি মঞ্জুরি রয়েছে। বিধি ভেঙে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের রেখেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষকের দাবি, “বিভিন্ন চাপের কারণে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের হস্টেলে রাখতে হয়।”
স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্য তথা তৃণমূলের আগুইবনি অঞ্চল সভাপতি অরবিন্দ ভুই বলেন, “এটা দুর্ঘটনা। পুকুরের চারিদিকে পাঁচিল দেওয়া হবে।” ঝাড়গ্রাম মহকুমার অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সমর দাস বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy