ভাসানের পরে খড়্গপুরের মালঞ্চ এলাকার জমিদার পুকুরের অবস্থা এমনই। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর নিরঞ্জন শেষ। ঘরে ঘরে চলছে কোজাগরী লক্ষ্মী আরাধনার প্রস্তুতি। কিন্তু পুজোর কাজে পুকুরঘাটে যাওয়ার জো নেই। দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের পরে পাঁচদিন কাটতে চললেও পুকুরের শ্রী ফেরেনি।
পুজোর মরসুমে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়েই এখন এই ছবি। দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পরে সাফসুতরো হয়নি শহরের পুকুরগুলি। একই চিত্র গ্রামীণ এলাকাতেও। পুকুরেই পচন ধরছে প্রতিমার কাঠামো ও পুজোর নানা উপকরণের। ছড়াচ্ছে দূষণ। পুকুর কে পরিষ্কার করবে, তা নিয়ে তরজাও শুরু হয়েছে। পুকুরগুলি মূলত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হওয়ায় পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েত হাত গুটিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বড় বাজেটের পুজো মূলত হয় রেলশহর খড়্গপুরে। সব মিলিয়ে পুজোর সংখ্যা ১০৮। দু’-একটি বাদে অধিকাংশ পুজোর বিসর্জন হয় পুকুরেই। এ বার চণ্ডীপুরে গিড্ডু জমিদারের পুকুর, খরিদায় মন্দিরতলা পুকুর, সুভাষপল্লি পদ্মপুকুর, কৌশল্যার তেলমিলের পুকুর ও ইন্দার আনন্দনগরের একটি পুকুরে দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। কিন্তু কটি পুকুরও পরিষ্কার হয়নি। পুজোর আগে পুরসভার তরফে পুকুর পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বিসর্জনের পরে ফের দূষিত হয়েছে পুকুরগুলি। গিড্ডু জমিদারের পুকুরে দশমী থেকে ত্রয়োদশী পর্যন্ত ৫৮টি পুজোর বিসর্জন হয়েছে। পুকুরপাড়ের বাসিন্দা মনিকা সরকার বলেন, “যাঁরা পুকুরে টাকার দিয়ে বিসর্জন করাচ্ছেন তাঁরাও পুকুর পরিষ্কার করেননি। ফলে কাঠামো, পুজোর ফুল, পাতা সবই পচছে। পুরসভা উদ্যোগী না হলে পুকুর পরিষ্কার হবে না দেখছি।”
পরিস্থিতি দেখে পুকুর পরিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভাও। তবে তা হবে লক্ষ্মীপুজো মিটলে। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আমরা পুজোর আগেই পুকুরগুলি পরিষ্কার করে দিয়েছিলাম। ফের লক্ষ্মীপুজোর পরে পুকুরগুলি পরিষ্কার করা হবে। ছোট পুকুরগুলি নিয়ে কেউ অভিযোগ জানালে স্থানীয় কাউন্সিলরকেও দেখতে বলব।”
পাশের শহর মেদিনীপুরে অবশ্য এ বার হাতে গোনা কয়েকটি পুকুরে বিসর্জন হয়েছে। জেল পুকুর ও রাজার পুকুর ছাড়া অধিকাংশ প্রতিমার নিরঞ্জন হয়েছে কাঁসাই নদীতে। গত বছর পর্যন্ত শহরের মতিঝিলে বহু প্রতিমার বিসর্জন হলেও এ বার ওই পুকুরে বিসর্জন হয়নি। তবে যে দু’টি পুকুরে বিসর্জন হয়েছে সেখানেও অপরিচ্ছন্নতার ছবিই ধরা পড়ছে। মেদিনীপুর সদরের মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষের অবশ্য আশ্বাস, “পরিষ্কারের ব্যবস্থা হবে।”
ঘাটাল শহরের ৩৬টি পুজোর প্রায় ৩০টিরই প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে শিলাবতীতে। তবে চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, দাসপুর, সোনাখালি এলাকার প্রতিমা বিসর্জন হয় স্থানীয় পুকুরেই। সেখানেও পুকুর সাফাইয়ের উদ্যোগ নেই। প্রতিমার সাজ, কাঠামো জলে দূষণ ছড়াচ্ছে। কয়েকটি পুজো কমিটি শুধুমাত্র কাঠামো তুলেই দায় এড়িয়েছে। মহকুমাশাসক অসীম পাল বলেন, “যদি কোনও কমিটি পুকুর পরিষ্কার না করে থাকে তবে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখতে বলব।”
বিসর্জনের বিষে দূষণ ছড়াচ্ছে গড়বেতার পুকুরেও। প্রতিমার কাঠামো, মাটি, রং, সাজসজ্জার উপকরণ, ফল-ফুল বেলপাতা-সহ পুজোর নানা সরঞ্জাম ভাসছে গড়বেতার তিনটি ব্লকের বেশ কয়েকটি বড় পুকুর ও জলাশয়ে। গড়বেতা ১ ব্লকের আমলাগোড়া, আমকোপা, শ্যামনগর, সন্ধিপুর প্রভৃতি অঞ্চলের কয়েকটি পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের পর কাঠামো জলেই ভাসছে বলে অভিযোগ। আমলাগোড়ার একটি পুকুরে তো জলজ উদ্ভিদের সঙ্গে প্রতিমার কাঠামো, পুজোর উপকরণে জলে নামাই দায়। অথচ এই সব পুকুরের জলে স্নান, বাসন মাজা, কাপড় কাচা— সবই চলে। গবাদি পশুরও জন্যও ব্যবহৃত হয় পুকুরের জল। এলাকার মানুষের বক্তব্য, যেখানে পুজোর সময় মণ্ডপে মণ্ডপে ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে, পুকুর সাফাই হচ্ছে না কেন?
প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুজো কমিটিগুলিকে আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল বিসর্জনের পর পুকুর, নদী, জলাশয় থেকে কাঠামো সহ সব উপকরণ সরিয়ে ফেলতে। অভিযোগ, সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই বেশ কয়েকটি পুকুরের জলে বিসর্জনের ৩-৪ দিন পরেও পড়ে আছে কাঠামো। গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ফারুখ মহম্মদ বলেন, "বিসর্জনের পর পুকুর বা জলাশয় থেকে কাঠামো ও পুজোর যাবতীয় জিনিসপত্র তুলে দেওয়ার জন্য পুজো কমিটিগুলিকে বলব, পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন থেকেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।" গোয়ালতোড়ের জেলাপরিষদ সদস্য চন্দন সাহা বলেন, "দূষণ রোধে প্রশাসন তৎপর, বিসর্জনের পর পুকুরের জল যাতে দূষিত না হয় তা দেখা হচ্ছে।’’
ঝাড়গ্রাম জেলা সদরে মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে প্রতিমা নিরঞ্জন। আজ, রবিবার পর্যন্ত চলবে। অরণ্যশহরের দক্ষিণশোল পুকুর, পুটুচৌধুরী কলোনি পুকুর, মেহেরাবাঁধ দিঘি, ধরমপুর খালে, ইটভাটা পুকুর, কালীমন্দির পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। কাঠামো পরিষ্কার হয়নি। শহরের কয়েকটি সর্বজনীন পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন শহর লাগোয়া গ্রামীণ এলাকার পুকুরগুলিতে হয়। একই সঙ্গে জেলার ৮টি ব্লকের ৫০-৬০টি সর্বজনীনের নিরঞ্জনও স্থানীয় পুকুরগুলিতে হয়। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, “গ্রামীণ এলাকার পুকুরগুলির ব্যপারে পঞ্চায়েত ও শহরের পুকুরগুলি সাফাইয়ে পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তথ্য: দেবমাল্য বাগচী, অভিজিৎ চক্রবর্তী, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, কিংশুক গুপ্ত ও বরুণ দে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy