জুনিয়র হাইস্কুল থেকে হাইস্কুল হয়েছে নেতাই গ্রামের স্কুল। নিজস্ব চিত্র
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে নেতাই গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুল উন্নীত হয়েছে হাইস্কুলে। কিন্তু এখনও নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ফলে, সঙ্কট কাটেনি নেতাই গ্রামের স্কুলের।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুলে কমপক্ষে ১১ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু টিচার-ইনচার্জ সহ চারজন শিক্ষক দিয়েই চলছে নেতাইয়ের মাধ্যমিক স্কুলটি। পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ক্লাস নেন ওই চার শিক্ষক। তারই মাঝে প্রশাসনিক নানা কাজে টিচার-ইনচার্জ দেবাশিস গিরিকে প্রায়ই ‘অন-ডিউটি’ বিভিন্ন সরকারি দফতরে ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদে ছুটতে হয়। ফলে বেশিরভাগ দিনই গোটা ভার সামলাতে হয় তিন শিক্ষককে। স্কুলে এখন অঙ্ক, ইংরাজি, বাংলা ও ভূগোলের শিক্ষক রয়েছেন। বাকি কোনও বিষয়ের শিক্ষক নেই। স্কুলে করণিকও নেই। এখন পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া রয়েছে ২৩০ জন। তার উপর আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হবে দশম শ্রেণি। ফলে, পঞ্চম-সহ সব শ্রেণিতেই নতুন করে বেশি সংখ্যক পড়ুয়া ভর্তি হবে। আর তাই প্রমাদ গুনছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সমস্যা মেটাতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। দফতর থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদন মেলায় সরকারি ভাবে শিক্ষকের বাড়তি পদ তৈরি করে নিয়োগ করা হবে। তবে প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ। আর এতেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র চোখের মণি গণহত্যার সূত্রে শিরোনামে উঠে আসে নেতাই গ্রামের শিক্ষক নিয়োগে এত দেরি হবে কেন। ওই স্কুলের টিচার-ইনচার্জ দেবাশিসের বক্তব্য, ‘‘আমাকে নিয়ে মাত্র চারজন শিক্ষক। খুবই সমস্যা হচ্ছে।’’
বাম আমলে ২০০৮ সালে পথ চলা শুরু নেতাই জুনিয়র হাইস্কুলের। এসএসসির মাধ্যমে চারজন শিক্ষক নিযুক্ত হন। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক রায় ও সনৎ রায়ের দান করা প্রায় ১ বিঘা জমিতে সরকারি বরাদ্দে স্কুলের দোতলা ভবন হয়। স্থানীয় সয়েরসাই, ডাইনটিকরি, কাঞ্চনডাঙা, ভুলাডাঙা ও সিঁদুরপুর গ্রামের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়ে। পড়ুয়াদের বেশিরভাগই আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল স্কুলটি মাধ্যমিক করা হোক। প্রশাসন ও স্কুলশিক্ষা দফতরের বিভিন্ন মহলে আবেদন-নিবেদন করে কোনও কাজ না হওয়ায় স্কুলের টিচার-ইনচার্জ দেবাশিস গিরি এবং নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ পণ্ডা সরাসরি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন। লোকসভা ভোটের আগে পার্থ ঝাড়গ্রামে জেলায় প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে কয়েক বার এসেছিলেন। ওই সময় দু’বার স্কুলের তরফে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপরই মার্চের গোড়ায় স্কুলটি মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি এই নেতাইয়ে সিপিএমের শিবির থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। চার মহিলা-সহ ৯ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ২৮ জন। রাজ্যে পালা বদলের পরে পিচ রাস্তা পেয়েছে নেতাই। গ্রামের ধার বরাবর কংসাবতীর ভাঙন রোধে কাজ হয়েছে। গ্রামে নলবাহিত পানীয় জল প্রকল্প হয়েছে। হয়েছে কমিউনিটি হল, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, শ্মশান সংস্কার হয়েছে, পাঠাগার দোতলা হয়েছে, গ্রামের রাস্তায় বসেছে সৌর আলো।
এত কিছুর মাঝেও গ্রামের সদ্য হাইস্কুলে উন্নীত স্কুলের পরিকাঠামো উন্নতিতে নজরই দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ পণ্ডা বলেন, ‘‘অবিলম্বে স্কুলে আরও শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন। বিষয়টি শিক্ষা দফতরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কবে শিক্ষক নিয়োগ হবে বুঝতে পারছি না।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) লক্ষ্মীধর দাস অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই স্কুলে আরও ছ’জন শিক্ষক দেওয়া হবে। স্কুল মাধ্যমিকস্তরে উন্নীত হওয়ায় অর্থ দফতরের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ হতে সময় লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy