রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অফিস। — ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের ঘোষণা হয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে ভোটের মনোনয়নপর্বও। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ, মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে। অত:পর?
এডিএম- কে ফোন করলেন এক বিডিও। জানতে চাইলেন, স্মার্টফোনে ভিডিয়ো তুলে কাজটা চালানো যাবে কি না। এডিএম তাঁকে জানালেন, কমিশন ভিডিয়োগ্রাফি করার কথা বলেছে। কীসের মাধ্যমে করতে হবে, নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি। যে ভাবেই হোক, ভিডিয়ো তুললেই হবে। এরপর ওই বিডিও তাঁর দফতরে ডেকে পাঠালেন বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের (বিএসকে) ‘ডেটা এন্ট্রি’ অপারেটরকে (ডিইও)। নির্দেশ দিলেন, ওই ডিইও যেন মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফির কাজটা করেন। কিন্তু তাঁর যে ক্যামেরা নেই। বিডিও তাঁকে এ-ও জানালেন, ক্যামেরা না হলেও হবে। স্মার্টফোনে ভিডিয়ো তুললেই চলবে। ওই ডিইও মানছেন, ‘‘এখন আমি মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি করার কাজটা করছি। মোবাইলেই ভিডিয়ো ছবি তুলছি। পরে ল্যাপটপে আপলোড করে রাখছি।’’
গত ৮ জুন পঞ্চায়েত ভোটের ঘোষণা করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ। ভোট ৮ জুলাই। কমিশন সূত্রের খবর, ভোট ঘোষণার পরের দিন অর্থাৎ, ৯ জুনই জেলায় জেলায় কমিশনের তরফে এক নির্দেশিকা পাঠানো হয়। নির্দেশিকা পৌঁছয় জেলাশাসক তথা জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে। জানিয়ে দেওয়া হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে ভিডিয়োগ্রাফির ব্যবস্থা করতে হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে সিসিটিভি- র ব্যবস্থা করতে হবে, সে সব। কমিশনের নির্দেশ, মনোনয়নপর্ব অর্থাৎ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করা, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা, এ সব ক্ষেত্রে ভিডিয়োগ্রাফির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে, স্ট্রং রুম এবং গণনা কেন্দ্রে সিসিটিভি- র ব্যবস্থা করতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরেও সেই মতো পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৫ জুন পর্যন্ত মনোনয়ন করা যাবে। ১৭ জুন মনোনয়ন পরীক্ষার দিন ধার্য রয়েছে। ২০ জুন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। অনেকের অনুমান, স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই মনোনয়নপর্বের ভিডিয়োগ্রাফি করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
মনোনয়ন শুরু হয়েছে। রাজ্যের ইতিউতি বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনাও ঘটছে। শনিবার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহের। রাজভবনে ওই বৈঠকে কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল। যে কোনও মূল্যে অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতে হবে- জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। পশ্চিম মেদিনীপুরে অবশ্য এখনও পর্যন্ত মনোনয়ন ঘিরে বড় ধরনের কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। তবে কেশপুর সহ কিছু ব্লকে অশান্তির আবহ তৈরি হয়েছে। চাপা উত্তেজনা রয়েছে। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা মনোনয়ন কেন্দ্রে পুলিশ রয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশ রয়েছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘সুষ্ঠু মনোনয়নে যেখানে যে পদক্ষেপ করার দরকার রয়েছে, করা হয়েছে।’’
জানা যাচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের স্থায়ী, অস্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি করার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। একটি ব্লকে ৮ জনকে ওই কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। সকলেই বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। এঁদের কেউই পেশাদার ফটোগ্রাফার নন। শখে মোবাইলে ছবি তোলেন। এঁদের হাত দিয়ে ঠিকঠাক ভিডিয়োগ্রাফি হচ্ছে তো! সংশয় এবং আশঙ্কা বিরোধীদের। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের খোঁচা, ‘‘বিএসকে- তে বেছে বেছে কাদের নিযুক্ত করা হয়েছে, সবাই জানেন। ওঁদের হাতে যেমন ছবি ওঠার কথা, তেমনই উঠবে। ভিডিয়ো রেকর্ডিং ঠিক হলেই হল!’’
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘যাদের ভোটে হারের ভয় থাকে, তাদেরই নানা রকম সংশয়, আশঙ্কা থাকে!’’ বিএসকে চালু রাখতে সমস্যা হচ্ছে না? ভিডিয়োগ্রাফির কাজে নিযুক্ত এক ডিইও শোনাচ্ছেন, ‘‘অন্য এক সহকর্মী রয়েছেন। ভোট ঘোষণা হয়েছে। তাই এখন তো ওখানে কাজের চাপ কম।’’ জেলার এক অতিরিক্ত জেলাশাসকের আশ্বাস, ‘‘মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি হচ্ছে। নজরদারি রয়েছে। ভিডিয়ো রেকর্ডিং ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, নজরও রাখা হয়েছে।’’ ওই ডিইও শোনাচ্ছেন, ‘‘এখন তো স্মার্টফোনে সহজেই ভিডিয়ো তোলা যায়। সমস্যা হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy