—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ঝড়ের তাণ্ডব থেকে মিলেছে রেহাই। তবে, ঘূর্ণিঝড় 'দানা' স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার পর উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে লাগাতার বৃষ্টি। ক্ষতির মুখে পড়েছে নিচু এলাকার বাসিন্দারা। দুর্গতদের পাশে থেকে পরোক্ষ ভাবে জনসংযোগ এবং ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার সুযোগ শাসক ও বিরোধী—কোনও রাজনৈতিক দলই ছাড়ছে না। সেই সঙ্গে পরস্পরকে কটাক্ষ করে মন্তব্যও চালিয়ে যাচ্ছেন দুই পক্ষের নেতারা।
ভোটের রাজনীতির তাগিদে আমজনতাকে কারা বেশি সাহায্যে তৎপর কিংবা প্রয়োজনের সময়ে কাদের বেশি পাশে পাচ্ছেন মানুষ, তা নিয়ে চোরা প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। নিজেদের অন্যের থেকে বেশি প্রজাদরদী এবং সাহায্যকারী প্রমাণে তৃণমূলের পাশাপাশি আসরে নেমেছে বিরোধী বিজেপি, বামেরা।
উপকূল এলাকা-সহ বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার পরিবেশন— সব কিছুই করছে সব দল। শুক্রবার সকাল থেকে 'দানা'য় ক্ষয়ক্ষতির খোঁজখবর নিতে নিজের নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছেন রামনগরের শাসকদলের বিধায়ক অখিল গিরি। বৃহস্পতিবার উপকূল এলাকার মৎস্যজীবীদের খোঁজখবর নিতে তাজপুর এবং শঙ্করপুরে যান রাজ্যের মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী। পরে সেখানে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক। মৎস্যজীবীদের দাবিদাওয়ার কথা শোনেন তিনি।
কাঁথি-১ ব্লকের বগুড়ান জলপাই এলাকায় বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য কমিটির সম্পাদক আমিন সোহেল। শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে ত্রাণ শিবিরে সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন বিজেপি নেতারাও। এ দিন বিধায়ক তথা সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি অরূপ দাস এবং বিজেপির জেলা কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের নেতৃত্বে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার বামুনিয়ায় একটি ত্রাণ শিবিরে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকে বিভিন্ন ত্রাণ শিবির ঘুরে দুর্গতদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন উত্তর-কাঁথির বিজেপি বিধায়ক সুমিতা সিংহ।
হলদিয়া মহকুমার নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে ২৬টি এবং নন্দীগ্রাম ২ ব্লক ৯টি আশ্রয় শিবির তৈরি করা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। বৃহস্পতিবার সকালেই নন্দীগ্রাম-১ ব্লক প্রশাসন সোনাচূড়ার গাংরা এলাকা থেকে প্রায় ১৫০ বাসিন্দাকে আশ্রয় শিবিরে স্থানান্তরিত করে। ব্লক প্রশাসনের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেলে আবহাওয়া অবনতি হওয়ায় নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ২৫০০ বাসিন্দাকে ফ্লাড সেন্টারে আনা হয়। তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও জলের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু শুক্রবার বিকেলেই তাঁদের অধিকাংশ আশ্রয় শিবির ছেড়ে স্বেচ্ছায় নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছেন।
শুক্রবার কোলাঘাটে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন,"মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ২ লক্ষ ১৬ হাজার লোককে উনি ঝড়ের আগে সরিয়েছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন কাদের সরিয়েছেন। আমি দেড় লক্ষ মানুষকে দিয়ে বলিয়ে দেব যে, তাঁরা ত্রাণ শিবিরে ছিলেন না। আয়লা সেন্টারগুলিতে শৌচাগার পর্যন্ত নেই। গতকাল ত্রাণ শিবিরগুলিতে মানুষ কোনও খাবার পাননি। আমরা দলগতভাবে ১৭টি ত্রাণ শিবির খুলেছিলাম। সেগুলির মধ্যে ১১টি ত্রাণ শিবির এখনও চলছে।’’
অন্য দিকে, সিপিএমের রেড ভলান্টিয়ার্স দলের উদ্যোগে খেজুরির পাঁচুড়িয়া, মতিলাল চকে স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পর কয়েক জনের বাড়ি ঘর ভেঙেছে। তাঁদেরও উদ্ধার করে বিভিন্ন সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যায় রেড ভলান্টিয়ার্স বাহিনী।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাসের কথায়,"বিপদে পাশে দাঁড়ানো কেন্দ্র আর রাজ্যের শাসক দলের কর্তব্য। কিন্তু দুই দলই যে ব্যর্থ, সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। লকডাউন আর করোনার মতো দানা মোকাবিলাতেও দিনরাত কাজ করে চলেছে আমাদের রেড ভলান্টিয়ার্স বাহিনী।" আর তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পীযুষ কান্তি পণ্ডার কথায়, "আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব স্তরের মানুষের পাশে প্রকৃত অর্থে থাকেন। এটা বাংলার মানুষ যে কোনও দুর্যোগের দিনে বুঝেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy