কেশপুর থেকে ডেবরা, সাংসদ তহবিলের টাকায় একাধিক উন্নয়নমূলক কাজে আলোকিত হয়েছে এলাকা। কিন্তু তারকা-সাংসদ দেবের নির্বাচনী ক্ষেত্র ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত পাঁশকুড়া বিধানসভা বরাবর বঞ্চিত বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কেন এই ‘বিমাতৃসুলভ আচরণ’ এ নিয়ে চর্চার মধ্যেই এ বার উল্টো ছবি। সাংসদ দেবের উদ্যোগে দু’টি রাস্তা পেতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুরের এই বিধানসভায় এলাকা। বিজেপির দাবি, লোকসভা ভোটের নিরিখে এখানে তৃণমূল পিছিয়ে থাকায় এ বারবাধ্য হয়ে পাঁশকুড়ার দিকে তাকাতে হচ্ছে সাংসদকে।
গত লোকসভা নির্বাচনে দেব বড় ব্যবধানে জিতলেও পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভায় ১৭৮ ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তাই ভোট-অঙ্কেই জোড়া রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন সাংসদ, এমন চর্চা চলছে। গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়ই অবশ্য খারাপ রাস্তায় একাধিকবার থমকে ছিল দেবের র্যালি। তখনই তিনি রাস্তার সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই মতো রাজ্য সরকারের কাছে দু’টি রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে দেব চিঠি দেন। তার প্রতিলিপি গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ত ও জেলাশাসকের দপ্তরে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, পূর্তের বরাদ্দ করা ২৩ কোটি টাকাতেই নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজ হচ্ছে।
গোপালনগর থেকে যশোড়া, প্রায় ২২ কিলোমিটার রাস্তা হবে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং রাতুলিয়া থেকে লছিপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে খরচ হবে চার কোটি টাকা। রাস্তা দু’টি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নথিভুক্ত হয়েছে। দু’টি রাস্তা নির্মাণের জন্যই টেন্ডার পক্ষে ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
তবে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভায় সাংসদ তহবিলের টাকায় সে ভাবে উন্নয়নের কাজ না হওয়ায় বাসিন্দাদের ক্ষোভ থেকেই গিয়েছে। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা পাঁশকুড়ার প্রাক্তন পুর-প্রতিনিধি সিন্টু সেনাপতির দাবি, ‘‘পাঁশকুড়ার মানুষ আর তৃণমূলকে চাইছে না। গত লোকসভা নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হবে বিজেপি। দেবের হস্তক্ষেপেও আর মানুষের মন পরিবর্তন হবে না। কারণ, উনি পাঁচ বছর অন্তর একবার শুধু নির্বাচনী প্রচারে এলাকায় আসেন।
বিরোধীদের এই সব কটাক্ষে অবশ্য খুব একটা আমল দিতে চাইছে না তৃণমূল। পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুজিত রায়ের বক্তব্য, ‘‘দেব কোনও দিনই নির্বাচনী মঞ্চে উঠে প্রতিশ্রুতির রাজনীতি করেননি। তবে যে যে এলাকাগুলিতে তিনি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই সব এলাকার সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। একাধিক দফতরে সাংসদের তরফে চিঠি লেখার ফলেই এই রাস্তা পাওয়া গিয়েছে। ভবিষ্যতেও পাঁশকুড়ায় একাধিক উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন তিনি। আশা করা যায় এপ্রিল মাস থেকেই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)