Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
নাড়াজোল রাজবাড়ির সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে।
Fishery

মাছ চাষের জটে ঐতিহ্যের জলহরি

সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে দু’বছরের জন্য স্থানীয় এক বাসিন্দাকে ওই জলাশয়ে মাছ চাষের অনুমতি দেয় দাসপুর-১ ব্লক প্রশাসন। যিনি বরাত পেয়েছেন, সেই সঞ্জয় মণ্ডল তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতার ছেলে। দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভুঁইয়ার ছেলে কুমারেশ ভুঁইয়ারও ঘনিষ্ঠ তিনি।

 এই পুকুর ব্যবহারের দরপত্র ডাকা নিয়েই বিতর্ক। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

এই পুকুর ব্যবহারের দরপত্র ডাকা নিয়েই বিতর্ক। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

অভিজিৎ চক্রবর্তী
দাসপুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩৮
Share: Save:

ঐতিহ্যমণ্ডিত নাড়াজোল রাজবাড়ি। রাজপরিবারের স্মৃতি বিজড়িত জলহরিও ইতিহাস প্রসিদ্ধ। পুকুর দখল ঘিরে বিতর্কে এ বার হেরিটেজ ঘোষিত সেই স্মারকও।

মূলত গ্রীষ্মকালীন আবাসস্থল হিসেবে ১৮১৯ সালে জলহরি নির্মাণ করেছিলেন নাড়াজোলের চতুর্দশ রাজা মোহনলাল খান। প্রায় সাড়ে ৬০ বিঘা জমির উপর এই নির্মাণ।‌ মূল জলাশয়ের পরিমাণ ছয় একর। আর পুকুরের মাঝে বাড়িটি প্রায় পাঁচ কাঠার উপর। খাতায় কলমে জলাশয়টি জেলা প্রশাসনের অধীনে। তবে অনেকেই এখানে মাছ চাষ করেন। সরকারি কোষাগারে রাজস্বও জমা পড়ে না।

জানা যাচ্ছে, শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতেই এতদিন চলছিল মাছ চাষ। সম্প্রতি দাসপুর-১ ব্লক প্রশাসন দরপত্র ডেকে জলহরি ব্যবহারে উদ্যোগী হয়। এরপরই জলহরিকে ঘিরে জটিলতা সামনে আসে।

অনিয়ম করে দরপত্র ডাকা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে সরব হন মাছ চাষিরা। প্রশাসনের সঙ্গে বচসাতেও জড়িয়ে পড়েন মাছ চাষিরা। চাষিদের পক্ষ নিয়ে আসরে নামে বিজেপি। শুরু হয় তৃণমূল-বিজেপির চাপানউতোর। মাছ চাষিদের বাধায় জলহরির দখল নিতে পারেনি প্রশাসন। নাড়াজোল রাজ পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত এই জলাশয় ঘিরে এমন বিতর্কে ক্ষুব্ধ স্থানীয়েরা। পরিস্থিতি বুঝে জেলা প্রশাসন জলহরি নিয়ে নতুন করে দরপত্র ডাকার তোড়জোড় শুরু করেছে। আপাতত সেখানে মাছ ধরা বন্ধও রেখেছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তুষার শ্রীংলা বলেন, “নাড়াজোলে জলহরি পুকুরে একটা সমস্যা হয়েছে। সেখানে আবার নতুন করে দরপত্র ডাকা হবে। পুরনো দরপত্র বাতিল করা হবে।”

নাড়াজোল রাজবাড়ির অন্যতম দর্শনীয় স্মারক জলহরি। এর টানে আসেন বহু মানুষ। ২০০৮ সালে ওই জলাশয় হেরিটেজ ঘোষণা করে পুরাতত্ত্ব বিভাগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজ পরিবারের হাত ছাড়া হওয়ার পরে দু’-একবার হাতবদল হয় জলহরির। আর সত্তরের দশকের গোড়া থেকে স্থানীয় অনেকে একানে মাছ চাষ করছেন। তবে কেউই কখনও রাজস্ব জমা দেননি। মাছ চাষিদের বক্তব্য, পুকুর ব্যবহারের জন্য শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের একাংশ মোটা টাকা নিতেন। এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। সম্প্রতি টাকার অঙ্ক বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। সেই থেকে গোলমালের শুরু।

সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে দু’বছরের জন্য স্থানীয় এক বাসিন্দাকে ওই জলাশয়ে মাছ চাষের অনুমতি দেয় দাসপুর-১ ব্লক প্রশাসন। যিনি বরাত পেয়েছেন, সেই সঞ্জয় মণ্ডল তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতার ছেলে। দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভুঁইয়ার ছেলে কুমারেশ ভুঁইয়ারও ঘনিষ্ঠ তিনি। সঞ্জয়ের বাবা তৃণমূলের নাড়াজোল অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক পাবর্তী মণ্ডল বলেন, “আমার ছেলে বরাত পেয়েছিল। কিন্তপ তাকে দখল দেয়নি চাষিরা।”

মাছ চাষিদের ক্ষোভ, ‘‘আমাদের উচ্ছেদ করতে রাতারাতি দরপত্র ডেকে অন্যকে চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা তাই বাধা দিয়েছি।” তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা চাই দরপত্র ডাকা হোক। তবে নিয়ম মেনে হোক। সেখানে আমরাও অংশ নেব। আমাদের কাছ থেকে কেড়ে চুপিসারে দরপত্র ডেকে নেতার ছেলেকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানেই আপত্তি।’’

মাছ চাষিদের সমর্থনে বিজেপির ঘাটাল সাংগাঠনিক রাজু আড়ি বলেন, “যাঁরা দীর্ঘদিন চাষ করছেন, তাঁদের অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়া হল না। আসলে রাজস্ব আদায় লক্ষ্য ছিল না। রাজপরিবারের অন্য সম্পত্তিগুলোর মতো জলহরিও দখল করে নিতে চাইছিল তৃণমূল।”

তৃণমূল নেতা তথা দাসপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুনীল ভৌমিক অবশ্য বলেন, “যা হয়েছে নিয়ম মেনেই হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির নোটিস বোর্ডে দরপত্র টাঙানো হয়েছিল। সেখানে অনেকেই অংশ নিয়েছিলেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Fishery Heritage Daspur Speculation TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy