ফাঁকা খড়্গপুর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দোকানি। নিজস্ব চিত্র।
কুড়মি আন্দোলন অব্যাহত। টানা চারদিন ধরে অবরুদ্ধ কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়ক। ৬০ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলেও অবরোধের জেরে রাজ্যের সঙ্গে মুম্বই রুটের সরাসরি রেল যোগাযোগের কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ঘুরপথে চান্ডিল হয়ে মুম্বই রুটে চলাচল করছিল ট্রেন। ফলে যাত্রী দুর্ভোগের সঙ্গে বাড়ছে রেলের ক্ষতি। তবে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখে শুক্রবার রেল অন্য সিদ্ধান্ত নিল। আর ঘুরপথে নয়, মুম্বই রুটের সমস্ত ট্রেন বাতিল করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল!
গত বুধবার থেকে খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে ‘রেল টেকা, ডহর ছেঁকা’ শুরু করেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। এর জেরে কলাকাতা-মুম্বই ৬নম্বর জাতীয় সড়কের পাশাপাশি অবরুদ্ধ হয়েছে টাটানগর, বিলাসপুর, মুম্বাইয়ের মূল রেলপথ। এ ছাড়াও কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের ডাকে ‘ঘাঘর ঘেরা’ কর্মসূচিতে গত মঙ্গলবার থেকে এই খেমাশুলিতেই অবরুদ্ধ হয়েছে ৬নম্বর জাতীয় সড়ক। তবে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হলেও একাধিক ঘুরপথে চলাচল করছে যানবাহন। তবে সবচেয়ে প্রভাব পড়েছে রেলপথে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের হাওড়া, শালিমার অথবা খড়্গপুর থেকে টাটানগর, বিলাসপুর, মুম্বাইগামী সরাসরি ট্রেন বাতিল হয়। তবে বেশকিছু ট্রেন ঘুরপথে চান্ডিল হয়ে যাতায়াত করছিল। যদিও ওই রুটেও কোটশিলায় অবরোধের ডাক দিয়েছে কুড়মিরা। এমন পরিস্থিতিতে টাটানগর, বিলাসপুর, মুম্বই রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। খড়্গপুর রেলের সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজেশ কুমার বলেন, “আমরা কার্যত বাধ্য হয়েই টাটানগর, বিলাসপুর, মুম্বইরুটের সমস্ত ট্রেন বাতিল করলাম।”
এখনও রাজ্যের তরফে জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে কুড়মিদের আলোচনায় ইতিবাচক ইঙ্গিত মেলেনি। বরং তফসিলি জনজাতি তালিকাভুক্তির যে দাবি কুড়মিরা জানিয়েছেন, তার জন্য পরিমার্জিত রিপোর্ট রাজ্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রে পাঠানো না হলে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। চড়া রোদে চলছে অবরোধ কর্মসূচি। রাত হলেই বাড়ছে উত্তেজনা। বিভিন্ন সময় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠছে।
পুরুলিয়ার ঝালদা থেকে সাইকেলে কলকাতা সিআরআই কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেওয়া কুড়মিদের সাইকেল মিছিলটি এ দিন দুপুরে ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি এলাকায় পৌঁছয়। ওই সময় সাইকেল আরোহী এক আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সময়মত চিকিৎসা পরিষেবা না মেলার অভিযোগ তুলে জামবনি মোড়ে আধঘন্টা পথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে অবশ্য শ্রীদাম মাহাতো নামে ওই তরুণকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতা রাজেশ মাহাতো বলেন, “আমাদের দাবি পূরণ না হলে কোনওভাবেই অবরোধ তোলা হবে না। বরং আমরা এ বার জঙ্গলমহল স্তব্ধ করার দিকে এগোচ্ছি। মানুষের অসুবিধা হচ্ছে ঠিক কথা। আমাদের দাবি পূরণ হলে সাধারণ মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।” আর আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “রাজ্য উদাসীন। আমাদের উপেক্ষা করছে। মানুষের যে দুর্ভোগ হচ্ছে তার জন্য দায়ী কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy