Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের উড়ান 

মনে জোর রয়েছে। যে জোরের জেরেই এই পথটুকু পেরোতে পেরেছে তারা। স্বপ্নের উড়ানে সওয়ারি হতে চাইছে এই কৃতী পড়ুয়ারা। স্বপ্ন যে অনেক বড়। আর আশা, চলার পথে কখনও অসুবিধায় পড়লে নিশ্চয়ই কোনও সহৃদয়ের হাত এগিয়ে আসবে। যে হাতে হাত রেখে আরও অনেকটা পথ পেরোনো যাবে। 

আরজাউর মণ্ডল, সুব্রত সাহু, পিঙ্কি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

আরজাউর মণ্ডল, সুব্রত সাহু, পিঙ্কি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০৩:৩৫
Share: Save:

বাধা ছিল প্রতি পদে। তার মধ্যেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে ওরা। ওরা মানে পিঙ্কি মাহাতো, সুব্রত সাহু, আরজাউর মণ্ডলরা। অভাবকে হারিয়ে ভাল নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে সকলে। কারও চোখে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন। কেউ বা শিক্ষক হতে চায়।

মেদিনীপুর গ্রামীণের চুয়াডাঙা হাইস্কুলের ছাত্র আরজাউর মণ্ডল মাধ্যমিকে ৬০৬ নম্বর পেয়েছে। বাড়ি ছেড়ুয়ায়। যে গ্রামের অনেকে বারুদের কারবার করেন। ‘বোমা’ বাঁধেন। কারবারিদের অবশ্য দাবি, তাঁরা ‘বোমা’ তৈরি করেন না। আতসবাজি তৈরি করেন। সেই গ্রামের ছেলেই মাধ্যমিকে ভাল ফল করায় খুশি সকলেই। আরজাউরের বাবা হাবিব মণ্ডল অ্যাসবেস্টসের মিস্ত্রী। মা হামিদা বিবি গৃহবধূ। কোনও রকমে সংসার চলে। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে আরজাউর। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। অনটনের সংসারে বাবা-মা চিন্তিত ছেলের পড়াশোনা নিয়ে। আরজাউর বলছিল, “প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও মাধ্যমিকে ভাল করার সব রকম চেষ্টা করেছি। আমাকে পড়াতে বাবা- মাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। স্কুল সব সময় পাশে থেকেছে।” চুয়াডাঙা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু সিংহ বলেন, “আমরা ওকে সহ রকম সহযোগিতা করব।”

মাধ্যমিকে ৬৪৭ নম্বর পেয়েছে মেদিনীপুর টাউন স্কুলের ছাত্র সুব্রত সাহু। বাবা সমীরবরণ সাহু বছর ছয়েক আগে এক পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। কাপড়ের দোকান ছিল তাঁর। এখন সেই দোকান চালান মা শম্পা সাউ। বাড়ি বাঁকুড়ার বারিকুলে। মেদিনীপুরে পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে সুব্রত। ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সুব্রত। তার কথায়, “পরে আইআইটিতে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।”

বাড়িতে অভাব রয়েছে। তাতে কী? সাধারণ বাড়ি থেকে উঠে আসা এই ছেলের স্বপ্ন যে অনেক বড়। ছেলের মার্কশিট দেখে এ দিন চোখে জল চলে এসেছিল শম্পাদেবীর। শালবনির মৌপাল হাইস্কুলের ছাত্রী পিঙ্কি মাহাতো মাধ্যমিকে ৫৮৮ নম্বর পেয়েছে। বাবা সুবোধ মাহাতো চাষবাস করেন। সামান্য জমি রয়েছে। মা কবিতা মাহাতো গৃহবধূ। শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে পিঙ্কির। তাঁর কথায়, “আমি শিক্ষিকা হতে চাই।” মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়ার কথায়, “ও মেধাবী ছাত্রী। দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও নিজের ইচ্ছেতে এই ফল করেছে। আগামী দিনেও আমরা ওর পাশে থাকব।”

মনে জোর রয়েছে। যে জোরের জেরেই এই পথটুকু পেরোতে পেরেছে তারা। স্বপ্নের উড়ানে সওয়ারি হতে চাইছে এই কৃতী পড়ুয়ারা। স্বপ্ন যে অনেক বড়। আর আশা, চলার পথে কখনও অসুবিধায় পড়লে নিশ্চয়ই কোনও সহৃদয়ের হাত এগিয়ে আসবে। যে হাতে হাত রেখে আরও অনেকটা পথ পেরোনো যাবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy