Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Goaltore

বিদ্যুৎ প্রকল্প শিল্পতালুকের জমিতে, বাড়ছে হতাশা

সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে খুব বেশি কর্মসংস্থান হবে না। যে সব কর্মী বা শ্রমিক প্রকল্পের কাজে লাগবেন তাঁদের বেশিরভাগই সংস্থার দ্বারা প্রশিক্ষিত। এতেই হতাশ হচ্ছেন স্থানীয় বেকার যুবকেরা।

গোয়ালতোড়ের দুর্গাবাঁধে প্রস্তাবিত শিল্পতালুকে গড়ে উঠছে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। (

গোয়ালতোড়ের দুর্গাবাঁধে প্রস্তাবিত শিল্পতালুকে গড়ে উঠছে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। ( —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩১
Share: Save:

শিল্প নেই। শিল্পতালুকে হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। আশাহত গোয়ালতোড়ের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা।

গোয়ালতোড় (গড়বেতা ২) ব্লকের জিরাপাড়া অঞ্চলের দুর্গাবাঁধে সরকারি বীজখামারে শিল্প গড়ে তুলতে বছর দশেক আগেই উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। বীজখামারের ৯৫০ একর সরকারি জমিতে ভারী শিল্প গড়তে শিল্পদ্যোগীদের আহ্বানও করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের আধিকারিকদের নিয়ে জমি পরিদর্শন করেছিলেন। ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়ালতোড়ের ওই জমিতে শিল্পতালুক গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেন। কয়েকজন শিল্পপতি জমিও দেখে যান। শিল্পের আশায় বুক বেঁধেছিলেন এলাকার বেকার যুবকেরা।

তারপর কয়েকবছর পেরিয়ে গিয়েছে। শিল্প সম্ভাবনায় রাস্তা হয়েছে প্রশস্ত, মসৃণ। জমি ঘেরা হয়েছে নীল সাদা রঙের প্রাচীর দিয়ে। কিন্তু যার জন্য এতকিছু, সেই শিল্পই গড়ে ওঠেনি গোয়ালতোড়ের শিল্পতালুকে। সময়ের সঙ্গে বদলেছে জমির মালিকানা। বীজখামারের জমি নিয়েছিল রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। তাদের থেকে জমি নেয় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। এখন তো এক জার্মান সংস্থা রাজ্য সরকারের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষর করে শিল্পতালুকের জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলছে। প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে বিদেশি সংস্থাটি। পরে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সূত্রের খবর, পুরো প্রকল্প শেষ হলে সেটি হবে পূর্ব ভারতের অন্যতম বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প।

জেলাপরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ তথা গোয়ালতোড়ের চন্দন সাহা বলেন, ‘‘দুর্গাবাঁধে প্রস্তাবিত শিল্পতালুকের জমিতে একটি বিদেশি সংস্থা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলছে। সেখানে ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্প হবে বলে ঠিক আছে। ১২৫ মেগাওয়াট দিয়ে শুরু করেছে তারা। পরে বাড়বে। এই প্রকল্প রূপায়িত হলে প্রভূত উপকার হবে।’’

যদিও সূত্র বলছে, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে খুব বেশি কর্মসংস্থান হবে না। যে সব কর্মী বা শ্রমিক প্রকল্পের কাজে লাগবেন তাঁদের বেশিরভাগই সংস্থার দ্বারা প্রশিক্ষিত। এতেই হতাশ হচ্ছেন স্থানীয় বেকার যুবকেরা। শিল্প হলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে প্রচুর কাজের সুযোগ আসত গোয়ালতোড়ের শিক্ষিত বেকারদের। শিল্পের বদলে সৌরবিদ্যুতে কার্যত আশাহত তাঁরা। শিল্পতালুক এলাকার কয়েকজন যুবক বলেন, ‘‘শিল্পই যদি না আসে, তা হলে জাঁকজমক করে শিল্প সম্মেলন করে কী হবে!’’

এখানে ভারী শিল্প হলে বহুমুখী প্রকল্পে কাজের জন্য ২০২১ সালে গোয়ালতোড়ের ২৪ জন শিক্ষিত বেকারকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা সেইসব বেকাররা ডুবেছেন হতাশায়। তাঁরা স্বপ্ন ছেড়ে রোজগারের জন্য অন্যত্র কাজ শুরু করেছেন। যেমন শুভঙ্কর দাস গৃহশিক্ষকতা করেন। চাষের কাজ করছেন সৌমেন দুলে, মিলন দে -রা। তাঁরা বলছেন, ‘‘আশায় ছিলাম শিল্পতালুকে শিল্প হলে আমাদের মতো শিক্ষিত বেকারদের কিছু কর্মসংস্থান হবে। প্রশিক্ষণও নিয়েছি, কিন্তু শিল্পই তো হচ্ছে না। বয়সও পেরিয়ে যাচ্ছে, হতাশ হয়ে পড়ছি।’’

যদিও এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে জানাচ্ছেন মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘গোয়ালতোড়ে শিল্পতালুকের জমিতে বড় রকমের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে, অনেক কর্মসংস্থান হবে। রাজ্যে শিল্প সম্ভাবনার নবদিগন্ত খুলে দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলন হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টায় কর্মসংস্থান উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Goaltore Solar Power Project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy