দাদনপাত্রে বাড়ে এখানেই প্রকল্প গড়ে ওঠার কথা। নিজস্ব চিত্র
তিন দশক বাদে লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু মন্দারমণিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু হওয়ার আগে জীবিকা আর ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার মন্দারমণি সংলগ্ন দাদনপাত্রবাড় এলাকার বাসিন্দাদের ওই আশঙ্কা দূর করতে প্রশাসনের তরফে আলোচনা হল।
রামনগর-২ ব্লকের দাদনপাত্রবাড়ে ‘বেঙ্গল সল্ট’-এর পরিত্যক্ত জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। জার্মানির আর্থিক সংস্থা কেএফডবলু এই প্রকল্পে লগ্নি করবে বলে দিঘায় সাম্প্রতিক শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জার্মানির ওই সংস্থাকে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলতে সহায়তা করবে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। চলতি মাসে দলীয় কর্মসূচিতে এগরায় এসে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উপকূল বিধি মেনে কিছুটা কম জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে এই প্রকল্পের জন্য। গড়ে তোলা হবে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তিনি আরও জানান, এটিই হবে রাজ্যের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এরপরই এলাকায় গিয়ে প্রাথমিক ভাবে জমি পরিদর্শন করে বিনিয়োগকারী জার্মানির ওই সংস্থা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ঠিক হয়েছে প্রকল্পের জন্য রানিয়া, উত্তর কালিন্দী, মানিয়া এবং পুরুষোত্তমপুর গ্রামের ৫৬২ একর জমি নেবে ওই সংস্থা। এই ঘোষণার পর থেকেই জীবিকা এবং বাসস্থান হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মৎস্যজীবী এবং বাসিন্দাদের মধ্যে। রানিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প খুবই ভাল উদ্যোগ। কিন্তু এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠলে আমাদের মাছ চাষ বন্ধ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে।’’
উল্লেখ্য, ১৯৩৪ সালে বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের হাত ধরে এখানে গড়ে উঠেছিল লবণ কারখানা ‘বেঙ্গল সল্ট’। ছোট বড় ৫০টি লবণ কারখানা ছিল। ১৯৯২ সালে সবকটি লবণ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কর্মহীন হয়ে পড়েন কর্মীরা। বাম জমানায় বেশ কিছু এলাকায় ভেড়ি তৈরি করে মাছ চাষৈ শুরু হয়। ক্ষমতায় আসার পর ওই এলাকায় বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল সরকার। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। গত বছর ডিসেম্বর মাসে জার্মানির একটি ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান এখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়।
এদিন সংশ্লিষ্ট এলাকার মৎস্যজীবীদের নিয়ে আলোচনা করেন বিনিয়োগকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। সেখানে হাজির ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও এবং মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব। জার্মান বিনিয়োগকারী সংস্থার তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্কপ্রভ মাইতি বলেন, ‘‘প্রকল্পের কারণে মৎস্যজীবীদের জমি হারানোর কোনও আশঙ্কা নেই। ইতিমধ্যে মানচিত্র সহ তাঁদের অনেকটাই বোঝাতে সমর্থ হয়েছি। যে সব মৎস্যজীবী এবং লবণ কারখানা শ্রমিক এই প্রকল্প গড়ে উঠলে কাজ হারাবেন, তাঁদের জন্য আলোচনা সাপেক্ষে বিকল্প কাজের সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।’’
এ দিকে মৎস্যজীবী এবং লবণ কারখানা শ্রমিকদের মধ্যে জীবিকা ও বসতভিটে হারানো নিয়ে ধোঁয়াশা দূর করতে ২১ জনের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। প্রসাসন সূত্রে খবর, এই কমিটিই প্রকল্পের জন্য জমি চিহ্নিতকরণ এবং আনুষঙ্গিক কাজে প্রশাসন ও বিনিয়োগ কারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy