চলছে বোমাবাজি।
জল নিকাশির নালা কাটা ঘিরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ভগবানপুর ১ ব্লকের লালপুর এবং বেতুলিয়াচক গ্রাম। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার ভোররাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলল বোমাবাজি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্তিতি সামাল দিলেও ফের ভোররাতে বোমাবাজি হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, বোমায় দুই গোষ্ঠীরই একাধিক লোকজন জখম হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বেঁউদিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের লালপুর এবং বেতুলিয়াচক পাশাপাশি দু’টি গ্রাম। এগরা-বাজকুল রাজ্য সড়কের ধার ঘেঁষে থাকা নিকাশি নালা দিয়ে ওই দুই গ্রামের বৃষ্টির অতিরিক্ত জল মাঠে বের হয়। অভিযোগ, কয়েক মাস আগে ওই নিকাশি নালায় বেতুলিয়াচক গ্রামের কিছু মানুষ ঘর তৈরির জন্য মাটি ফেলে কিছুটা অংশ ভরাট করে। নিকাশি নালা ভরাটের জন্য বৃষ্টির জমা জল বেরোতে না পারায় লালপুর গ্রামের বেশ কিছু এলাকায়, ঘরে জল জমে যায়। যা নিয়ে আপত্তি জানান ওই গ্রামের বাসিন্দারা। নিকাশ খাল মাটি ফেলে বোজানোর কারণেই এই সমস্যা হওয়ায় অবিলম্বে ওই মাটি কেটে সরানোর দাবি তোলেন লালপুরের বাসিন্দারা। যা নিয়ে বেতুলিয়াচক গ্রামের তৃণমূল নেতা আজিমুল হোসেনের সঙ্গে বিরোধ বাধে ভগবানপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হারুন রশিদের। গত মাসে লালপুর গ্রামের বাসিন্দারা জল নিকাশির দাবিতে রাস্তা অবরোধও করেন। কিন্তু তারপরেও নিকাশি সমস্যা নিয়ে ভগবানপুর-১ ব্লক অফিসে দুই গ্রামের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় কোনও সমাধান হয়নি।
মঙ্গলবার ওই জল নিকাশির নালা থেকে মাটি কাটতে যান লালপুর গ্রামের কয়েকজন গ্রামবাসী। অভিযোগ সেই সময় আজিমুলের লোকজন তাঁদের বাধা দেয়। তাঁদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ভাবে ইট-পাথর ছোড়ে। তার জেরে সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ থাকে। পরে রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত ফের দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বোমাবাজি শুরু হয়। বোমার আঘাতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর তিন জন জখম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাদের স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় ভাগবানপুর থানার পুলিশ। নামে র্যাফ। রাতভর চলে পুলিশি টহলদারি।
ঘটনায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীই একে অন্যের উপর দায় চাপিয়েছে। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। এলাকায় টহলদারি চললেও কোনও বোমা উদ্ধার হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
আজিমুল হোসেনের অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় কিছু লোক আমাদের লক্ষ্য করে প্রথমে বোমাবাজি শুরু করে। আত্মরক্ষায় আমরা বাড়িতে আশ্রয় নিই। তবে বোমাবাজির সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নয়।’’ আর এক গোষ্ঠীর নেতা হারুনের পাল্টা দাবি, ‘‘আজিমুলের লোকেরা আমাদের লোকদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি শুরু করে। গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গোলমালের ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নয়।’’
নিকাশির সমস্যা নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষ নিয়ে বেঁউদিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মায়ারানি চন্দ্র বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধানে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক বার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এক পক্ষ সিদ্ধান্ত না মানায় সমস্যা থেকে গিয়েছে।’’ ভগবানপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মদনমোহন পাত্র সংঘর্ষের কথা স্বীকার করলেও তাঁর দাবি, ‘‘ঘটনাটা একেবারেই গ্রাম্য বিবাদ। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।’’ ভগবানপুর-১ ব্লকের দক্ষিণ মণ্ডলের বিজেপি সভাপতি দেবব্রত কর বলেন, ‘‘এলাকার দখল নিয়ে পুলিশের সামনেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী বোমাবাজি করলেও পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার পর্যন্ত করেনি। পুলিশ যে শাসক দলের অঙ্গুলি হেলনে চলছে এটা তারই প্রমাণ।’’
ভগবানপুর থানার পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বোমাবাজির ঘটনায় এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy