পুরপ্রধানকে লেখা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের চিঠি (বাঁ দিকে)। অচল সিসি ক্যামেরা। ঝাড়গ্রাম শহরের কলেজ মোড়ে। নিজস্ব চিত্র
কার্যত সিসি ক্যামেরায় মোড়া অরণ্যশহরের প্রতিটি প্রান্ত। অথচ একটি সিসি ক্যামেরাও চালু নেই। ফলে শহরে কোনও অপরাধের ঘটনা ঘটলে অপরাধীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশের প্রাথমিক উপায়ের পথই বন্ধ!
২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে জেলাশহর ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন রাস্তায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার কেবল সংযোগের মাধ্যমে ১১২টি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল পুরসভা। ঝাড়গ্রামের এসডিপিও’র অফিসের কন্ট্রোল-রুম থেকে ক্যামেরাগুলির লাইভ ফুটেজ মনিটারিংয়ের কাজ হত। এর মধ্যে কয়েকটি ক্যামেরা চুরিও গিয়েছে। বাকি সব ক’টিই দীর্ঘদিন ধরে অচল। আড়াই মাস আগে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানোও হয়েছিল। অভিযোগ, তারপরও সিসি ক্যামেরাগুলি চালু করার উদ্যোগ করেনি পুরসভা। মঙ্গলবার শহরের বাছুরডোবার টাউন হল এলাকায় ডাকাতির ঘটনার পরে অবশ্য হুঁশ ফিরেছে পুরসভার। তবে সেখানেও সমস্যা। জানা যাচ্ছে, সিসি ক্যামেরার বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার বকেয়া বিল মেটায়নি পুরসভা। ফলে সিসি ক্যামেরাগুলি সারানোর জন্য সংস্থাটিকে নতুন করে ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ও দেওয়া হয়নি।
সূত্রের খবর, ক্যামেরাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেসরকারি সংস্থাটির সঙ্গে পুরসভার ‘এএমসি’ (অ্যানুয়াল মেন্টেন্যান্স কনট্রাক্ট) করার কথা। কিন্তু পুরসভার তরফে ওই সংস্থার সঙ্গে বার্ষিক চুক্তি করা হয়নি। পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য সাফাই, ‘ডি’ ক্যাটাগরির পুরসভার আর্থিক ক্ষমতা সীমিত। তাই ‘এএমসি’ করা সম্ভব হয়নি। যদিও পুলিশের বক্তব্য, ঝাড়গ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শহর, জেলা সদরও বটে। সেই কারণে বাইরের লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। সীমানাবর্তী ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার লোকজনও নানা প্রয়োজনে অরণ্যশহরে আসেন। শহরের কয়েকটি মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকে। বিশেষ ক্ষেত্রে শহরে ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তাগুলিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের বক্তব্য, শহরের সমস্ত রাস্তায় সিভিক বা পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তার স্বার্থে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে সিসি ক্যামেরার নজরদারি প্রয়োজন। বিশেষত, অপরাধীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরা বড় ভরসা।
সূত্রের খবর, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পুরভোটের সময়ে শহরের সব ক’টি সিসি ক্যামেরা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের নির্দেশে ওই সময়ে ভোটের স্বার্থে তড়িঘড়ি ১১২টির মধ্যে ১০১টি ক্যামেরা সারানো গিয়েছিল। সেই কাজের জন্য সংস্থাটির দু’লক্ষ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। প্রায় ন’কিলোমিটার কেবল চুরি যাওয়ায় ও বাজ পড়ার কারণে ফের ক্যামেরাগুলি অচল হয়ে গিয়েছে। গত ২৫ জুন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) চিঠি দিয়ে পুরপ্রধানকে জানান, ১১২টি সিসি ক্যামেরা দীর্ঘদিন ধরে অচল। চিঠিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্মরণ করিয়ে দেন, সন্দেভাজন গতিবিধি ও অপরাধ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারপরও পুরসভা সক্রিয় না হওয়ায় মৌখিক ভাবেও পুলিশের তরফে বিষয়টি পুর-কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলছেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে সিসি ক্যামেরাগুলি অচল। গত জুন মাসে পুরসভাকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’
এই প্রসঙ্গে পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরাগুলি সারানোর জন্য উদ্যোগ করা হচ্ছে।’’ পুরপ্রধান জানাচ্ছেন, পুরসভার সীমিত আর্থিক ক্ষমতা। তাই সারা বছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy