E-Paper

বুদ্ধের ‘সফল’ শিল্পতালুকে ফাঁকা জমি

খড়্গপুরে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বুদ্ধবাবুর সরকার। ২০০৬ থেকে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম জমি অধিগ্রহণ শুরু করে।

খড়গপুরে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক।

খড়গপুরে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক। ফাইল চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ০৪:২২
Share
Save

তাঁর শিল্প-স্বপ্নে ব্যর্থতার ফলক সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম। রাজ্যের শিল্প মানচিত্রে খড়্গপুরকে জুড়ে দিতে অবশ্য সফল হয়েছিলেন বাম জমানার শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য জেলায় প্রায় সাড়ে এগারোশো একর জমিতে তাঁর শাসনকালেই গড়ে উঠেছিল রাজ্যের শিল্পায়নের অন্যতম ঠিকানা— বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক।

নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরে জোর ধাক্কার পরে বুদ্ধদেব খড়্গপুরের এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক গড়েছিলেন। সেখানে এসেছিল টাটা হিতাচি-সহ বেশ কয়েকটি শিল্পসংস্থা। কর্মসংস্থান বাড়ছিল। তবে সেই প্রক্রিয়া চলাকালীনই রাজ্যে বাম জমানার অবসান হয়। তৃণমূল আমলে কয়েকটি প্রস্তাবিত কারখানা চালু হলেও অধিকাংশ জমি এখনও ফাঁকাই থেকে গিয়েছে। ফাঁকা জমিতে গত কয়েক বছরে গড়ে তোলা হয়েছে স্টেডিয়াম, বিশিষ্টদের থাকার সরকারি কটেজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য সম্মেলনে বারবার এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে শিল্প আনার চেষ্টা করেছেন। তবে ফাঁকা জমিতে নতুন করে শিল্পায়ন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে স্থানীয় জমিদাতাদের। সুর চড়িয়েছেন বাম নেতারাও।

২০০৪ সাল। খড়্গপুরে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বুদ্ধবাবুর সরকার। ২০০৬ থেকে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম জমি অধিগ্রহণ শুরু করে। খড়্গপুর শহরের উত্তর-পূর্ব কোণে জফলা, রুইসন্ডা, রূপনারায়ণপুর, বড়ডিহা, চকগণেশ, জিহারপুরে মোট ১১৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রতি একরে ১০ লক্ষ টাকায় স্থানীয় চাষিদের থেকে নেওয়া হয়েছিল জমি। প্রতিশ্রুতি ছিল, পরিবার পিছু একজনের চাকরি হবে। আসে টেলকন (টাটা হিতাচি), হার্ডরক, গণপতি অটো, ট্রাক্টর ইন্ডিয়া লিমিটেড, বিআরজি, একরোপল্লি-সহ বহু শিল্পসংস্থা।

তবে এখনও ফাঁকা থেকে গিয়েছে প্রায় ৭০০ একরের বেশি জমি। এই শিল্পতালুকের সবচেয়ে বড় শিল্পসংস্থা টাটা হিতাচির কর্মী বিজন ভট্টাচার্য বলেন, “বাম আমলের একেবারে শেষবেলায় টাটা হিতাচিতে চাকরি পেয়েছিলাম। শুধু আমার মতো জমিদাতা পরিবারের যুবক নয়, সার্বিকভাবে বেকাররা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কর্মকাণ্ডের সুফল পেয়েছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আরও কয়েক বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকলে হয়তো এই শিল্পতালুকে জমি ফাঁকা পড়ে থাকার দৃশ্য দেখতে হত না।”

বাম শ্রমিক নেতারাও বলছেন শিল্পায়ন নিয়ে মমতার সরকারের ভূমিকার কথা। আইটাকের জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ— এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে খড়্গপুর বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক গড়ে টাটা হিটাচির মতো সংস্থাকে এনেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এখানেও অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হয়েছিল। তবে আমাদের প্রচেষ্টায় জমিদাতারা শিল্পের গুরুত্ব বুঝেছিলেন। বুদ্ধদা আরও কয়েকবছর মুখ্যমন্ত্রী থাকলে সব জমিদাতার স্বপ্ন বাস্তব হত। শিল্পের জমি ফাঁকা থাকত না।’’ আক্ষেপের সঙ্গে সিটুর জেলা সম্পাদক গোপাল প্রামাণিক বলেন, “কৃষির সঙ্গে বেকারদের কর্মসংস্থানে শিল্পের গুরুত্ব কতখানি তা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বুঝিয়েছিলেন। যারা সে দিন বুঝতে চায়নি তাঁদের কাছে খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক একটা উদাহরণ। বাম আমলে বহু জমিদাতা পরিবারের পাশাপাশি সার্বিকভাবে বেকাররা এই শিল্পতালুকের সুফল পেয়েছিলেন। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ফাঁকা জমিতে শিল্প নয়, পার্ক হচ্ছে, স্টেডিয়াম হচ্ছে, বিশিষ্টদের থাকার কটেজ হচ্ছে!”

পরিস্থিতি বুঝছেন তৃণমূলের শ্রমিক নেতারাও। তবে আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি গোপাল খাটুয়া বলেন, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্প মানসিকতা প্রশংসনীয়। তাঁর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে আমাদের খড়্গপুরে যে শিল্পতালুক গড়ে উঠেছিল তার সুফল অবশ্যই জমিদাতা পরিবার-সহ বেকার যুবকরা পেয়েছে। তবে পরবর্তীকালে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়কালেও এই শিল্পতালুকে আরও শিল্পসংস্থা এসেছে, কর্মসংস্থান হয়েছে। দিদি ক্রমাগত চেষ্টা চালাচ্ছেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Buddhadeb Bhattacharjee Death Kharagpur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।