—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বেতন কম, তাই সংসার টানতে পড়াতে হয়, বিডিওর সামনে অকপট প্রাথমিক শিক্ষক।
গড়বেতা ২ (গোয়ালতোড়) ব্লকের পিংবনি অঞ্চলের দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোমবার হঠাৎ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিডিও দেবঋষি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু দে ও শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কঙ্কন মুখোপাধ্যায়। বিডিও দেখেন দু’টি স্কুল খোলা। কিন্তু বন্ধ মিড ডে মিল। একটি স্কুলের এক শিক্ষক নিজের বাড়িতে ছাত্রদের পড়ান বলে অভিযোগ পান বিডিও। ওই স্কুলেই অভিযুক্ত শিক্ষককে সামনে পেয়ে বিডিও জানতে চান, কেন তিনি সরকারি নিয়ম ভেঙে বাড়িতে স্কুলের ছাত্রদের পড়াচ্ছেন? সূত্রের খবর, উত্তরে ওই প্রাথমিক শিক্ষক না কি জানান, বেতন কম বলেই তিনি সংসার টানতে ‘টিউশনি’ করান। যা শুনে থ বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ। স্কুলে মিড ডে মিল না হওয়া ও অবৈধ ভাবে ‘টিউশনি’র অভিযোগে ওই শিক্ষককে শো-কজ় করা হচ্ছে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। মিড ডে মিল না হওয়া অন্য স্কুলকেও শো-কজ় করা হবে।
অভিযোগ, ওই প্রাথমিক শিক্ষক গোয়ালতোড়ে নিজের বাড়িতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ান। রাজ্য সরকার আগেই স্কুল শিক্ষকদের ‘প্রাইভেট টিউশন’ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে নজরদারি বাড়াতেও বলা হয়েছে। গোয়ালতোড়ের ওই প্রাথমিক শিক্ষক বিডিওর সামনে অকপটে স্বীকার করেন ‘টিউশনি’র কথা। সূত্রের খবর, অভিযুক্ত শিক্ষক বিডিওকে জানান, চাকরি পাওয়ার আগে থেকেই পড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাই তাঁকে এ কাজ করতে হয় বলে সাফাই দেন ওই শিক্ষক। পাশাপাশি এটাকে নাকি তিনি তাঁর সমাজসেবামূলক কাজ বলেও উল্লেখ করেন। কেন সরকারি নিয়মভঙ্গ করে পড়ান? বিডিওর প্রশ্নের উত্তরে ওই শিক্ষক নাকি জানিয়েছেন, সরকার যদি তাঁদের বেতনটা ঠিকঠাক দিত তা হলে একটা চাকরির উপরেই ‘ফোকাস’ করতেন। সে ক্ষেত্রে আর ‘ওভারটাইম’ করতে হত না। এরপরই বিডিও ওই শিক্ষককে ‘টিউশনি’ বন্ধ করতে বলেন।
মঙ্গলবার সকালে ফোনে ওই শিক্ষক বলেন, "বিডিও স্যার এসে আমাকে টিউশনি বন্ধ করতে বলেছেন। বলেছি ছেড়ে দেব।" বিডিও বলেন, "দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেছি মিড ডে মিল বন্ধ, এসআই-কে বলেছি বিষয়টি দেখতে। একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে টিউশনি বন্ধ করতে বলেছি।" গড়বেতা পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরিন্দম কাঁড়ার বলেন, "বেতন কম বলে টিউশনি করতে হবে এটা ঠিক নয়। ওই শিক্ষককে বুঝিয়ে বলা হয়েছে, টিউশনি বন্ধ করতে। তবুও ওই শিক্ষককে এবং মিড ডে মিল না হওয়ার জন্য দু’টি স্কুলকে শো-কজ় করছি।"
তৃণমূল প্রভাবিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সহ সভাপতি শান্তনু দে বলেন, "সব শিক্ষকেরই উচিত শিক্ষা দফতর তথা সরকারি নিয়ম মেনে চলা। এখন রাজ্য সরকার শিক্ষকদের পাশে আছে। তা বলে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গ বরদাস্ত করা হবে না।" গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আহ্বায়ক অমর ঘোষ বলেন, "স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছি। যার জেরে রাজ্য সরকার এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গোয়ালতোড়ের ওই শিক্ষকের অবৈধ ভাবে করা টিউশনি অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy