সেকাল-একাল: মাওবাদী পর্বে ধরমপুরে বক্তা ছত্রধর মাহাতো (বাঁ দিকে), বুধবার লালগড় বাজারে ফের শুরু তাঁর জনসংযোগ। ফাইল চিত্র ও নিজস্ব চিত্র
ঘুরে ফিরে সেই একই কথা।
কেউ বললেন, ‘‘কী ব্যাপার! রাজনীতিতে আসছ নাকি!’’ কেউ আবার এগিয়ে গেলেন আরেক ধাপ, ‘‘শুনলাম নাকি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন!’’
বুধবার সকাল। ঘটনাস্থল লালগড় বাজার। যাঁকে দেখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লোকজন সেই একই কথা জিজ্ঞেস করলেন, তিনি ছত্রধর মাহাতো। এক সময়ের জনসাধারণের কমিটির মুখপাত্র। বুধবার যিনি সাইকেল করে হাজির হয়েছিলেন বাজারে। অন্য দু’টি সাইকেলে তাঁর কাছাকাছি দেখা গিয়েছে দু’জন নিরাপত্তা রক্ষীকেও। এ দিন লালগড়ে ছিল সাপ্তাহিক হাট। তাই সকালে বাজারে ভালই লোকজন ছিলেন। হাট থেকে গাজর, মটরশুঁটি, পালংশাক কেনেন ছত্রধর। মাংসের দোকানি ডাকাডাকি করতে ছত্রধর জানালেন, আজ নয়। শালবনির ঢেঙাশোল থেকে দিদি-জামাইবাবু বাড়িতে এসেছেন। তাঁরা নিরামিষাশী।
বাজারের এসআই চকে এসে পরিচিতজনের সঙ্গে খোস গল্প জুড়তে দেখা গিয়েছে ছত্রধরকে। সেলুনে চুল কাটিয়েছেন। কলপ করিয়েছেন। দোকান থেকে কিনেছেন নতুন জুতো। এসআই চকেই দেখা হয়ে গেল স্থানীয় বাসিন্দা মানস রায়, অনিমেষ গিরির মতো অনেকের সঙ্গে। বাল্যবন্ধু তথা বাস মালিক সংগঠনের নেতা নরেশ পাত্রের সঙ্গে এসআইচকে চা-দোকানে চায়ের গেলাস হাতে নিয়ে আড্ডাও জমল।
কিন্তু আড্ডা নিরবচ্ছিন্ন হয়নি উৎসাহ আর কৌতূহলের জেরে। ছত্রধরকে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন অনেকে। কুশল বিনিময়ের পরেই ভেসে এসেছেন রাজনীতিতে যোগ দানের প্রসঙ্গ। কুশলী ছত্রধর সে প্রশ্ন এড়িয়েছেন। খোঁজখবর নিয়েছেন বন্ধু, পরিচিতদের। লালগড়ে যখন আন্দোলন করছেন ছত্রধর, সেই সময়ে স্কুলে পড়তেন অসীম মানা। বছর পঁচিশের অসীম এখন এসআই চকে সেলুন খুলেছেন। সেই সেলুনেই এদিন চুল কাটাতে আসেন ছত্রধর। অসীম বলেন, ‘‘আগে খবরে ওঁকে দেখেছি। এই প্রথম কাছ থেকে দেখার সুযোগ হল। অমায়িক ব্যবহার।’’
ওজন বেড়ে হয়েছে ৭৬ কিলোগ্রাম। তাই হাটে বেরোনোর আগে সাত-সকালে গ্রামের ফুটবল মাঠে সাতবার দৌড়েছেন ছত্রধর। হাট থেকে আমলিয়া গ্রামে ফিরে একশো দিনের কাজে মাটিও কেটেছেন একসময়ের জনসাধারণ কমিটির এই নেতা। দশবছর জেলে কাটানোর পরে গত ২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কনভয়ে গাড়িতে করে ফিরেছেন ছত্রধর। তারপরই তিনি জানিয়েছিলেন, রাজনীতিতে যোগ দানের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তবে মানুষের সঙ্গে থেকেই তিনি সব কাজ করতে চান। সিদ্ধান্ত নেননি এখনও। তবে জনসংযোগে নেমে পড়তে সময় নষ্ট করলেন না ছত্রধর। তা হলে কি জনসমর্থন যাচাইয়ে এই জনসংযোগ? ছত্রধর মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘জনগণই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন।’’
জেলের মধ্যে কেটেছে দশ বছর। বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। স্থানীয় মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, ছা-পোষা ছত্রধর সাইকেলে ঘুরলেও ২০০৯ সালে জনসাধারণ কমিটির নেতা হওয়ার পরে তিনি কার্যত তারকা হয়ে যান। তখন কমিটির আন্দোলনে মাইলের পর মাইল হাঁটলেও অবরুদ্ধ লালগড়ে সাইকেলে চেপে ছত্রধরের বাজার করার প্রশ্নই ছিল না। ফের সাইকেলে ফিরলেন ছত্রধর। তবে সে সাইকেল তাঁর নিজের নয়। ছোট ছেলের। কারণ, অব্যবহারে অকেজো হয়েছে ছত্রধরের দু’চাকা। ছত্রধরের দাবি, ‘‘আমি আগেও সাইকেলে বাজারে যেতাম। এদিনও বাজার করেছি। বাল্যবন্ধু ও পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা হয়ে খুবই ভাল লেগেছে।’’
বাজারে বাল্যবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ায় আপ্লুত নরেশও। তিনি বললেন, ‘‘বহুদিন পরে দেখা হল। দু’জনে একসঙ্গে চা খেয়েছি। ছত্রধরের কোনও পরিবর্তন হয়নি। ওর পা দু’টো মাটিতেই রয়েছে।’’ দুই বন্ধুর দেখা হল বাজারে। একে অপরকে দেখে হয়তো অস্ফূটে বলেও উঠলেন, ‘‘বন্ধু কী খবর বল। কতদিন দেখা হয়নি।’’
দশ বছরে অকেজো হয়েছে ছত্রধরের সাইকেল। কিন্তু তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা! তবে কি ঝলক দেখল লালগড় বাজার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy