আশিস চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র
তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির বৈঠক। পুরভোটের ফলাফলের পর্যালোচনাও হল সেখানে। বৈঠকে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হলেন দলের রাজ্য সম্পাদক আশিস চক্রবর্তী ওরফে নান্টি। তাঁর নিশানায় মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার এক অফিসারই।
শনিবার মেদিনীপুরে দলের জেলা কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, বিধায়ক তথা জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ প্রমুখ। ছিলেন দলের বিধায়ক, ব্লক সভাপতি, শহর সভাপতি প্রমুখ। দলের এক সূত্রে খবর, বৈঠকে আশিস প্রশ্ন তুলেছেন, ওই অফিসার কেন দলের সাংগঠনিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে? পুলিশ কি আমাদের সংগঠন চালাবে? বৈঠকে একাধিক অভিযোগ করেছেন আশিস। সহমত হন অন্যরাও। প্রকাশ্যে অবশ্য কিছু বলতে চাইছেন না তিনি। কোতোয়ালি থানার ওই অফিসারের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? আশিসের জবাব, ‘‘যা বলার দলের বৈঠকেই বলেছি। আশা করি, দল ব্যবস্থা নেবে।’’ দলের বৈঠকে পুলিশের বিরুদ্ধেই তো সরব হলেন দলের রাজ্য সম্পাদক? তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘নান্টিদা পুলিশের বিরুদ্ধে তেমন কিছু তো বলেননি! ওঁর মনে হয়েছে, কেউ কেউ ওঁকে মিসগাইড করেছেন। সে কথাই বলেছেন।’’
পুরভোটে শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হন আশিস। পরাজিত হয়েছেন। আশিস গড়বেতার প্রাক্তন বিধায়ক, মেদিনীপুরের প্রাক্তন উপপুরপ্রধানও। শহরে ২৫টি ওয়ার্ড। তৃণমূলের অনুকূলে ফল হয়েছে ২০- ৫। তৃণমূলের জয়জয়কারের মধ্যেও আশিসের হেরে যাওয়া নিয়ে দলের অন্দরে এখনও কাটাছেঁড়া চলছে। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁর পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে ইতিমধ্যে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন আশিস। সেখানে না কি ওই পুলিশ অফিসারের নামোল্লেখও রয়েছে। বৈঠকের পরে জেলার একাংশ নেতৃত্বের পরামর্শে ওই একই রিপোর্ট তিনি পাঠাচ্ছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছে।
মেদিনীপুরে ১৮২টি বুথ। পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, এর মধ্যে ৪২টি বুথে হেরেছে শাসক দল। বিরোধীদের দখলে যাওয়া ৫টি ওয়ার্ডে ৩৯টি বুথ রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি বুথেই হেরেছে তৃণমূল। দলের একাংশ নেতাকর্মীর অনুযোগ, পুরভোটে কিছু ওয়ার্ডের বেশ কিছু বুথে অন্তর্ঘাত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের একটি অংশেরও মদত ছিল। দলীয় সূত্রে খবর, শনিবার কোর কমিটির বৈঠকে বক্তৃতা করতে গিয়ে আগাগোড়া পুলিশকে নিশানা করেছেন আশিস। কোতোয়ালি থানার ওই অফিসারের ঔদ্ধত্য, আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বৈঠকে আশিস জানিয়েছেন, ওই আমাকে নান্টি বলে ডাকে। এ ভাবে নাম ধরে ডাকার প্রশ্রয় ওকে দলের কে দিল? বৈঠকে আশিস জানান, পুরভোটের আগে এক উদ্যোগপতির মারফত তাঁকে রাতে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন, একদিন রাত ১২টা নাগাদ অফিসে গিয়েছিলেন। তখন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ইলেকশন এজেন্ট করার কথা বলছিলেন ওই অফিসার।
বৈঠকে আশিসের আরও দাবি, ওই অফিসার তাঁর মতো সিনিয়র নেতাদের নাম ধরে ডাকেন। অন্যদিকে জেলা পরিষদের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মীকে দেখলে নমস্কার করেন। কারণ, তৃতীয় শ্রেণির ওই কর্মী চারদিকে বলে বেড়ান, তিনি মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠক শেষে আশিসকে ‘শান্ত’ করেন দলেরই এক প্রবীণ নেতা। ওই নেতা তাঁকে বোঝান, উনি (ওই অফিসার) যখন যাঁকে প্রয়োজন, তাঁকেই নমস্কার করেন। এর আগে এক কাউন্সিলরকে ঘনঘন নমস্কার করতেন। এখন তাঁকে চিনতেও পারেন না! কারণ, তিনি বিধায়কের অনুগামীদের বৃত্তে নেই।
বৈঠকে আশিসের আরও দাবি, পুরভোটের দু’দিন আগে তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন দলেরই এক বিধায়ক। ওই বিধায়ক তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ভোটের প্রচারে আরও খরচ করতে। বৈঠকে আশিস জানিয়েছেন, বিধায়ক জানিয়েছিলেন, আরও খরচ করতে। তা না হলে হেরে যাব। বৈঠকে আশিসের প্রশ্ন, এই পূর্বাভাস কে দিয়েছিল?
ভারতী ঘোষ যখন জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন, তখন তৃণমূলের বৈঠকে পুলিশ প্রসঙ্গও আসত। অনেক দিন পরে ফের শাসক দলের বৈঠকে ফিরে এল পুলিশ প্রসঙ্গ। সুর চড়ালেন দলের নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy