জঠিয়ায় শাবককে টেনে জঙ্গলে নিয়ে যাচ্ছে দুই হাতি। নিজস্ব চিত্র
দিন দু’য়েক আগেই উল্টো পথে ফিরে এসেছে হাতির দল। তাদের হানায় ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। রাত হলেই গ্রামে ঢুকছে তারা। আতঙ্কে ঘুম উড়েছে খড়্গপুর বন বিভাগের কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের জঠিয়া জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের। এ বার সেই দলে থাকা এক হস্তিনী শাবক প্রসব করতে পরিস্থিতি আরও জটিল হল। হাতির দলটি এখন ওই এলাকাতেই থাকবে বলে আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে সোমবার বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে জঠিয়া-খেমাশুলি রাস্তা অবরোধ করলেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
দিন কয়েক আগে জঠিয়ার জঙ্গল থেকে মানিকপাড়া হয়ে মেদিনীপুরের দিকে স্বাভাবিক গতিপথে এগোচ্ছিল প্রায় একশোটি হাতি। মানিকপাড়ার গ্রামবাসীরা বাধা দিতেই ফের উল্টো পথ কলাইকুণ্ডা রেঞ্জে চলে আসে দলটি। তারপর থেকেই ওই জঙ্গল ঘেঁষা ভালকিশোর, জঠিয়া, মাকরদিন্দা, কইনাডিহা, টুঙাদুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের আতঙ্কের প্রহর শুরু হয়েছে। রবিবার রাতে দুয়ারখোল মৌজা ছাড়িয়ে হাতির দলটি হানা দেয় জঠিয়া গ্রামে। চাষের জমিতে ব্যাপক ক্ষতি করার পাশাপাশি কলাগাছ, নারকেল গাছও উপড়ে দেয় তারা। তবে ঘর-বাড়ির ক্ষতি হয়নি। রাতে আগুন জ্বালিয়ে তটস্থ ছিলেন গ্রামবাসীরা। এই আবহে সোমবার সকালে জঠিয়া গ্রামের জনৈক চুনিলাল মাহাতোর ধান জমিতে একটি শাবক প্রসব করে এক হস্তিনী। তারপরে সেই হস্তিশাবককে ঘিরে জঙ্গল লাগোয়া ওই এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় প্রায় ৩০টি হাতি। আতঙ্ক বাড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
চিন্তা বাড়িয়ে সোমবার ভোরে মেদিনীপুর সদর ব্লক থেকে উল্টো পথে আরও ২৫টি হাতির একটি দল জঠিয়ায় পৌঁছয়। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে কলাইকুণ্ডা রেঞ্জে প্রায় ১৩০টির বেশি হাতি রয়েছে। খড়্গপুরের ডিএফও শিবানন্দ রাম বলেন, “মেদিনীপুর থেকে আরও হাতি চলে এসেছে। ফলে কলাইকুণ্ডা রেঞ্জে এখন হাতির সংখ্যা আরও বেড়েছে। তার উপরে হস্তিশাবকের জন্ম হওয়ায় পরিস্থিতি একটু জটিল হয়েছে। যে দলটি সদ্যোজাত হস্তিশাবকের সঙ্গে আছে তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে চলছে।”
বন আধিকারিকের আশ্বাসে অবশ্য গ্রামবাসীরা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। কারণ তাঁদের অনুমান, সদ্যোজাত হস্তিশাবক জন্মানোয় হাতির একটি দল ওই এলাকায় কমবেশি আরও সাতদিন থাকবে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। জঠিয়ার বাসিন্দা শ্যামাপদ মাহাতো বলেন, “হাতির দলটি ইতিমধ্যেই মাটি ও ধান একেবারে মিশিয়ে দিয়েছে। শতাধিক হাতি একসঙ্গে হামলা চালানোয় ধান পুরো শেষ। আগুন জ্বালিয়ে রাত জাগছি। রবিবার বন দফতরের কারও দেখা মেলেনি। এখন আরও সাতদিন এই আতঙ্কে কাটাতে হবে। তাই বিক্ষোভ দেখিয়ে পথ অবরোধ করেছিলাম।” পাশের গ্রাম মাকরদিন্দার রমেশ মাহাতোর আশঙ্কা, ‘‘যে কোনও মুহূর্তে খাবারের খোঁজে আমাদের গ্রামেও হানা দিতে পারে দলটি।” জঠিয়া জঙ্গল লাগোয়া ভালকিশোরের বাসিন্দা তথা হুলাপার্টির সদস্য বাপ্পা সিংয়ের ক্ষোভ, ‘‘সদ্যোজাত হাতি নিয়ে তো এই দলটি যাবে না। কিন্তু এখন কিছু হাতিকে তাড়ানোর জন্য বন দফতর আমাদের ডাকছে। ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে যেতে হবে!”
এ দিন জঠিয়া গ্রামে যান স্থানীয় বিধায়ক দীনেন রায়। তিনি বলেন, “বন দফতরের ধারণা শুধু ঝাড়গ্রামেই হাতি থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে জঠিয়া হাতিদের অন্যতম ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। শতাধিক হাতির হানায় ক্ষতি হচ্ছে। আমি বনমন্ত্রীকে জানিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছি।” বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, টানা অভিযানে ক্লান্ত থাকার জন্যই রবিবার বনকর্মীরা কাজে আসেনি। এখন হাতি সরানোর কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তরা নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ পাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy