Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Netai

Rampurhat clash: গণহত্যায় রাজনীতি চান না ভুক্তভোগীরা

নেতাইয়ের স্বজনহারা ও আহতরাও ফিরেছেন স্মৃতিতে। প্রথমে নেতাই-কাণ্ডের তদন্ত করে সিআইডি। পরে ভার নেয় সিবিআই।

ছোট আঙারিয়ায় বক্তার মণ্ডলের (উপরে) এই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

ছোট আঙারিয়ায় বক্তার মণ্ডলের (উপরে) এই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ০৮:০০
Share: Save:

গড়বেতা ও নেতাই: একটি ঘটনা দু’দশক আগের, অন্য়টির বয়স এক দশক পেরিয়েছে। রামপুরহাটের ঘটনায় উস্কে গিয়েছে ছোট আঙারিয়া আর নেতাই কাণ্ডের স্মৃতি। সবেরই মিলন-সূত্র গণহত্যা!

বীরভূমের রামপুরহাটে তৃণমূল উপ-প্রধান খুনের পরে একই বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন অন্তত ৮জন। সে ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। বগটুই গ্রামের এই ঘটনার সঙ্গে বড্ড মিল ছোট আঙারিয়া কাণ্ডের। ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি রাতে গড়বেতার এই গ্রামের তৃণমূল কর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে বোমাবাজি করে আগুন লাগিয়ে কয়েকজন তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ২০১১ সালে লালগড়ের নেতাই গ্রামেও উঠেছিল গণহত্যার অভিযোগ। সিপিএম কর্মী রথীন দণ্ডপাটের বাড়িতে সিপিএমের শিবির থেকে চালানো গুলিতে ৪ মহিলা-সহ ৯ জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছিলেন।

অবশ্য এই দুই ঘটনাই গোড়া থেকে ছিল আদ্যন্ত রাজনৈতিক। দু’ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল ছিল সরাসরি তৎকালীন শাসকদল সিপিএমের দিকে। বগটুই সেখানে আলাদা। রাজ্য পুলিশের ডিজি ঘটনার পরেই দাবি করেছেন, এই মৃত্যু একেবারেই রাজনৈতিক নয়। এ ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১১ জন গ্রেফতার— এমনটা ছোট আঙারিয়া বা নেতাই, কোথাওই হয়নি।

ছোট আঙারিয়া মামলার মূল সাক্ষী বক্তার মণ্ডলের মৃত্যু হয়েছে একমাস আগেই। তাঁর পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম কাল, বৃহস্পতিবার। তার আগে মঙ্গলবার একুশ বছর আগের স্মৃতিতে ফিরেছে গড়বেতার এই গ্রাম। গ্রামের শহিদ বেদিতে নিহত ৫ তৃণমূীল কর্মীর নামের উল্লেখ রয়েছে। সেই বেদির সামনে থেকে ফোনে আখতার আলি খান বললেন, ‘‘রামপুরহাটে তবুও মৃতদেহগুলো পাওয়া গিয়েছে। আমাদের গ্রামে তো দেহগুলো এখনও মেলেনি। একুশ বছর হয়ে গেল, এখনও দোষিরা শাস্তি পেল না।’’ আখতারের ভাই হায়দারকে সেই রাতে বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই রাতে 'খুন' হন পাশের হেতোশোল গ্রামের তৃণমূল কর্মী জয়ন্ত পাত্র। তাঁর কাকিমা কৃষ্ণা পাত্র বলেন, ‘‘সিপিএম সে বার গণহত্যা চালিয়েছিল। এতবছর হয়ে গেল, প্রধান অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছে। বিচার না পেয়ে আমরা হতাশ।’’

এলাকার তৃণমূল নেতা হাবিবুল শেখ অবশ্য রামপুরহাটের সঙ্গে ছোট আঙারিয়াকে এক সারিতে রাখতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘ছোট আঙারিয়ায় গণহত্যার পর পুলিশও এতটা তৎপরতা দেখায়নি। সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করেনি। রামপুরহাটের ঘটনায় রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ করছে। এখানেই তফাত।’’ যদিও সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ছোট আঙারিয়ার ঘটনাও ছিল তৃণমূলের ষড়যন্ত্র। যা আদালতে প্রমাণ হওয়ায় বেকসুর ছাড়া পেয়েছেন অনেকেই। মানুষকে বেশিদিন ভুল বোঝানো যায় না।’’

নেতাইয়ের স্বজনহারা ও আহতরাও ফিরেছেন স্মৃতিতে। প্রথমে নেতাই-কাণ্ডের তদন্ত করে সিআইডি। পরে ভার নেয় সিবিআই। তৎকালীন জোনাল সম্পাদক অনুজ পাণ্ডে-সহ সিপিএমের ২০ জন নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। এখন ১৮ জন জেলবন্দি। তবে অনুজ ও তাঁর সম্পর্কিত ভাই ডালিম পাণ্ডে, রথীন দণ্ডপাট, জয়দেব গিরি, লব দুলে, চণ্ডী করণের মতো কয়েকজন অভিযুক্ত স্বল্পদিনের জন্য অন্তবর্তী জামিনে বাড়ি ফিরেছিলেন। সম্প্রতি আর এক অভিযুক্ত ফুল্লরা মণ্ডলের জামিনের আর্জি খারিজ করেছে হাই কোর্ট। তবে সিপিএমের নতুন জেলা কমিটিতে আছেন জেলবন্দি অনুজ ও ফুল্লরা।

নেতাই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে মেদিনীপুরের বিশেষ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে। ১১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে জনা তিরিশের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। নিহত গীতালি আদকের মেয়ে জনতা আদক বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার পাশে দাঁড়ানোয় আমরা সামলে উঠেছি। কিন্তু এখনও বিচার শেষ হল না।’’ আহত গণেশ আদক বলছেন, ‘‘গণহত্যার বীভৎস রূপ আমরা দেখেছি। এ নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়।’’

রামপুরহাটের ঘটনায় ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ দিন ধিক্কার মিছিল করেছে বামেরা। জেলবন্দি অনুজের ছোট ভাই উজ্জ্বল পাণ্ডে বলছেন, ‘‘গণহত্যার সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। নাহলে প্রকৃত সত্য আড়ালে থেকে যায়। বীরভূমের ক্ষেত্রেও সঠিক তদন্ত হোক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Netai Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE