Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Sand Mining

রূপনারায়ণে বালি চুরি, ফাটল রেল সেতুতে

কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদের উপর রেলের দু'টি সেতু রয়েছে। একটির উপর রয়েছে ডাউন এবং মেন লাইন। অন্যটি দিয়ে গিয়েছে আপ লাইন।

নদের বালি তুলে এভাবে জমা করা হচ্ছ বলে অভিযোগ।

নদের বালি তুলে এভাবে জমা করা হচ্ছ বলে অভিযোগ। — নিজস্ব চিত্র।

দিগন্ত মান্না
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫৪
Share: Save:

বেলাগাম বালি তোলায় আলগা হচ্ছে রেল সেতুর ভিত! তেমনই আশঙ্কার রেলের আধিকারিকদের। প্রশ্ন উঠছে, কোলাঘাটে রূপনায়ারণের রেল সেতুর কি বিপদ বাড়ছে?

কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদের উপর রেলের দু'টি সেতু রয়েছে। একটির উপর রয়েছে ডাউন এবং মেন লাইন। অন্যটি দিয়ে গিয়েছে আপ লাইন। দু'টি লাইনযুক্ত রেলের ৫৭ নম্বর ওই সেতুর লোহার বিমে গত মে মাসে বড়সড় ফাটল দেখা দেয়। সে সময় তা মেরামত করা হলেও ওই সেতুর বিমে নতুন করে ফাটল ধরা পড়েছে বলে খবর। আর এই ফাটলের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রেল সেতুর অদূরে দেনানে দেদার বালি চুরি হচ্ছে বলে দাবি। এতে সেতুর পিলারের গোড়া থেকে বালি সরে গিয়ে ১৭ মিটার পর্যন্ত গর্ত হয়ে গিয়েছে। সেতু বাঁচাতে রেল মাঝেমধ্যে পিলারগুলির গোড়ায় বোল্ডার ফেলায়। কিন্তু তাতেও তেমন লাভ হচ্ছে না। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোলাঘাটে ৫৭ নম্বর রেল সেতুর পাইলের গোড়া আলগা হয়ে যাচ্ছে। পিলারের ক্ষমতা কমছে। এর ফরে সেতুতে বারবার ফাটল দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত ওই এলাকায় বেআইনিভাবে বালি তোলা বন্ধ করা।’’

বালি চুরি সম্পর্কে সামনে আসছে নানা তথ্য। স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৮৭৩ সালে হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে কোলাঘাটের দেনান হয়ে মেদিনীপুর পর্যন্ত জলপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ হত। ১৯০০ সালে বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে চালু হওয়ার পর জলপথ গুরুত্ব হারাতে থাকে। ১৯০৩ সালের পর রূপনারায়ণ নদ দিয়ে পণ্য পরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। ১২০ বছর পর ফের রূপনারায়ণে পণ্য পরিবহণের উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় জলপথ মন্ত্রক। বঙ্গোপসাগর থেকে হলদি নদী হয়ে পণ্যবাহী ছোট ছোট জাহাজগুলিকে কোলাঘাটে নিয়ে আসার লক্ষ্যে দেনানে একটি জেটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে গত বছর। দেনান থেকে হলদি নদী পর্যন্ত রূপনারায়ণের ৩৩.৫০ কিলোমিটার অংশ ড্রেজিং করার সিদ্ধান্ত হয়। একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে গত ২৩ মে ড্রেজিংয়ের সময়সীমা শেষ হয়েছে। অভিযোগ, মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও কোলাঘাট রেল সেতু থেকে ২০০ মিটার দূরে তিনটি মেশিন বসিয়ে রূপনারায়ণ থেকে দিনরাত বালি তোলা চলছে। আর ভাঙনপ্রবণ দেনানে নদের বাঁধের গায়ে ভেড়ির মতো ছ’টি বড় বড় গর্ত করে সেখানে বালি মজুত করা হচ্ছে। পরে রাতে ডাম্পারে ওই বালি বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এতেই ক্ষতির মুখে পড়েছে রেল সেতু।

সেচ দফতরের অনুমতি ছাড়াই দেনানে বাঁধের গায়ে গর্ত করে বালি মজুত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দফতরের। এ নিয়ে সেচ দফতর কোলাঘাট থানাকে একটি চিঠি পাঠায়। তবে এর পরেও বন্ধ হয়নি বালি চুরি। এ ব্যাপারে সেচ দফতরের পাঁশকুড়া-১ ডিভিশনের এসডিও নাজেস আফরোজ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ বিভাগের নির্দেশে প্রথমে বালি তোলা হচ্ছিল। বালি তোলার মেয়াদ শেষ যাওয়ার পরও কী ভাবে বালি তোলা হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ বিভাগে চিঠি পাঠাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sand Mining Rupnarayan River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE