রানি শিরোমণির গড়ের বর্তমান অবস্থা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
সংস্কার এবং সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে বসেছে রানি শিরোমণির গড়। দুর্গ নেই। তবে দুর্গের অংশ বিশেষ রয়েছে। তাও আগাছায় ঢাকা। রানি শিরোমণির নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহের ইতিহাস বহন করে চলেছে এই এলাকা। এমন এলাকাকে কেন সংস্কার এবং সংরক্ষণ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এক সময় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগ অবশ্য পরিকল্পনা, প্রস্তাবেই আটকে থেকেছে।
এলাকাটি সাজাতে ফের উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার শালবনির কর্ণগড়ের ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিল জেলা প্রশাসনের একটি দল। নেতৃত্বে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল। প্রশাসন সূত্রে খবর, এলাকাটি সাজাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হবে। শীঘ্রই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘ইতিহাসের টানেই অনেকে কর্ণগড়ে আসেন। এলাকার উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা হচ্ছে।’’ জেলার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক অয়ন নাথ বলেন, ‘‘পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা হবে।’’
কর্ণগড়ে রয়েছে মহামায়ার মন্দির। শিরোমণি এখানে পুজো দিতে আসতেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ইন্দ্রকেতু নামে এক রাজা এখানে তাঁর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে ইন্দ্রকেতুর ছেলে নরেন্দ্রকেতু মনোহরগড় স্থাপন করে সেখানে বসবাস শুরু করেছিলেন। রণবীর সিংহ নামে এক লোধা সর্দারকে সাম্রাজ্য শাসনের ভার দিয়েছিলেন তিনি। অপুত্রক রণবীর সিংহ অভয়া নামে এক মাঝির ছেলেকে পোষ্যপুত্র করে তাঁর হাতে সাম্রাজ্য শাসনের ভার অর্পণ করেছিলেন। বংশপরম্পরায় ওই শাসন চলতে থাকে।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয় শেষ অপুত্রক রাজা অজিত সিংহের। তাঁর দুই রানি ছিলেন ভবানী ও শিরোমণি। রানি শিরোমণি ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনদের এককাট্টা করে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই জন্য ইংরেজদের কোপে পড়েছিলেন রানি। তাঁকে বন্দিও করা হয়েছিল। নাড়াজোলের রাজা আনন্দলাল খানের মধ্যস্থতায় চরম সাজা না হলেও তাঁকে আবাসগড়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
মহামায়া মন্দির থেকে এলাকাটির দূরত্ব কিলোমিটার দু’য়েক। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে শীর্ণকায় পারাং নদী। মাটিতে মিশে গিয়েছে প্রাসাদ। পরিখাটুকু খানিকটা বোঝা যায়। ঝোপজঙ্গলের মাঝে ইট, পাথর পড়ে রয়েছে। কর্ণগড়কে পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনার দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয়দের অভিযোগ, নেতা-মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় এসে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান।
মেদিনীপুর শহরে রানি শিরোমণির নামে গেস্ট হাউস রয়েছে। রানি শিরোমণির নামে ট্রেনও রয়েছে। কিন্তু কর্ণগড়ের এই এলাকা অন্ধকারেই থেকে গিয়েছে। গাছ, নদী দিয়ে ঘেরা এলাকাটি ফের আলোয় আনতে এতদিনে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। নদীর আগে ছিল নজরমিনার। প্রামাণ্য নথি না থাকলেও এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে যে, মহাভারতের কর্ণ এই গড় তৈরি করেছিলেন। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘কর্ণগড়ের ওই এলাকার সার্বিক উন্নতি ঘটানোরই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy