ফাইল চিত্র।
দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ বাতিল হয়েছে। দিন পাঁচেক আগের ওই নির্দেশের পরে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষকদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। চাকরি বাতিলের তালিকায় বিভিন্ন জেলার রাজনৈতিক নেতাদের একাধিক পরিজনের নাম থাকা নিয়ে জোর চর্চাও শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষায় আগুয়ান জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে ওই তালিকায় কাদের নাম রয়েছে, তা-ই এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। জেলায় বরখাস্ত বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট, সে ব্যাপারেও তাঁদের কোনও লিখিত নোটিস পাঠানো হয়নি। এ নিয়ে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের অবশ্য দাবি, বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ হাই কোর্ট দেয়নি। যদিও সরকারি ভাবে ওই সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাম জানা না গেলেও সামজ মাধ্যমে নামের একটি তালিকা ঘুরছে। আর ওই তালিকার সঙ্গে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে পাঠানো তালিকার মিল রয়েছে বলে জানাচ্ছেন খোজ জেলা সংসদ চেয়ারম্যান। ওই তালিকায় জেলার একটি পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের নাম রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
গত সোমবার হাই কোর্ট ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট-এর দ্বিতীয় নিয়োগ তালিকায় থাকা ২৬৯ জনকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ মতো বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের ১৫ জুন থেকে স্কুলে যাওয়া চলবে না। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে নামের ওই তালিকা জেলায় এসে পৌঁছেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ খারিজ করা হয়েছে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর। তবে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষকদের বাড়িতে এখনও এ সংক্রান্ত নোটিসই পাঠানো হয়নি।
বিরোধীদের অভিযোগ, বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিদের নাম এবং পরিচয় যাতে প্রকাশ্যে না আসে, সে জন্য আগাগোড়া গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসে। অফিসেরও একটি সূত্রের খবর, ওই কাজে চক্র অফিসগুলিতে কম্পিউটার ঘরে বিশেষ নজরদারিও চলছে। এতেই রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে বিরোধীরা। বিজেপি’র কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যুক্ত হওয়ার পর পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের সংগঠনের কী হাল, তা ওরা বুঝে গিয়েছে হাড়েহাড়ে। শাসকদলের নেতা, মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠদের চাকরি দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে এলে পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল বলে কোনও দলই আর থাকবে না। তাই এত গোপনীয়তা।’’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের একটি সূত্রের খবর, হাই কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর ৩০ জন বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক এবং শিক্ষিকার অ্যাডমিট কার্ডের রোল নম্বর, শিক্ষা দফতর এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসের যে সব নথি জমা রয়েছে, সেগুলি সংগ্রহ করার কাজ চলেছে গত কয়েকদিন ধরে। ওইসব নথিপত্রের ভিত্তিতে হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করার জন্য বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের বাড়িতে লিখিত নোটিস পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আনার কোনও নির্দেশ হাই কোর্ট দেয়নি। আমরা আদালতের নির্দেশ মেনে সমস্ত নথি বিভিন্ন দফতর থেকে সংগ্রহ করে, তাঁদের বাড়িতে যাতে দ্রুত লিখিত নোটিস পৌঁছে যায়, সে ব্যাপারে আমরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।’’
এদিকে, বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের একটি তালিকা সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল (যার সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি) হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, তালিকায় এক তৃতীয়াংশ কাঁথি মহকুমার, তমলুক এবং হলদিয়া মহকুমার বাসিন্দাদের নাম রয়েছে। এগরা মহকুমারও তিন জনের নাম রয়েছে। জানা গিয়েছে, তালিকায় এক পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষও রয়েছেন। তাঁর পরিবার অবশ্য শুক্রবার দাবি করেছেন, তাঁরা বরাখাস্ত সংক্রান্ত কোনও নোটিস এখনও পাননি। সামজ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তালিকার সত্যতা প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর বলছেন, ‘‘সমাজ মাধ্যমে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের নামের যে তালিকা ঘুরছে, সেটি দেখেছি। সরকারিভাবে যে নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে, তার সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অনেকটাই মিল রয়েছে ওই তালিকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy