Advertisement
E-Paper

মিড ডে মিলে বরাদ্দ সাড়ে ৬, ডিমই ৭ টাকা

প্রতি মাসে ২২ দিন রান্না হলে ডাল, তেল, মশলা, ডিম, আনাজ, সোয়াবিন, বাসন মাজার সাবান, সিলিন্ডার মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়।

চলছে মিড ডে মিল। মেদিনীপুরের একটি স্কুলে।

চলছে মিড ডে মিল। মেদিনীপুরের একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৭
Share
Save

আনাজ ও মুদিখানা সামগ্রীর আগুন দর দেখে পদক্ষেপের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর বিভিন্ন বাজারে নিত্য অভিযান চালাচ্ছে বিশেষ টাস্ক ফোর্স। কিন্তু দাম কমছে কই! ফলে, সংসারের পাশাপাশি উদ্বেগ স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ির হেঁশেলেও।

একটা ডিম সাত টাকা। আলু কেজি প্রতি ৩০-৩৫ টাকা। এ দিকে, পড়ুয়াদের মিড ডে মিলে ডিমের জন্য বরাদ্দ সাড়ে ছ’টাকা! মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এই বরাদ্দে হিমশিম খাচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক স্কুল, হাই স্কুলগুলি।

মেদিনীপুর সদর ব্লকের পলাশি প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌম্যসুন্দর মহাপাত্র মানছেন, ‘‘মিড ডে মিল চালাতে সমস্যা হচ্ছে।’’ ঝাড়গ্রাম শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরূপকুমার মহাপাত্রেরও মত, ‘‘যে হারে ডিম ও আনাজের দাম বেড়েছে, তাতে মিড ডে মিল চালানোটা দুষ্কর।’’ সঙ্গে অভিযোগের সুরে জুড়লেন, ‘‘আমাদের স্কুলে গ্যাসে মিড ডে মিল রান্না হয়। মাসে দু’টি সিলিন্ডার খরচ হয়। প্রতি মাসে ২২ দিন রান্না হলে ডাল, তেল, মশলা, ডিম, আনাজ, সোয়াবিন, বাসন মাজার সাবান, সিলিন্ডার মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ৫০০-৬০০ টাকা। যা আমাদের পকেট থেকে যায়।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের দক্ষিণ ময়না-২ নম্বর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপ ভৌমিক জানালেন, ‘‘স্কুলে ৫১ জন ছাত্রছাত্রী। কম পড়ুয়া হওয়ায় মিড ডে মিলের খরচ তুলনায় বেশি লাগছে। তা-ও সপ্তাহে একদিন ডিম ও মাঝে মধ্যে মাংস খাওয়ানো হচ্ছে।’’ কেলোমাল সন্তোষিনী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় মাজিও মানছেন, ‘‘নির্ধারিত বরাদ্দে পুষ্টিকর খাবার দিতে সমস্যা হচ্ছে।’’ একই সুর পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ব্যানার্জিডাঙ্গা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদ্যোত চক্রবর্তীর কথায়। তিনি বলছেন, ‘‘জিনিসপত্রের দর বাড়লেও, বরাদ্দ বাড়েনি।’’ একই মত গোয়ালতোড়ের কিয়ামাচা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপকুমার পড়িয়ারও।

বরাদ্দ সঙ্কটে জেরবার তিন জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিও। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের মান্দারগেছিয়া তরুণ সঙ্ঘ অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী বনশ্রী খান বললেন, ‘‘সরকারি ভাবে ডিমের জন্য বরাদ্দ সাড়ে ছ’টাকা। কিন্তু এখন ডিমের দাম সাত টাকা। শিশু ও প্রসূতি মায়েদের রান্না করা খাবার দিতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’ বরাদ্দের টাকাও সময়ে মিলছে না। বনশ্রীর দাবি, ‘‘মে মাস থেকে টাকা পাওয়া যায়নি। দোকানেও টাকা বকেয়া রয়েছে।’’ মিড ডে মিলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ পড়ুয়া পিছু পাঁচ টাকা ৪৫ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ আট টাকা ১৭ পয়সা। মিড ডে মিলের বরাদ্দে সর্বশেষ বৃদ্ধি হয়েছিল ২০২২ সালে।

অঙ্গনওয়াড়িতে সোম, বুধ ও শুক্র— সপ্তাহে তিনদিন ভাত, সেদ্ধ ডিম, আলুর ঝোল দেওয়া নিয়ম। মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনিবার আনাজ ও সোয়াবিন দিয়ে খিচুড়ি দেওয়া হয়। পূর্ব মেদিনীপুরে ২৫টি ব্লক, পাঁচটি শহরে অঙ্গনওয়াড়ি রয়েছে প্রায় ছ’হাজার। পশ্চিম মেদিনীপুরে সংখ্যাটা প্রায় ৬,৩০০টি। উপভোক্তা শিশু তিন লক্ষাধিক। শিশুবিকাশ প্রকল্পে অঙ্গনওয়াড়ি চালানো হয়। এই কেন্দ্রে এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের খিচুড়ি খাওয়ানো হয়, আর সপ্তাহে তিনদিন ডিম। আর অপুষ্ট শিশুদের রোজ ডিম দেওয়ার কথা। কিন্তু সীমিত বরাদ্দে নিয়ম মানতে নাজেহাল দশা, জানালেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর অঞ্চলের আদিবাসী অধ্যুষিত জমিদারডাঙ্গা অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী কৃষ্ণা চক্রবর্তীও।

অঙ্গনওয়াড়ির খাবারের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিও উঠেছে। সম্প্রতি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অঙ্গনওয়াড়ি ওয়াকার্স অ্যান্ড হেল্পার্স ইউনিয়নে’র তরফে পূর্ব মেদিনীপুরের অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্প আধিকারিককে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির ঝাড়গ্রাম জেলা সভানেত্রী হেনা শতপথী বলেন, ‘‘বরাদ্দ বাড়াতে প্রতি ব্লকের সিডিপিও’র কাছে ডেপুটেশন
দেওয়া হচ্ছে।’’ (চলবে)

প্রতিবেদক: কিংশুক গুপ্ত, আনন্দ মণ্ডল, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, বরুণ দে

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vegetable Price midnapore

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}