হুবহু পুরীর ধাঁচে জগন্নাথ মন্দির। পুজোর রীতিনীতি, বিগ্রহ, রথ— সবেতেই পুরীর আদল। যজ্ঞেও হাজির পুরীর দয়িতাপতি। তবে অক্ষয় তৃতীয়ায় জগন্নাথদেবের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পরে, দিঘার মন্দিরে নিত্যপুজোর দায়িত্বে আর পুরীর কোনও ছোঁয়া থাকছে না। সব ভার ইসকনের হাতে।
দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের সময় থেকেই সেখানেস্থানীয় ভাবে পুরোহিত নিয়োগের দাবি তুলেছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট’। তাদের হাতে পুজোর দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন পুরীর প্রধান রাজেশ দয়িতাপতিও। সেই মতো সনাতন ব্রাহ্মণদের প্রতিনিধিরা পুরীর জগন্নাথ মন্দির গিয়ে দয়িতাপতির তত্ত্বাবধানে নিম কাঠের জগন্নাথ মূর্তির পুজোর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছিলেন। তবে তাঁরা কেউই নিত্যপুজোর দায়িত্ব পাননি।
নবান্নে ট্রাস্ট কমিটির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, উদ্বোধনের পরে, দিঘার জগন্নাথ মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবেইসকনকে। তবে উদ্বোধনের আগেই মাঙ্গলিক হোম-যজ্ঞ ঘিরে ইসকন এবং পুরীর দয়িতাপতির পৃথক আয়োজন সামনে এসেছে। এই আবহে সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির উপস্থিতিতে নিত্যপুজোর দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে দিঘায় জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে প্রধান দয়িতাপতি, সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা ছিলেন। বৈঠকে স্থির হয়েছে, জগন্নাথের নিত্যপুজো করবেন ইসকনের পুরোহিতরা। আর কমলা, বিমলা এবং নৃসিংহের পুজোর দায়িত্বে থাকবেন সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের পাঁচ জন পুরোহিত।
তবে নিম কাঠের জগন্নাথ মূর্তির পুজোর দায়িত্ব ইসকনকে দেওয়ায় অস্বস্তি রয়েছে পুরীর প্রধান রাজেশ দয়িতাপতি এবং তাঁর সঙ্গীদের। তাঁদের বক্তব্য, ইসকন গৌড়ীয় রীতিতে পুজো করে। আর জগন্নাথের আরাধনা পুরীর নিয়ম মেনে করতে হয়। সে জন্য আলাদা হোম-যজ্ঞের আয়োজন হয়েছিল। রাজেশ দয়িতাপতি বলেন, ‘‘উদ্বোধনের পরে আমরা থাকতে পারব না।
পুরীর কোনও পুরোহিতের পক্ষে সম্ভবও নয় দিঘার মন্দিরে পুজো করা। তবে চেয়েছিলাম, এখানকার ব্রাহ্মণদের নিয়ম শিখিয়ে পুজোর দায়িত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উদ্বোধনের পরে ইসকনের হাতে দায়িত্ব তুলে দেবেন।’’
চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসের সঙ্গে। জেলাশাসকও কিছু বলতে চাননি। তবে পশ্চিমবঙ্গ সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের রাজ্য সম্পাদক তপনকুমার মিশ্র মানছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন মন্দিরের পুরোহিত কারা হবেন, তা চূড়ান্ত করতে। ঠিক হয়েছে, জগন্নাথদেবের নিত্যপুজো ইসকন করবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)